[1] বড়ােলাটের চূড়ান্ত ক্ষমতা: মর্লে-মিন্টো আইনের মাধ্যমে বড়ােলাটের আইনসভার হাতে চূড়ান্ত ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছিল। এই আইনের দ্বারা বড়ােলাট আইনসভার যে-কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সংশােধন বা বাতিল করার অধিকারী ছিলেন। বড়ােলাট নিজের পছন্দে আইনসভার বেসরকারি সদস্যদের মনােনীত করতেন এবং তারা বড়ােলাটের ইচ্ছানুসারে কাজ করতেন। এর ফলে কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে সরকারি ও মনােনীত সদস্যরা মিলে আইন পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশে পরিণত হন। এভাবে প্রকৃতপক্ষে বড়লাটের হাতে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়।

[2] ভােটাধিকার: মর্লে-মিন্টো আইনের দ্বারা ভারতীয়দের সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকার স্বীকৃত হয়নি। এর দ্বারা মুষ্টিমেয় ভারতীয়কে ভােটাধিকার দেওয়া হয়। তা ছাড়া নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কোনাে ক্ষমতা বা তাদের মতামতের কোনাে গুরুত্ব ছিল না। তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যানের সম্পূর্ণ ক্ষমতা ছিল সরকারের হাতে।

[3] অধিকারহীনতা: এই আইনের মাধ্যমে দেশীয় রাজ্য, সামরিক বিভাগ, বিদেশনীতি প্রভৃতি বিষয়ে কোনাে প্রস্তাব আনার অধিকার আইনসভার হাতে ছিল না।

[4] দায়িত্বশীলতার অভাব: মর্লে-মিন্টো আইনের দ্বারা কেন্দ্রে এবং প্রদেশে নির্বাচিত ভারতীয় জনপ্রতিনিধিদের বিশেষ কোনাে গুরুত্ব স্বীকৃত হয়নি। ফলে এই আইন ভারতে কোনাে দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়।

[5] সাম্প্রদায়িক নির্বাচন: মরলে-মিন্টো আইন দ্বারা সরকার মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করে সাম্প্রদায়িকতাকে ইন্ধন দেয়। ঐতিহাসিক পার্সিভ্যাল স্পিয়ার এই আইনকে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের প্রথম সরকারি উদ্যোগ বলে অভিহিত করেছেন।

[6] কংগ্রেসের ক্ষোভ: মর্লে-মিন্টো আইন কংগ্রেসের চরমপন্থী ও নরমপন্থী উভয় গােষ্ঠীকেই অসন্তুষ্ট করে। এই আইন চরমপন্থী অংশকে জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নিলে চরমপন্থীরা ক্ষুদ্ধ হয়। অন্যদিকে নরমপন্থীদের দাবিদাওয়াও এই আইনের দ্বারা পূরণ করা হয়নি।

[1] বেসরকারি সদস্য বৃদ্ধি: মর্লে-মিন্টো আইনের দ্বারাই ভারতের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভাগুলিতে প্রথম বেসরকারি সদস্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। এর দ্বারা ভারতে প্রগতিশীল শ্রেণি সরকারের আইন রচনার কাজে অংশগ্রহণের সুযােগ পায়।

[2] শাসনবিভাগে অংশগ্রহণ: মর্লে-মিন্টো আইনের দ্বারা বড়ােলাটের শাসন পরিষদে একজন ভারতীয় সদস্য গ্রহণ করা হয়। এর ফলে সরকারি প্রশাসনে ভারতীয়দের যুক্ত করার ব্যবস্থা করা হয়।

[3] স্বায়ত্তশাসনের সােপান: ভারতে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে মর্লে-মিন্টো আইন। ব্রিটেনের সাংসদ হেনরি কটন এই আইনকে ভারতে স্বায়ত্ত্বশাসন প্রবর্তনের লক্ষ্যে একটি ধীর পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেছেন।

[4] আইনের শাসন: ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তনের আগে ভারতে মােগল যুগ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন প্রচলিত ছিল, তার পরিবর্তে মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন ভারতে সাংবিধানিক রীতিনীতির প্রচলন ও আইনের শাসনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে।