প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বে মাদক এখন একটি ভয়াবহ
সমস্যা। বর্তমানে আমাদের সমাজের নারী, পুরুষ, শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ সকলেই মাদক গ্রহণ করে থাকে। আর এই মাদকের  কড়াল গ্রাস থেকে আমাদের সমাজকে বাঁচাতে হবে। সবার আগে সচেতন করতে হবে আমাদের দেশের তরুণ সমাজকে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার রচনা 

ভূমিকা

বাংলাদেশ সহ বর্তমান বিশ্ব সভ্যতা যেসব মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে
মাদকাসক্তি সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। মাদকাসক্তি আমাদের ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনের
জন্য এক ভয়াবহ অভিশাপ। এক মরণ নেশার নাম হল মাদকাসক্তি। মাদকাসক্তি নামটা
শুনলেই  আমাদের মন চমকে ওঠে। মানুষ জানেন যে, নেশা সর্বনাশা। এরপরেও মানুষ
এই সর্বনাশার ফাঁদে আটকে যায়। আমাদের সমাজে মাদকাসক্তি বিস্তার লাভ করেছে।
সর্বনাশা ব্যাধি রূপে এই সর্বনাশার শিকার হয়ে আমাদের যুবসমাজ বিপন্ন করছে তাদের
জীবনকে।

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কতটি ২০২৩ জেনে নিন

মাদকাসক্তির ভয় বহতা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে যতদিন যাচ্ছে ।মাদকাসক্তি একটি মরণফাঁদ আমাদের সমাজের জন্য। আর আমাদের যুবসমাজ, তরুণ সমাজ এই মরণ ফাঁদে আটকে যায় ।একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ার জন্য আমাদের তরুণ ও যুব সমাজকে রক্ষা করা
একান্ত কর্তব্য। তাই আমাদের উচিত মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়া।

মাদকাসক্তি কি

মাদকাসক্তি তাকে বলা হয়  যেসব দ্রব্য সামগ্রী ব্যবহার বা পান করলে নেশা সৃষ্টি হয় । আর মাদকাসক্ত তাদের বলা হয় যারা মাদক সেবন করে  । একজন
ব্যক্তির জন্য একটি ক্ষতিকর শারীরিক ও মানসিক প্রতিক্রিয়া হল মাদকাসক্তি। মাদকাসক্তির নেশা হলো
এমন এক নেশা যার কবল থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব। আর মাদকাসক্তির ফল হল অকাল
মৃত্যু। মাদকাসক্তির আকর্ষণ শক্তি এত তীব্র যে সকল মানুষের পক্ষে সহজ জীবনে ফিরে
আসা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়।

যে দ্রব্য গ্রহণের ফলে মানুষের মনে নেতিবাচক প্রভাব আসে এবং যে দ্রব্যের প্রতি
মানুষের নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায় তাকে বলা হয় মাদকাসক্তি। মাদকের প্রতি ব্যক্তির
যখন আগ্রহ ক্রমশ বাড়তে থাকে তখন তাকে বলা হয় মাদকাসক্তি। তাই মাদকদ্রব্যের
প্রতি নেশাকেই মাদকাসক্তি বলা হয়।

মাদক দ্রব্য কি

যেসব দ্রব্য সেবন করলে বা গ্রহণ করলে মানুষের মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তন হয় এবং
মানুষের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে সেগুলোকে বলা হয় মাদকদ্রব্য। মাদকদ্রব্য বলতে
বোঝায় সেসব দ্রব্য যা প্রয়োগ করলে মানবদেহে সংজ্ঞাবহ এবং মস্তিষ্ক হ্রাস পায়
তাকে মাদকদ্রব্য বলা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য
রয়েছে।

যেমন – প্রাচীন নেশা দ্রব্য হল গাঁজা, মদ, আফিম, ভাঙ ইত্যাদি। এছাড়াও বর্তমানে
যেসব মাদকদ্রব্য প্রচলিত রয়েছে তা হলো – হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবা,
মারিজুয়ানা,মরফিন, কোকেন, প্যাথেডিন, এল এস ডি, চরস, পপি,ক্যানবিস,  হাশিশ,
স্মাক ইত্যাদি।

মাদকদ্রব্যের প্রকারভেদ

পৃথিবীতে  মাদকদ্রব্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের।  এগুলোকে ভাগ করা যায় প্রধানত দুই ভাগে । যথা –

 প্রাকৃতিক ও 

রসায়নিক 

প্রাকৃতিক

প্রাকৃতিকভাবে যেসব মাদকদ্রব্য উৎপাদন করা হয় তাকে প্রাকৃতিক মাদকদ্রব্য বলা
হয়। প্রাকৃতিক মাদকদ্রব্য সাধারণত গাছ থেকে উৎপাদন করা হয়। যেমন – গাজা, ভাঙ,
আফিম, তাড়ি, চরস ইত্যাদি।

রাসায়নিক

রাসায়নিক ক্রিয়া বিক্রিয়ার মাধ্যমে পরীক্ষাগারে যে মাদকদ্রব্য উৎপাদন করা হয়
তাকে রাসায়নিক মাদকদ্রব্য বলা হয়। প্রাকৃতিক মাদকদ্রব্য থেকে রাসায়নিক
মাদকদ্রব্য বেশি ক্ষতিকর হয় এবং নেশা সৃষ্টি করে। রাসায়নিক মাদকদ্রব্য গুলো হল
– হেরোইন, কোকেন, মরফিন, প্যাথেডিন , ইয়াবা, বিভিন্ন প্রকার এলকোহল, শূরা,
সঞ্জীবনী ইত্যাদি। এছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংখ্যা অনুযায়ী নিকোটিন
যুক্ত তামা দ্রব্য হল সিগারেট, জর্দা, চুরুট, নস্যি ইত্যাদি।

 মাদকের উৎস

বিশ্বব্যাপী মাদকদ্রব্য বিস্তৃত। মাদক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত হয়। মাদকের
সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুনাফা লোভী অসাধু ব্যবসায়ী চক্র। অনেক দেশে মাদকের চোরা
চালান, বিপণন, প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়। মাদক চোরা চালানের প্রধান অঞ্চল হিসাবে
যেগুলো পরিচিত সেগুলো হল –

গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল 

গোল্ডেন ক্রিসেন্ট 

গোল্ডেন ওয়েজ 

গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের পরিধি বার্মা, মায়ানমার ও লাউস।

গোল্ডেন ক্রিসেন্ট এর পরিধি ইরান, তুরস্ক, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। পাকিস্তানে
সিংহভাগ উৎপন্ন হয়।

গোল্ডেন ওয়েজ নেপাল সীমান্ত ও ভারতে পাওয়া যায়। ভারত ও নেপাল সীমান্তে প্রচুর
পরিমাণে গাজা, হেরোইন, আফিম ও কোকেন ইত্যাদি বেশি উৎপন্ন হয়। মাদক উৎপাদন ও
চোরাচালানের বড় একটি নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর ও
বলিভিয়ায়।বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ও  ছড়িয়ে পড়েছে এসব
মাদকদ্রব্যের নেটওয়ার্ক।

মাদকাসক্তির কারণ

একজন ব্যক্তির মাদকাসক্তি হওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। মাদকাসক্তি হওয়ার প্রধান কারণ
গুলো হল-

  • নৈতিক শিক্ষার অভাব
  • পারিবারিক অশান্তি
  • বেকারত্ব
  • হতাশা ও বন্ধু-বান্ধবের প্ররোচনা
  • মাদকদ্রব্য ব্যবসায়ীদের প্ররোচনা
  • পাশ্চাত্য জীবনের অন্ধ অনুকরণ
  • দেশের বিশেষ রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা
  • প্রেমে ব্যর্থতা
  • সৌখিনতা ও কৌতূহল বসত
  • মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা ইত্যাদি।

এছাড়াও যে সকল কারণে ব্যক্তি মাদকাসক্ত হয়ে ওঠে তা হল-

হতাশা

আমাদের যুব সমাজের মাদকাসক্তি হওয়ার পেছনের প্রধান কারণ হলো হতাশা। আমাদের যুব
সমাজ নিজেকে নিয়ে অনেক উচ্চ আশা পোষণ করে কিন্তু সে মোতাবেক  কাজ করে না।
যার কারণে সে তার মনের আশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয় যার কারণে সে মাদকাসক্ত হয়ে
ওঠে।

 কুশংসর্গ

একজন মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে তার পরিবেশ। একজন মানুষ অনেক সময়
মাদকাসক্ত বন্ধুর সাথে মিশে নিজের অজান্তেই মাদকদ্রব্য সেবনে সে অভ্যস্ত হয়ে
ওঠে।

পারিবারিক কলহ

পারিবারিক কলহ ও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভালোবাসা ও সৌহার্দের অভাব আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বে কিশোরদের ভুল পথে পরিচালিত করে । একজন কিশোর মাদকের সংস্পর্শে এসে যায় সুস্থ সামাজিক
পরিবেশের অভাবে  ।

কৌতুহলবশত

কৌতূহলবশত অনেক কিশোর – কিশোরী মাদকাসক্ত হয়ে ওঠে কারণ মানুষের সবচেয়ে বেশি
আগ্রহ হয় নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি। তাই কৌতুহলবসত হয়ে একজন কিশোর মাদকাসক্ত হয়ে
ওঠে।

মাদকের উৎসভূমি

আফিম হলো মাদকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন মাদক। আফিম কৃষকেরা তৈরি করেন পপি ফুলের
নির্যাস থেকে এবং এই নির্যাস থেকে হয় মরফিন বেস। আর সর্বনাশা হেরোইন তৈরি হয়
আফিম থেকেই। মাদকদ্রব্য মারিজুয়ানা উৎপন্ন হয় যুক্তরাষ্ট্র, কলম্বিয়া,
জা্মাইকা, মরক্কো, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ব্রাজিল, জ্যামাইকা, গুয়েত মালা,
দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, ঘানা প্রভৃতি দেশে।জ্যামাইকা, মরক্কো,
পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, ভারত, জর্ডান এসব দেশে হাশিশ উৎপন্ন হয়।

মাদকদ্রব্য চোরা চালান

মাদকদ্রব্যের বিশাল অপরাধ জগতের সাথে জড়িত ব্যক্তিগত ছাড়াও আরো অনেক ব্যবসায়িক
দিক রয়েছে ভারত ও পাকিস্তান থেকে পাচার হয়ে। আর এই মাদকদ্রব্য পশ্চিম ইউরোপের
যেসব দেশে পাচার হয় সেগুলো হল- সুইজারল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি ও গ্রেট
ব্রিটেনে। চোরা চালানের কেন্দ্রস্থল হিসাবে ব্যবহার করা হয় শ্রীলঙ্কাকে।
বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য চোরাচালানের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহৃত হয় গোল্ডেন
ট্রাইংগেল ও গোল্ডেন ক্রিসেন্ট এর মাঝামাঝি হওয়ার কারণে।

বিশ্বব্যাপী মাদক দ্রব্যের ব্যবহার ও প্রতিক্রিয়া

মাদকের ভয়াবহতা বিস্তারের জন্য বাংলাদেশ সহ পুরো বিশ্ব আজ উদ্বেগ জনক অবস্থায় রয়েছে । মাদকাসক্ত হল ভয়াবহ পরিণতি ।মাদকাসক্ত হলো আজ যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সমস্যা। সমাজের প্রায় সর্বক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় মাদকদ্রব্য ।

মাদকাসক্তের সংখ্যা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়েছে যে, পৃথিবীর প্রায়
শতাধিক দেশে ৫০ থেকে ৬০ কোটি মানুষ মাদকে আসক্ত। এই ক্ষতিকর মাদকদ্রব্য উৎপন্ন
হয় পৃথিবীর ৩৬ টি দেশে কিন্তু মাত্র ৩৬ টি দেশে মাদক উৎপন্ন হলেও মাদকের লীলা
ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে প্রায় শতাধিক দেশ। চিকিৎসকদের মতে, বাংলাদেশে ৫০ লক্ষেরও
বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে। তবে মহিলাদের মধ্যে প্যাথেডিনে আসক্তির সংখ্যা
বেশি।

আরো পড়ুনঃ  রচনা – মাদককে রুখবো,স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ব

আমেরিকায় প্রায় ৪ কোটি নর  নারী কোকেন সেবন করে। মারিজুয়ানা সেবন করে দুই
কোটি মানুষ। হেরোইন সেবন করে ১২ লক্ষ। মানুষ সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশগুলোতেও একই
সমস্যা রয়েছে।

মাদকাসক্ত হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ ও পরিণতি

আমাদের দেশসহ বিশ্বের দেশগুলো নেশার খপ্পরে পড়ে বিভ্রান্ত হয়ে গেছে কারণ
মাদকাসক্তির পরিণতি খুবই ভয়াবহ। যাদের নেশায় আসক্তি রয়েছে তাদের আচার-আচরণের
মধ্যে একটি খাপ ছাড়া ভাব পরিলক্ষিত হয়। নেশাগ্রস্ত হওয়ার ফলে তাদের মধ্যে গড়ে
ওঠে চুরির অভ্যাস। কিশোরেরা বই, খাতা, কলম সহ অন্যান্য দ্রব্য হারিয়ে ফেলে।
পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে ওঠে, চুরি, ডাকাতি, ছিন্তাইসহ বিভিন্ন অসামাজিক কাজে
লিপ্ত হয় যার কারণে সমাজে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা।

 কিশোরদের ইতিবাচক বিশ্বাসগুলো ভেঙ্গে ফেলছে এই সর্বনাশা মাদকদ্রব্য। যার
কারনে পরিণত হচ্ছে মেরুদণ্ডহীন এই যুবসমাজ। নেশার জগতে বেশি প্রবেশ করে উচ্চবিত্ত
ও নিম্নবিত্ত ঘরের সন্তানেরা আর এই নেশার কারণে স্মৃতিশক্তি লোপ পায় এবং ধীরে
ধীরে অগ্রসর হয় মৃত্যুর দিকে।

মাদকের নেশা দ্রুত প্রসারের কারণ

মানুষ নেশা করে থাকে সামাজিক শান্তি লাভের আশায় এবং হতাশা ও দুঃখবোধ দূর করতে ।
আবার অনেকে মাদকের ব্যবসা বেছে নিয়েছে অনেক দেশে অধিক অর্থ লাভের আশায় । তবে একটি মাফিয়া দল এই
মাদকের ব্যবসার সাথে জড়িয়ে আছে আর এই দল গুলোই সারা বিশ্বে
মাদকগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছে।

পুরো পৃথিবীতে মাদক ছড়ানোর কারণ

আফিম বানানো হয় পপি গাছের ফুল থেকে । খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সাল থেকে আফিম ব্যবহার
করা হয় আনন্দময় অনুভূতি তৈরি করতে এবং একই সাথে ব্যাথা কমানোর কাজে । আবার এই আফিম উনি শতকের দিকে  থেকে আলাদা করা হয় মারফিন নামক উপাদানকে আর পরীক্ষাগারে এই মারফিন
থেকেই তৈরি করা হয় হিরোইন। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিগুলো ১৯৮০ ও ১৯৯০ এর দশকে
মারফিন জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার করেন ব্যাথা নাশক হিসেবে।

আরো পড়ুনঃ  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আসক্তি আজ তরুণ সমাজের প্রধান সমস্যা

আর এর প্রচলন করা হয় নেশা সৃষ্টিকারী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কে লুকিয়ে আর এর
ফলস্বরূপ হাজার হাজার মানুষ নেশার কবলে পড়ে। মানুষের মস্তিষ্কে এন্ডোর ফিন নামক
রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা মানুষের ব্যথার অনুভূতি জাগায় আর এন্ডোরফিন
রেস্পেক্টর গুলোকে বন্ধ করে দেয় এই আফিম জাতীয় মাদক। আর এর সাথে সাথে মানুষের
মস্তিষ্কে এন্ড্রেনালিন ও ডোপামিন তৈরিতে সাহায্য করে থাকে।

আর ঠিক এই কারণেই এই মাদকে মানুষের নিজের মধ্যে ভালো লাগা শুরু হয়ে যায়।
মানুষের মস্তিষ্কের কোষে সময়ের সাথে সাথে টলারেন্স বাড়ে আফিম জাতীয় পদার্থের
যার কারণে মানুষের একই জাতীয় অনুভূতি পেতে ইচ্ছা করে। আর এভাবে মানুষের মাদকের
প্রতি আসক্ত বেড়ে যায়।

শিশু ও মাদকাসক্তি

বর্তমানে বাংলাদেশে মাদকের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বড় মানুষের সাথে সাথে ছোট ছোট শিশুদের মধ্যেও । প্রতি এক হাজার জনের মধ্যে দুইজন মাদক সেবনকারী
হল ৭ থেকে ১১ বছর বয়সের শিশু  এক জরিপে দেখা যায় । তবে এরা পরিমাণে মাদক কম ব্যবহার করে যার কারণে
এদের মধ্যে মাদক নির্ভরশীলতার পরিমাণ কম থাকে। আর এই বয়সে শিশুদের মাদক সেবনের
জন্য দায়ী হলো সামাজিক পরিবেশ সহ নিজ পরিবার।

প্রধানত বস্তি এলাকার শিশুরা মাদকাসক্তের সাথে বেড়ে ওঠে ।মাদক চোরা চালানোর মতো অপরাধ মূলক কাজের সাথে এরা সাথে জড়িয়ে পড়ে এবং সেই সাথে মাদক সেবনের
সাথে ও জড়িয়ে পড়ে  । গবেষকরা মনে করেন, শতকরা চল্লিশ ৪০ থেকে ৬০ ভাগ শিশু এপি জেনেটিক্স এবং পরিবেশগত প্রভাবের
কারণে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।

বয়সের সাথে নেশার সম্পর্ক

বাংলাদেশে বর্তমানে শতকরা ১০০ জনের মধ্যে বৃদ্ধ এবং শিশুর হার ৩৭ ভাগ এবং কিশোর ও
তরুনের  ৬৩ ভাগ। ১৮ বছরের বেশি মাদক সেবী রয়েছে তিন দশমিক তিন ৩.৩ শতাংশ
এবং ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের মধ্যে রয়েছে ১.৫ ভাগ। যারা মাদক সেবন করে তারা
স্বাভাবিক মানুষের থেকে অনেক আগেই মৃত্যুবরণ করে যার কারণে বার্ধক্যে পৌঁছানোর
আগে তাদের পরিণতি হওয়া শেষ হয়ে যায়। আবার শিশুদের মাদক সেবনে স্বাধীনতা থাকে
না যার কারণে মাদক সেবনে শিশুদের পরিমাণও কম থাকে। যার কারণে তরুণ প্রজন্মের
মধ্যে মাদক গ্রহণের পরিমাণ বেশি দেখা যায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মাদক সেবন

বর্তমানে মাদক বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রাখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে পরিচয় ঘটে থাকে সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমের কারণে  যার ফলশ্রুতিতে সহপাঠী বা
আশে পাশের মানুষ দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং মাদকাসক্ত হয়ে ওঠে। সম্প্রতি যুক্ত
রাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০০ জন কিশোরের উপর একটি পরীক্ষা চালানো
হয় আর এতে দেখা যায় যে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে জড়িত তাদের
মাদকাসক্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় পাঁচ গুণ।

এর সাথে মদ্যপানের প্রবণতা বেড়ে যায় তিনগুণ। মাদকাসক্ত হওয়ার সাথে সাথে
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো মাদকের সাহায্য করে থাকে মাদকের প্রচারণা বাড়ানোর
বিভিন্ন কাজের সাথে। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কে মাদকাসক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ
হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

মাদকের কুফল

মাদকাসক্ত ব্যক্তির জাতীয় ও সমাজ জীবনে ডেকে আনে ভয়াবহ পরিণতি। মাদকে আসক্ত
ব্যক্তির ক্ষুধা, তৃষ্ণা, বিবেক, বুদ্ধি লোপ পায়, তাদের অনুভূতি কমে যায়। তাদের
মধ্যে হাসি-কানা সকল বিচার বুদ্ধি কমে যায়। মানুষ নানা কারণে মাদক গ্রহণ করে
থাকে আর একবার নেশার জগতে প্রবেশ করলে আর তারা বেরিয়ে আসতে পারে না। এই নেশা
দিনের পর দিন আরো বাড়তে থাকে। মানুষ যখন নেশা করে তখন তারা ভাবে যে তারা সকল
দুঃখ ভুলে যায়। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা এভাবে পরিবার ও সমাজের সুস্থ তাকে
ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে।

আরো পড়ুনঃ কৃষি উদ্যোক্তা –  রচনা  সম্পর্কে জেনে নিন

 দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্তির ফলে একসময় মানুষ আত্মহত্যার পথ পর্যন্ত বেঁছে
নেয় যার কারণে পরিবারের ক্ষতি হয় অপূরণীয়। মাদকাসক্ত ব্যক্তির মধ্যে ১৬ থেকে ৩০
বছরের মানুষই বেশি পরিলক্ষিত হয়। মাদক গ্রহণের ফলে দেহ ও মনের উপর ব্যাপক প্রভাব
পড়ে যার কারণে ব্যক্তি আক্রান্ত হয় বিভিন্ন জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে।
মাদকাসক্ত দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করে এবং ব্যক্তির ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে করে
দেয় ধ্বংস।

মাদকাসক্তির প্রতিকার

বিশ্বজুড়ে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে মাদকাসক্তির হাত থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য।
কারণ মাদকাসক্তি এক ভয়াবহ রোগ। আমাদের দেশের তুলনায় পশ্চিমা বিশ্বে এর ভয়াবহতা
অনেক বেশি। আমরা মাদকের বিরুদ্ধে যেভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি তা হল-

  • সচেতনতা সৃষ্টি করা
  • মাদকের কুফল সম্পর্কে ব্যক্তিকে জানানো
  • মাদকের সহজলভ্যতা দূরীকরণ
  • বিভিন্ন তথ্য প্রচার করা মাদকের অপব্যবহার ও ভয়াবহতা সম্পর্কে
  • ব্যক্তিগত ও সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি
  • বেকারত্ব দূরীকরণ
  • পরিবেশ ও মানবিক মূল্যবোধ গঠন
  • ছোটবেলা থেকে শিশুদের মাদকদ্রব্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলা
  • বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অফিস সংস্থা দপ্তর কে ধূমপানমুক্ত এলাকার ঘোষণা করা ও তা
    কার্যকর করা।

মাদকাসক্তির এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে বাঁচাতে সকলকে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
সমাজ থেকে দূর করতে হবে বেকারত্বের অভিশাপ। তরুণদের পড়ালেখার পাশাপাশি
কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষের যদি নৈতিক গুনাগুন অর্জিত হয় তাহলে
মানুষ নেশার জগত থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যারা মাদক
বিক্রি করে তাদের শাস্তি দেওয়া। মাদকাসক্তদের জন্য নিরাময়ের ব্যবস্থা করাও
চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

মাদকাসক্তি প্রতিরোধ চিন্তা

যুব সমাজকে উদ্ধার করতে হবে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে মাদকের যে ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে তা থেকে। মাদকবিরোধী জনমত গঠন করতে হবে বেতার, টিভি, সংবাদপত্র ইত্যাদি মাধ্যমে । কারণ বিশেষজ্ঞরা ভাবছেন মাদকের ভয়াবহতা নিয়ে  এবং সমাজ সেবীরা উৎকণ্ঠা
প্রকাশ করছেন।

সমাজে নেতাদের কর্তব্য

সমাজের নেতাদের মাদকদ্রব্যের ব্যবহার কমাতে এগিয়ে আসতে হবে।মাদকাসক্তি কমানো সম্ভব হতে পারে এমনকি মাদকের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে সমাজের নেতারা যদি
অবস্থান নেন তাহলে ।

আরো পড়ুনঃ  লঞ্চ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা সম্পর্কে জেনে নিন

আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্তব্য

মাদকের বিরুদ্ধে বিশ্বের সকল দেশের এগিয়ে আসা উচিত। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে
মাদকের উৎপাদন, বিপণন ও পাচার রোধে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে সকল দেশের
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সজাগ থাকতে হবে এবং একযোগে কাজ করতে হবে।

আইন প্রণয়নকারী ও প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা

সরকারের আইন প্রণয়নকারী ও প্রয়োগকারী সংস্থাকে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করতে
হবে কারণ একমাত্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পারে সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে এবং
অপরাধ প্রবণতা কমাতে। তাই সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে আন্তরিকভাবে এবং মাদকাসক্তির
বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

বিশ্বজুড়ে মাদকবিরোধী আন্দোলন ও বাংলাদেশ

বাংলাদেশে মাদকবিরোধী আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে বিশ্বের মধ্যে সর্বপ্রথম মাদক
বিরোধী আন্দোলন হয় যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৮৭ সালে মাদকবিরোধী আন্দোলনে যুক্তরাষ্ট্রের
সঙ্গে অংশগ্রহণ করে বিশ্বের প্রায় ৩২ টি দেশ। মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে
বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশ সোচ্চার হয়ে উঠেছে। ইরানে কঠোর শাস্তির বিধান
হিসেবে প্রায় ৩১ জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। ১৯৯০ সাল থেকে মাদকের বিরুদ্ধে কাজ
করছে ঢাকার তেজগাঁয়ে অবস্থিত মাদক চিকিৎসা কেন্দ্র। এছাড়া ও রাজশাহী, খুলনা ও
চট্টগ্রামে স্থাপন করা হয়েছে আরো তিনটি মাদক চিকিৎসা কেন্দ্র।

উপসংহার

যদি সমাজের কোন এক জায়গায় অশান্তি বিরাজ করে তাহলে এই
সর্বনাশা নেশা গ্রাস করে পুরো জাতিকে মাদকাসক্তির কারণে। আমাদের তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে হবে মাদকাসক্তির কবল থেকে । আমাদের তরুণ সমাজ আজ মাদকের আসক্তির কারণে  অকাল মৃত্যুর দিকে
ছুটে চলেছে। তরুণদের রক্ষা করতে না পারলে সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে না। তাই মাদকের করাল
গ্রাস থেকে আমাদের বাঁচাতে হবে সমাজ তথা দেশকে।

  • হেরোইন প্যাথেডিন নেশার আস্তানা
  • তা দুমড়ে মুচড়ে দিতে ধর এ হাতখানা
  • বিশ্বের প্রান্তজুড়ে চলো প্রতিরোধ গড়ে তুলি
  • মরন যদি আসে তবে পেছনে ফিরব না।