বুড়ােকর্তার মৃত্যু পরবর্তী ঘটনাসমূহ: মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ ছােটাগল্পে বর্ণিত বড়াে বাড়ির বুড়ােকর্তা বিরাশি বছর বয়সে লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে যেদিন মারা যান সেদিনই তাকে বাঁচাতে হােমযজ্ঞ শুরু হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর বাড়ির মহিলা এবং পরিচারিকারা স্বভাবতই কাঁদতে থাকে। বড়ােপিসিমা কাঁদতে কাঁদতে তান্ত্রিককে এবং বাড়ির ছােটোবউয়ের বাবাকে দোষারােপ করতে থাকেন ‘ডাকাতে সন্নেসী’ আনার জন্য। তার ধারণা হয়েছিল আটানব্বই বছরের পরিবর্তে বিরাশি বছরেই কর্তার মৃত্যুর কারণ তান্ত্রিকের অক্ষমতা। ঠিক হয় যে, বুড়ােকর্তার মেয়েরা এবং কীর্তনের দল আসার পর সে রাতেই মৃতদেহ সৎকার করা হবে। পুরােহিতকে বলে প্রয়ােজনীয় জিনিসের ফর্দ নেওয়া হয় এবং খই, ফুল, ধুতি, শববস্ত্র ইত্যাদির জোগাড় চলতে থাকে। চন্দন বাটা চলতে থাকে, খাট আনতে একজনকে বাগবাজারে পাঠানাে হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে একটা বােম্বাই খাট এসে যায়। মহিলারা মাঝেমধ্যেই কেঁদে উঠলেও শােকের বিশেষ চিহ্ন দেখা যায় না কারও মধ্যে। বাড়ির উনুন জ্বলবে না বলে রাস্তার দোকান থেকে চা আসতে থাকে। অবশেষে রাত একটার পর বােম্বাই খাটে শুইয়ে বৃদ্ধের মৃতদেহ বের করা হয়। পেশাদারি শববাহকরা তা দ্রুতগতিতে শ্মশানে নিয়ে যেতে থাকে। পেছন পেছন দৌড়ে যায় কীর্তনের দল। বাড়ির সব রান্না ফেলে দিয়ে ঘরদুয়ার সাফ করা শুরু হয়।