প্রশ্নঃ মহাভারত অনুবাদের ধারা সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য অনুবাদের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সংস্কৃত থেকে বিরাট অংশ অনুবাদ হিসেবে গৃহীত। তার মধ্যে মহাভারত অন্যতম। কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ ব্যাসদেব, কৌরব ও পাণ্ডবদের যুদ্ধসংক্রান্ত নানা উপকাহিনীকে একত্রিত করে বিরাট আকার মহাভারত সংস্কৃত ভাষায় রচনা করেন। ব্যাসদেবের মহাভারত ছাড়া জৈমিনির মহাভারত আমাদের দেশে প্রসার লাভ করেছিল। মহাভারতের অনুবাদকেরা সাধারণ জৈমিনির মহাভারতকে আদর্শরূপে গ্রহণ করে। বাংলাদেশের মহাভারত অনুবাদ পঞ্চদশ শতকে শুরু হয় এবং সপ্তদশ শতকে কাশিরাম দাসের অনুবাদের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। যে কবি মহাভারত অনুবাদ করেছিলেন তারা নিম্নরূপ-
কবিন্দ্র পরমেশ্বরঃ বাংলা মহাভারতের প্রথম অনুবাদক। গৌড়ের সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহের (১৪৯৩-১৫১৮) সেনাপতি লস্কর পরাগলের আদেশে তিনি ‘পরাগলী মহাভারত’ রচনা করেন।
শ্রীকরনন্দীঃ পরাগলের পুত্র ছুটি খানের নির্দেশে শ্রীকরনন্দী জৈমিনি মহাভারতের উপর নির্ভর করে কেবল অশ্বমেধ পর্বের অংশ নিয়ে যে মহাভারত রচনা করেন তার নাম ‘ছুটিখানি মহাভারত’।
নিত্যানন্দ ঘোষঃ কাশীরাম দাসের পূর্বে নিত্যানন্দ ঘোষ মহাভারতের অনুবাদ করে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে।
কাশীরাম দাসঃ মহাভারতের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কাশীরাম দাস। তিনি কৃষ্ণদ্বৈপায়ণের সংস্কৃত মহাভারতের অনুসরণে মহাভারতের আঠারো পর্বের তিন পর্ব অনুবাদ করেন। তার মহাভারত অনুবাদ এতটা বাঙালি উপযোগী যা বাঙালির কাছে অমৃতের সমান।
গঙ্গাদাস সেনঃ সম্ভবত গঙ্গারাম দাস সমস্ত মহাভারত অনুবাদ করেছেন। তিনি ব্যাসদেবের মহাভারত অবলম্বনে অনুবাদ করেন।
মহাভারত রচনার ধারা দীর্ঘদিন বাংলা সাহিত্যে সম্প্রসারিত ছিল। যে সকল কবি সামগ্রিক বা আংশিক মহাভারত অনুবাদ করেছেন তারা সংখ্যায় ত্রিশ জনের মত।
Leave a comment