মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ ছােটোগল্পে উল্লিখিত বড়াে বাড়ির বড়ােপিসিমা চিরকাল সংসারের হেঁশেল দেখেছেন, ভাড়াটে বাড়িতে মিস্তিরি লাগিয়েছেন এবং তার বাবার সেবা করেছেন। পিতার মৃত্যুর পর তার দাদার সংসারেও তার ভূমিকা বিশেষ পালটায়নি।

উচ্ছবকে কাজ করতে দেখে বিরক্ত হয়ে বড়ােবউ বামুন ঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করে যে কোথা থেকে বুনাে লােক অর্থাৎ উচ্ছবের আগমন। এর উত্তরে বড়ােপিসিমা ঝাঝের সঙ্গেই জানান যে, ঝড়জলে দেশ ভেসে যাওয়ায় বাসিনীই তার এই পরিচিত ব্যক্তিকে কাজের জন্য এই বাড়িতে এনেছে। বড়ােবউমা উচ্ছবের চেহারার সমালােচনা করলে তাকে বলেন যে, ময়ূর ছাড়া কার্তিক ঠাকুর নিশ্চয়ই কাজের জন্য আসবে না। বড়ােবউকে উদ্দেশ্য করে- “কেনা চাল নয়, বাদা থেকে চাল আসছে। তা দিতেও আঙুল বেঁকে যাচ্ছে?” —মন্তব্যে তার তীব্র কর্তৃত্ববােধ প্রকাশ পায়। পরে তিনি কর্মরত উচ্ছবকে দেড় হাত মাপমতাে কাঠ কাটার জন্য তাড়াও দিয়েছেন। দাদার মৃত্যু হলে সৎকারের জোগাড়ন্ত্র এবং শােকপ্রকাশে তিনিই নেতৃত্ব দিয়েছেন। হােমযজ্ঞ চলাকালীন বাড়ির বড়াে, মেজো এবং ছােটো ছেলে উঠে যাওয়ার জন্যই যে দাদার প্রাণরক্ষার সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে— এ কথাও চেঁচিয়ে বলতে তার কোথাও আটকায়নি। এমনই ছিল তাঁর দাপট। কীর্তনের দল এলেই মৃতদেহ বেরােবে বড়াে ভাইপাের এ কথা শুনে বড়ােপিসিমাই তীব্র প্রতিবাদ করে জানান যে, তাঁর ভাইঝিরা এলেই শবদেহ বেরােবে। এরপর মৃতদেহ বেরিয়ে গেলে তিনিই বাসিনীর সাহায্যে রান্না করা সব অশুচি খাবার ফেলার ব্যবস্থা করেন। ‘ভাত’ ছছাটোগল্পে বড়ােপিসিমার কর্তৃত্ব এভাবেই প্রকাশিত হয়েছে।