ভূমিকা: ‘ভাত’ গল্পটির নামকরণে বিষয়বস্তুগত ভিত্তি যেমন কার্যকরী, সেরকমই বিষয়কে ছাপিয়ে ব্যঞ্জনাকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে দেখা যায়।

প্রেক্ষাপট : মূলত দুটি প্রেক্ষাপটের ব্যবহার এই কাহিনিতে আছে। একটি প্রান্তিক বাদা অঞ্চল, অন্যটি শহরের বড়ড়া বাড়ি। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র উচ্ছব নাইয়া এই দুটি প্রেক্ষাপটের যােগসূত্র। কিন্তু এই কাহিনির প্রকৃত প্রেক্ষাপটে আছে অন্নবিলাস আর অন্নহীনতার চিরন্তন দ্বন্দ্ব ও বৈষম্য।

উচ্ছবের গ্রাম : উচ্ছবের বাস যে বাদা অঞ্চলে সেখানে শুধুই গুগলি-গৌঁড়ি- কচুশাকসুশনাে শাক জন্মায়। সেখানে অন্নের আয়ােজন হয় হিঞ্জে সেদ্ধ, গুগলি সেদ্ধ, নুন আর লংকা পােড়া দিয়ে। তা-ও এই খাওয়া নিয়মিত নয়। সতীশ মিস্ত্রির জমিতে কাজ করে উচ্ছব কয়েকমাসের অন্ন জোগার করে, কিন্তু তা বারােমাসের না। মাতলার বন্যা সুযােগ পায় অভাবী মানুষের সর্বস্ব ভাসিয়ে নিয়ে যেতে, সতীশ মিস্ত্রিরা কিন্তু অক্ষত থেকে যায়।

শহরের বড়াে বাড়ি : বাদা থেকে আনা চালের প্রাচুর্য, অন্নবিলাসিতার বিকৃত ছবি সেখানে। ব্যঞ্জন এবং চরিত্রভেদে চালের নাম পালটে যায়। এমনকি বাড়িরসর্বময়ী কত্রী বড়ােপিসিমাও লুকিয়ে চাল বিক্রি করে দেন। কিন্তু উচ্ছব ক্ষুধার্ত জেনেও তাকে তারা খেতে দেয় না, অজুহাতে বিলম্ব করে। ক্ষুধার্ত উচ্ছব ভেবে যায়—“ভাতই সব। অন্ন লক্ষ্মী..’।

কাহিনির পরিণতি : কাহিনির পরিণতিতে অন্নকাতরতাই প্রধান রূপ নেয়। ক্ষুধার্ত উচ্ছব অশৌচ বাড়ির ফেলে দেওয়া ভাত নিয়ে ছুটতে থাকে। সেই ভাতে হাত দিয়ে সে স্বর্গসুখ খুঁজে পায়। অবশেষে স্টেশনে গিয়ে পেটভরে ভাত খেয়ে সে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন পিতলের ডেকচি চুরির অপরাধে তাকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। উচ্ছবের স্বপ্ন ছিল ধান ভরতি বাদার সন্ধান করা। ইচ্ছা ছিল সন্ধান পেলে গ্রামের সবাইকে সেটির খবর জানিয়ে দেওয়া। সে সাধ তার পূর্ণ হয় না। অন্নকাতরতাই যেন স্থায়ী সুর হয়ে থাকে গল্পের। আর সে কারণেই গল্পের নামকরণ’ ভাত অত্যন্ত সার্থক।