বিজ্ঞান তথা সমগ্র সমাজের অগ্রগতি সত্ত্বেও স্বাধীনতার পরবর্তী এতটা সময় পরেও সমাজে শিক্ষা ব্যবস্থা ও মানুষের চিন্তাধারা অনেকটা পিছিয়ে। সকল বিষয়গুলির মধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষার সমস্যা অন্যতম। এর সমাধানকল্পে যে-সমস্ত কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে, সেগুলি হল—
(১) বাস্তব জীবনের উপযোগী শিক্ষা: শিক্ষার্থীর বাস্তব জীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষা দেওয়া গেলে মাধ্যমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য নির্ধারিত হতে পারে।
(২) উপযুক্ত সংখ্যক বিদ্যালয় ভবন তৈরি : প্রতি বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়াতে পারলে, মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের অনেক সমস্যার সমাধান হয়।
(৩) আর্থিক সংকট দূর করতে হবে : আর্থিক সংকট দূর করার জন্য প্রয়োজনানুসারে সরকারকে মাধ্যমিক শিক্ষা খাতে অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। তবে পুরো প্রক্রিয়া ঠিকমতো চলবে।
(৪) ছাত্রবৃত্তি প্রদান : মাধ্যমিক স্তরে দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে দরিদ্র মেধাবী ছাত্রদের শিক্ষা গ্রহণে বিশেষ অসুবিধা না হয়।
(৫) অপচয় ও অনুন্নয়ন রােধ : এই স্তরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অপচয় ও অনুন্নয়নের পরিমাণ কমানোর জন্য সরকারের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(৬) আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতি : বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে, শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিজ্ঞানভিত্তিক করা উচিত। এমনকি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকও যদি শিক্ষণের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তাহলে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠগ্রহণ অনেক আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
(৭) বৃত্তিমুখী পাঠক্রম : মাধ্যমিক শিক্ষা পাঠক্রমের বৃত্তিমুখী করে, শিক্ষার্থীদের প্রধান প্রধান মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা সম্ভব হবে এবং এই চাহিদাগুলি পূরণ হলে শিক্ষার্থীদের মানসিক ও সামাজিক চাহিদা পূরণ হবে।
(৮) পাঠ্যপুস্তকের সরবরাহ : দরিদ্র ছাত্রদের জন্য বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করতে পারলে এই সমস্যা দূর হয়।
(৯) মূল্যায়ন পদ্ধতির আধুনিকীকরণ : আধুনিক CCE (Continuous and Comprehensive Evaluation) পদ্ধতির করার কথা বলা হয়েছে। এই পদ্ধতির সাহায্যে সারাবছর ধরে শিক্ষার্থীর বিভিন্ন দিকের বিকাশের মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে এবং শুধুমাত্র পরীক্ষার উপর অহেতুক গুরুত্ব আরোপ করবে।
(১০) প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ : মাধ্যমিক শিক্ষাকে আরও বেশি কার্যকরী করার জন্য এই স্তরে উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। এই সকল শিক্ষকদের শিক্ষাদান পদ্ধতি হবে মনোবিজ্ঞান সম্মত এবং যুক্তিনির্ভর।
(১১) বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার ও পরীক্ষাগার স্থাপন : দেশের প্রতিটি মাধ্যমিক স্কুলে গ্রন্থাগার ও পরীক্ষাগার স্থাপনে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
(১২) সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির উপর গুরুত্ব : পাঠক্রমের সঙ্গে সঙ্গে হাতের কাজ, খেলাধুলা, ব্যায়াম, নাচ, গান ইত্যাদি অন্যান্য দিকের বিকাশের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। তবেই শিক্ষার লক্ষ্য, শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সাধন করা সম্ভব হবে।
(১৩) উপযুক্ত শিক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ : শিক্ষা পরিকল্পনার মানােন্নয়ন করতে হবে। পুথিগত শিক্ষার পরিবর্তন ঘটিয়ে, শিক্ষার্থীরা যাতে সাধারণ শিক্ষায় আগ্রহী হয়, সেদিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে।
(১৪) অভিভাবকদের উদাসীনতা দূর করা : শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে বিশেষ সচেতনতা প্রদান করতে হবে। তারা যাতে তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে আগ্রহী হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
(১৫) নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শন : মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে পঠনপাঠন ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শন করতে হবে।
উপরিক্ত ব্যবস্থা বা বিষয়গুলি ছাড়াও বর্তমানে মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বহু ব্যবস্থা গৃহীত হচ্ছে এবং হয়েছে। এসকল কর্মগুলির সঠিক সম্পাদন এই শিক্ষার সমস্যাবলি অনেকাংশে সমাধান করতে পারবে বলে আশা করা যায়।
Leave a comment