পশ্চিমবঙ্গে বর্তমান মাধ্যমিক স্তরের পাঠক্রমটি প্রণয়ন করা হয়েছে কোঠারি কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে। এই শিক্ষাপদ্ধতিটি দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে অনুসৃত হলেও এতে বহু ত্রূটি দেখা যায়। ত্রূটিগুলি হল一
(১) পাঠক্রমের ত্রূটি: মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রমের ক্ষেত্রে বেশ কিছু দুটি লক্ষ করা যায়, সেগুলি দূর করতে না পারলে এই শিক্ষার অগ্রগতি ব্যাহত হবে। এগুলি হল一
-
কর্মভিত্তিক অভিজ্ঞতার অভাব: কোঠারি কমিশনে যে কর্মভিত্তিক অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমিক শিক্ষায় সেই ব্যবস্থা আজও চালু করা সম্ভব হয়নি।
-
নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষার প্রতি অবহেলা: বর্তমান পাঠক্রমে নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষা অনেকখানি অবহেলিত। ফলে শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠনের কাজটি ব্যাহত হচ্ছে।
-
ব্যাবহারিক শিক্ষার অভাব: বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ব্যাবহারিক দিকটি পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে বিজ্ঞানশিক্ষার ক্ষেত্রে ফাঁক থেকে যাচ্ছে।
-
শিক্ষার্থীর চাহিদা ও সামর্থ্যর প্রতি অবহেলা: শিক্ষার্থীর চাহিদা ও সামর্থ্যের প্রতি নজর দিয়ে পাঠক্রম নির্ধারণের দিকটিও অবহেলিত হচ্ছে।
(২) বিদ্যালয়ের অভাব: মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে আর-একটি জুটি হল পর্যাপ্ত সংখ্যক বিদ্যালয়ের অভাব।
(৩) উপযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব: মাধ্যমিক স্তরে পাঠদানের জন্য উপযুক্ত যােগ্যতাসম্পন্ন ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাব থেকেই গিয়েছে।
(৪) আর্থিক অনটন: আর্থিক অনটনের কারণে বহু বিদ্যালয়েই মাধ্যমিক পাঠক্রমের বিভিন্ন বিষয় পড়ানাের উপযােগী পরিকাঠামাে এবং উপযুক্ত পরিমাণ শিক্ষাসহায়ক উপকরণ থাকে না।
(৫) পরীক্ষা সংক্রান্ত সমস্যা: মাধ্যমিক শিক্ষার পরীক্ষা প্রণালীও বিজ্ঞানসম্মত নয়। বছরের শেষে মাত্র একটি বার্ষিক পরীক্ষার ওপর এত গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়।
(৬) সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির অভাব: মাধ্যমিক শিক্ষার আর-একটি জুটি হল উপযুক্ত সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির অভাব। ফলে ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়ের প্রতি খুব একটা আকর্ষণ অনুভব করে না।
(৭) পাঠ্যপুস্তকের সমস্যা: মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে উপযুক্ত পাঠ্যপুস্তকের আজও অভাব রয়েছে।
(৮) প্রশাসনিক ত্রূটি: মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে কিছু প্রশাসনিক জুটিও লক্ষ করা যায়। একদিকে রাজ্য সরকার এবং অন্যদিকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এই দুইয়ের নিয়ন্ত্রণের ফলে নানা ধরনের সমস্যা এবং জটিলতার সৃষ্টি হয় যা মাধ্যমিক শিক্ষাকে অনেকাংশে বিঘ্নিত করে।
(৯) শিক্ষাদানে অবহেলা: বর্তমানে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে শিক্ষাদানে অবহেলা দেখা দিয়েছে। এর অন্যতম কারণ হল প্রাইভেট টিউশন’, যা কোনােভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না।
মাধ্যমিক শিক্ষার ত্রূটিগুলি দূর করতে হলে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়ােজন। যেমন—
-
পাঠক্রমের দুটি দূর করার জন্য কোঠারি কমিশনের সুপারিশ যথাযথভাবে অনুসরণ করে পাঠক্রম প্রণয়ন করতে হবে। প্রয়ােজনবােধে পাঠক্রম পুনর্গঠন করতে হবে।
-
বিদ্যালয়গুলির বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে হবে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে সেই হারে নতুন নতুন বিদ্যালয় নির্মাণ করতে হবে। শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত 1: 40 তে রাখতে হবে।
-
মেধার ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রী ভরতি করতে হবে এবং দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক সাহায্য দিতে হবে। বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক ও অন্যান্য শিক্ষাসহায়ক উপাদান সরবরাহ করতে হবে।
-
বর্তমানে শহর ও শহরতলির বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়গুলিতে দ্রুত ছাত্র সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এর প্রতিকারের কথা গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। ইংরেজি শিক্ষা ও কথােপকথনের ব্যবস্থা করতে হবে।
মােট কথা মাধ্যমিক শিক্ষার বিভিন্ন নুটি শনাক্ত করে সরকারিভাবে সেই জুটিগুলিকে দূর করার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নত হবে।
Leave a comment