কথামুখ: বুদ্ধদেব বসু সমর সেন সম্পর্কে লিখেছিলেন—“সমর সেন শহরের কবি, কলকাতার কবি, আমাদের আজকালকার জীবনের সমস্ত বিকার, বিক্ষোভ ও ক্লান্তির কবি।” নাগরিক জীবনের ক্লান্তি, অবসন্নতাকে সমর সেন ধরে রাখেন তাঁর কবিতায়। ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতাটিও তার ব্যতিক্রম নয়।

সৌন্দর্যের ক্ষণস্থায়িত্ব : সন্ধ্যার জলস্রোতে যখন অলস সূর্য এঁকে দেয় ‘গলিত সােনার মতাে উজ্জ্বল আলাের স্তম্ভ’, তখন মুগ্ধতার সেই আবেশ শীতের দুঃস্বপ্নের মতাে ‘ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস’-এ আক্রান্ত হয়। এটাই নগর সভ্যতার বাস্তবতা এবং ট্র্যাজেডিও যে, সুন্দরের প্রকাশ এখানে ঘটলেও তা ক্ষণস্থায়ী। সমর সেন এই যন্ত্রসভ্যতারই নিপুণ ভাষ্যকার।

প্রকৃতির আকর্ষণীয়তা : কিন্তু তিনি এর সমর্থক নন। তাই তাকে ‘মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ’ হাতছানি দিয়েছে। সেখানে পথের দু-ধারে ছায়া ফেলা দেবদারুর দীর্ঘ রহস্য, রাত্রের নির্জন নিঃসঙ্গতাকে আলােড়িত করা সমুদ্রের গর্জন কবির চেতনাকে অধিকার করে থেকেছে।

মুক্তিহীন কবি : কিন্তু নগরজীবনের বিবর্ণতা ও যান্ত্রিকতা থেকে কবি মুক্তি পাননি, তাই মহুয়া বনের নির্মল প্রকৃতির মধ্যেও কবি কয়লাখনির শব্দ শুনতে পান। শিশিরভেজা নির্মল সকালকে গ্রাস করে মানুষের শরীরের ধুলাের কলঙ্ক।

ইতিকথা : গদ্য লেখায় সমর সেন বলেছিলেন—“রিয়ালিটির থেকে নিষ্কৃতির চেষ্টা পরাজয়ের দুর্বল ভঙ্গি, প্রকৃতির স্বপ্নলােক ক্লীবের অলীক স্বর্গ।” তাই কল্পনার আশ্রয় না নিয়ে যন্ত্রসভ্যতার সর্বগ্রাসী চেহারাকেই কবি মহুয়ার দেশ’ কবিতায় তুলে ধরেছেন।