বিভিন্ন মনােবিদ বিভিন্ন দিক থেকে মনােযােগের শ্রেণিবিভাগ করেছেন। তবে বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতির উপর নির্ভর করে বেশিরভাগ মনোবিদ মনােযােগের শ্রেণিকরণ করেছেন।

মনােযোগের শ্রেণিবিভাগ


মনােবিজ্ঞানীরা বিভিন্নভাবে মনােযােগের শ্রেণিবিভাগ করেছেন। এগুলির মধ্যে মনােবিদ অ্যাঞ্জেল (Angel) ও মনােবিদ রস (Ross)-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য।

মনােবিদ অ্যাঞ্জেল মনােযােগকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন

(1) বিশ্লেষণমূলক মনােযােগ: যেখানে কোনাে একটি সম্পূর্ণ বস্তুকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তার বিভিন্ন ভাগ অনুযায়ী ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ করা হয়। যেমন—একজন ব্যক্তির শরীরের প্রতিটি অংশ সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা।

(2) সংশ্লেষণমূলক মনােযোগ: যেখানে বস্তুর বিভিন্ন অংশগুলিকে একত্র করে ব্যাখ্যা করা হয়। অর্থাৎ, তার মধ্যে একটা সামগ্রিকতা থাকে।

মনােবিদ রস মনােযােগকে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন

(১) ইচ্ছানিরপেক্ষ মনােযােগ: যে মনােযােগ ব্যক্তির জন্মগত প্রবণতা বা মানসিক সংগঠনের প্রভাবে ব্যক্তির ইচ্ছা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না, সেই মনােযােগকেই ইচ্ছানিরপেক্ষ মনােযােগ বলা হয়। যেমন- খিদের তাড়নায় খাদ্যবস্তুর প্রতি মনােযােগী হওয়া। এটি আবার দু-ধরনের হয়ে থাকে— 

  • প্রবৃত্তিনির্ভর মনােযােগ: সহজাত তাড়নায় ইচ্ছানিরপেক্ষভাবে যখন মনােযােগ আকৃষ্ট হয়, তখন তাকে বলা হয় প্রবৃত্তিনির্ভর মনােযােগ। যেমন— স্নেহের তাড়নায় শিশুর প্রতি মনােযােগ।
  • স্বতঃস্ফুর্ত মনােযােগ: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে মনে একটি স্থায়ী আগ্রহ অর্থাৎ সেন্টিমেন্ট গড়ে ওঠে। এইসব সেন্টিমেন্ট দ্বারা মনােযােগ নিয়ন্ত্রিত হলে তাকে বলা হয় স্বতঃস্ফুর্ত মনােযােগ যেমন—দেশের প্রতি অনুরাগ বা ভালােবাসার জন্য বিদেশে গিয়েও স্বদেশের কোনাে বিষয় দেখলেই তার প্রতি মনােযােগ চলে যায়।

(২) ইচ্ছাসাপেক্ষ মনােযােগ: ইচ্ছাসাপেক্ষ মনােযােগ হল ইচ্ছা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত মনােযােগ অর্থাৎ মানসিক চাহিদা বা তাড়নার প্রভাবে কোনাে বিষয়বস্তুর প্রতি মনােযােগ দেওয়াকে ইচ্ছাসাপেক্ষ মনােযোেগ বলা হয়। যেমন— পরীক্ষার আগে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশােনার প্রতি বেশি মনােযােগ দেয়। ইচ্ছার তীব্রতার সঙ্গে মনােযােগের সম্পর্কের ভিত্তিতে মনােযােগকে দু-ভাগে ভাগ করা হয়েছে— 

  • গুপ্ত মনােযােগ: বিষয়বস্তুর প্রতি একক ইচ্ছা প্রয়ােগে মনােযােগ আকৃষ্ট হলে তাকে বলা হয় গুপ্ত মনােযােগ।
  • ব্যক্ত মনােযােগ: কোনাে বিষয়ের প্রতি বারংবার ইচ্ছাশক্তি প্রয়ােগ করে যে মনােযােগ দেওয়া হয়, তাকে ব্যক্ত মনোেযােগ বলা হয়।

(৩) ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য মনােযােগ: যখন কোনাে বষয়কে আমরা ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে প্রত্যক্ষ করার ফলে মনােযােগ দিই, তখন তাকে বলে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য মনােযােগ।

(৪) বুদ্ধিগ্রাহ্য মনােযােগ: যেসকল বস্তু বা বিষয় চিন্তাসাপেক্ষ সেই বিষয়ের প্রতি মনােযােগকে বলে বুদ্ধিগ্রাহ্য মনােযােগ।

(৫) কেন্দ্রীয় মনােযােগ: যেসকল বিষয় চেতনার কেন্দ্রে অবস্থান করছে তার প্রতি মনােযােগকে বলে কেন্দ্রীয় মনােযােগ।

(৬) প্রান্তীয় মনােযােগ: কোনাে কোনাে সময়ে দেখা যায় চেতনাক্ষেত্রের ক্ষুদ্র অংশের উপর কেন্দ্রীয় মনােযােগ বেশি কিন্তু বাকি অংশের প্রতি সক্রিয় চেতনার অভাব। এই ধরনের অমনােযােগিতাকে বলে প্রান্তীয় মনােযােগ।

(৭) একান্ত মনােযােগ: কোনাে কোনাে সময় কোনাে একটি বিষয়ের প্রতি এত গভীরভাবে মনােযােগ থাকে যে অন্য বিষয়ের প্রতি কোনাে সচেতনতা থাকে না। একে বলে একান্ত মনোেযােগ।

(৮) বিতরিত মনোেযােগ: অনেকক্ষেত্রে  আমরা একসঙ্গে বহু বিষয়ে মনােযােগ দিই, তবে কোনােটিতে গভীর মনোেযােগ থাকে না, এই ধরনের মনােযােগকে বলে বিতরিত মনোেযােগ।


এই শ্রেণিবিভাগটির আলােচনার মাধ্যমে বােঝা গেল মনোেযাগের বিভিন্নতা ও তার গুরুত্ব, যা মানুষের জীবনবিকাশের পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গ্রহণেও সহায়তা করে।