প্রেক্ষাপট: মর্লে-মিন্টো শাসন সংস্কার আইন (১৯০৯ খ্রি.) ভারতীয়দের খুশি করতে পারেনি। কারণ আইনের দ্বারা ভারতে কোনাে দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা গড়ে তােলা হয়নি বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতেও কোনাে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে পরবর্তী কয়েক বছরের পর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ব্রিটিশ ভারতের জনবল এবং অর্থবল ব্যবহার করার প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করে, তাই স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দান করে ভারতীয়দের খুশি করার লক্ষ্যে ব্রিটিশ এক নতুন শাসন সংস্কার আইন প্রবর্তনে উদ্যোগী হয়।

আইনের বিভিন্ন দিক: 

  • [ii] মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের দ্বারা ৭ জন সদস্য নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহক পরিষদ বা বড়ােলাটের শাসনপরিষদ গঠিত হয়। এই ৭ জনের মধ্যে অন্তত ৩ জন সদস্য হবেন ভারতীয়।

  • [iii] কেন্দ্রে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠিত হয়। এর নিম্নকক্ষের নাম হয় কেন্দ্রীয় আইনসভা এবং উচ্চকক্ষের নাম হয় রাষ্ট্রীয় পরিষদ।

  • [iv] এই আইনের মাধ্যমে প্রদেশগুলিতে একদিকে গভর্নরের কার্যনির্বাহক সভা এবং অন্যদিকে প্রাদেশিক মন্ত্রীসভার দ্বৈত শাসনব্যবস্থা চালু হয়।

  • [v] মন্টেগু- চেমসফোর্ড আইনে বলা হয় যে, ভারত-সচিবের কাউন্সিলের সদস্যসংখ্যা ৮ থেকে ১২ জন হবে।

গুরুত্ব: মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের দ্বারা ভারতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের সূচনা হয় এবং ভােটাধিকারের সম্প্রসারণ ঘটে। এই আইনের দ্বারা মন্ত্রীসভাকে তার কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়ী রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এর ফলে ভারতে দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটে।

প্রশাসনে ভারতীয়করণ প্রচেষ্টা: ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে ভারতীয়দের হাতে যে পরিমাণ রাজনৈতিক অধিকার দেওয়া হয়, তা ইতিপূর্বে কোনাে আইনের মাধ্যমেই ভারতীয়দের দেওয়া হয়নি। ঐতিহাসিক টমসন ও গ্যারাট এই আইনের প্রশংসা করে বলেন যে, প্রাদেশিক মন্ত্রীসভায় ভারতীয়দের স্থান দিয়ে ব্রিটিশ সরকার শাসনব্যবস্থায় ভারতীয়করণের পথ প্রস্তুত করে। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, দীনশা ওয়াচা, তেজবাহাদুর সপু, শ্রীনিবাস শাস্ত্রী প্রমুখ নরমপন্থী কংগ্রেস নেতা মন্ট-ফোর্ড-সংস্কার আইনকে স্বাগত জানান। তাদের মতে এই আইন ছিল ভারতে দায়িত্বশীল সরকার গঠনের ক্ষেত্রে এক বাস্তব ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।