মনােযােগের প্রকৃতি


মনােযােগ শিখনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক। যে-কোনাে ধরনের শিখনের ক্ষেত্রে মনােযােগের প্রয়ােজন হয়। মনােযােগের প্রকৃতি সম্পর্কে মনােবিদদের মধ্যে বিভিন্ন মত দেখা যায়।


➽ ভুন্ড প্রমুখ মনােবিদদের মতে, মনােযােগ মনের জ্ঞানাত্মক দিক। তাঁদের মতে, মনােযােগ হল বিষয়বস্তু সম্বন্ধে স্পষ্ট চেতনা বা জ্ঞান।


➽ অন্যদিকে মনােবিদ জেমস, ওয়ার্ড প্রমুখের মতে, মনােযােগ মনের ক্রিয়াত্মক দিক। কারণ বিশেষ আগ্রহ ও ইচ্ছার জন্যই বিভিন্ন বস্তুর মধ্য থেকে আমরা একটি বস্তুকে নির্বাচিত করি এবং সেটির প্রতি মনােযােগ দিই। আবার অনেক মনােবিদ মনােযােগকে অনুভূতিমূলক বলেছেন।


➽ মনােবিদ টিচেনারের মতে, মনােযােগ জ্ঞানাত্মক ও অনুভূতিমূলক। মনােযােগের দ্বারা যে বিষয়জ্ঞান বা বস্তু চেতনার উদ্ভব হয়, সেটি সুখ অথবা দুঃখ মিশ্রিত হয়। অতএব বলা যায় যে, জ্ঞানমূলক ও ক্রিয়ামূলক উভয় দিকই মনােযােগের মধ্যে বর্তমান। মনোেযােগ এক মানসক্রিয়া যার দ্বারা সুখ ও দুঃখ মিশ্রিত কোনাে বিষয়ে চেতনা স্পষ্ট হয়। আধুনিক মনােবিদগণ মানসিক ক্রিয়া অর্থাৎ ক্রিয়াপদ হিসেবে মনােযােগকে বিবেচনা করেছেন। নীচে মনােযােগের প্রকৃতি আলােচনা করা হল— 

(১) সংরক্ষণ প্রক্রিয়া : মনােযােগ হল সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। আমরা যে বিষয়ের প্রতি মনােযােগ দিই, সেই বিষয়টি আমাদের মনের গভীরে রেখাপাত করে। অন্যান্য সব শর্ত সঠিক অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র যথাযথভাবে মনােযােগ না দেওয়ার কারণে আমরা অনেক বিষয়ই মনের মধ্যে সংরক্ষণ করতে পারি না।

(২) মনােযােগের কেন্দ্রানুগতা : টিচেনারের মতে, চেতনার দুটি স্তর— (A) কেন্দ্রীয় চেতনার স্তর ও (B) প্রান্তীয় চেতনার স্তর। বস্তু যখন কেন্দ্রীয় চেতনার স্তরে অবস্থান করে তখন বস্তু সম্পর্কে আমরা সচেতন হই অর্থাৎ মনােযােগী হই।

(৩) নির্বাচনধর্মী : মনোেযােগ হল একটি নির্বাচনধর্মী প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার সাহায্যে আমাদের মন বিভিন্ন বিষয়ের মধ্য থেকে বিশেষ একটি বিষয় নির্বাচন করে আমাদের সেই বিশেষ বিষয়ের প্রতি মনােযােগী করে তােলে।

(৪) সঞ্চারণশীলতা : মনােযোেগ এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে চলে যায়। একটি বিষয়ের উপর মনোেযােগ বেশি সময় রাখা যায়না, তা পার্শ্ববর্তী বিষয়ে চলে যায়। একেই মনোেযােগের সঞ্চারণশীলতা বলে।

(৫) মানসিক প্রক্রিয়া :মনােযােগ একটি ইচ্ছামূলক মানসিক প্রক্রিয়া। মনােযােগের বিষয়টি চেতনার কেন্দ্রে থাকে।

(৬) সম্বন্ধ স্থাপন : মনােযােগ বিভিন্ন বিষয়বস্তুর মধ্যে একটা সম্বন্ধ স্থাপন করতে সহায়তা করে।


সুতরাং উপরের আলােচনা থেকে মনােযােগ সম্পর্কে এই ধারণা পােষণ করতে পারি যে, মনােযােগ হল এমন একটি ইচ্ছামূলক, নির্বাচনধর্মী, পরিবর্তনশীল ও অনুসন্ধানী প্রক্রিয়া যা বহু বস্তুর মধ্য থেকে কোনাে একটি বিশেষ বস্তুকে চেতনার কেন্দ্রবিন্দুতে হাজির করে।

বুদ্ধির বণ্টন


মানুষের বুদ্ধি যে সমান নয় তা একটি সর্বজনস্বীকৃত লৌকিক অভিজ্ঞতা। সকলেই কিছু না কিছু বুদ্ধি নিয়ে জন্মেছে— এ কথা যেমন সত্য, আবার। সকলের বুদ্ধি যে সমান নয় এ কথাও তেমন সত্য। প্রকৃতির বণ্টনে কারও ভাগে বুদ্ধি বেশি আর কারও ভাগে কম। এই সত্যটুকু আমাদের জানা ছিল না। সেটা জানা সম্ভব হয়েছে একমাত্র বুদ্ধির অভিজ্ঞতার মাধ্যমে।


জনসমাজে বুদ্ধির এই বণ্টনটিকে যদি চিত্রের আকারে দেওয়া যায় তবে আমরা নীচের ছবির মতাে ঘণ্টাকৃতিসম্পন্ন একটি ছবি পাব। অধিকাংশ লােক মাঝামাঝি বুদ্ধিসম্পন্ন বলে চিত্রটির মাঝখানটা উঁচু এবং ফোলা। ক্ষীণবুদ্ধি এবং উন্নত বুদ্ধি লােকদের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম বলে ছবিটি ক্রমশ নীচু ও সংকীর্ণ হয়ে এসেছে। বুদ্ধির বণ্টন সম্পর্কে ব্যক্তিগত বৈষম্য পরিস্ফুট হয়। অনেক ব্যক্তি বা ছাত্রছাত্রীর বুদ্ধি অভীক্ষার দ্বারা পরিমাপ করলে দেখা যায় খুব অল্পসংখ্যক ব্যক্তিই উন্নতবুদ্ধি বা প্রতিভাবান (Superior)।


আবার খুব কমসংখ্যক ব্যক্তি ক্ষীণবুদ্ধিসম্পন্ন। সাধারণ বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিদের বুদ্ধ্যঙ্ক ৯০-১১০ পর্যন্ত। বুদ্ধি ছাড়াও জনসাধারণের মধ্যে এমন আরও অনেক বৈশিষ্ট্য আছে, যেগুলির বণ্টনের রেখাচিত্র নীচের ছবিটির আকার ধারণ করে বলে এই ছবিটিকে স্বাভাবিক বন্টনের চিত্র-ও বলা হয়। দৈর্ঘ্য, জন্মহার প্রভৃতি অনেক মানবীয় বৈশিষ্ট্যের বণ্টনও এই চিত্রের মতাে।

মনােযােগের প্রকৃতি লেখাে। বুদ্ধির বন্টন সম্পর্কে কী জানাে ?
বুদ্ধির বন্টন


বুদ্ধি স্বাভাবিক বন্টনের নিয়ম মেনে চলে। নীচে ছকের মাধ্যমে বুদ্ধ্যঙ্কের বণ্টন দেখানাে হল— 


টারম্যান এবং মেরিল (Terman & Merill) সাধারণের মধ্যে বুদ্ধ্যঙ্কের বণ্টন সম্পর্কিত তালিকা তৈরি করেন।

মনােযােগের প্রকৃতি লেখাে। বুদ্ধির বন্টন সম্পর্কে কী জানাে ?
বুদ্ধ্যঙ্কের বণ্টন সম্পর্কিত তালিকা


বুদ্ধ্যঙ্ক নির্ণয়ের সূত্র :


এই বুদ্ধ্যঙ্ক নির্ণয়ের সূত্রটি হল—

মনােযােগের প্রকৃতি লেখাে। বুদ্ধির বন্টন সম্পর্কে কী জানাে ?


বুদ্ধ্যঙ্ক প্রবর্তন করেন ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে মনােবিজ্ঞানী উইলিয়ম স্টার্ন (William Stern)।