অথবা, নস্তাত্ত্বিক সুখবাদ ও নৈতিক সুখবাদের মধ্যে বৈসাদৃশ্য বর্ণনা কর।
ভুমিকাঃ সুখবাদের সাহায্যে মানুষের কার্যের নৈতিকতা নির্ধারণ করা হয়। মানুষের পরম লক্ষ্য হলাে সর্বাধিক পরিমাণ সুখ অন্বেষণ করা। যে কাজ যত বেশি সুখ দেয় সে কাজ ভালাে এবং যে কাজ দুঃখ দেয় সে কাজ মন্দ বলে বিবেচিত হয়।
মনস্তাত্ত্বিক সুখবাদ ও নৈতিক সুখবাদের মধ্যে বৈসাদৃশ্যঃ মনস্তাত্ত্বিক ও নৈতিক সুখবাদের মধ্যে পার্থক্য নিম্নে তুলে ধরা হলাে-
প্রথমত, মনস্তাত্ত্বিক সুখবাদ অনুসারে মানুষ সব সময় সুখ কামনা করে। অন্যদিকে নৈতিক সুখবাদ অনুসারে মানুষের সব সময় সর্বাধিক পরিমাণ সুখ অন্বেষণ করা উচিত।
দ্বিতীয়ত, মনস্তাত্ত্বিক সুখবাদ অভিজ্ঞতামূলক পর্যবেক্ষণের শিক্ষালব্ধ মানব স্বরূপের বর্ণনা মাত্র। পক্ষান্তরে, নৈতিক সুখবাদ অনুসারে মানুষ কি অন্বেষণ করে, তা নিয়ে জড়িত নয়, বরং মানুষের কি অন্বেষণ করা উচিত তা নিয়ে জড়িত।
তৃতীয়ত, মনস্তাত্ত্বিক সুখবাদ যা ঘটে তার বিবৃতি নিয়ে জড়িত বলে মনস্তাত্ত্বিক সুখবাদ বিবৃত্তিমূলক বিষয় নিয়ে জড়িত। অন্যদিকে নৈতিক সুখবাদ যা ঘটা উচিত তার বিবৃতি নিয়ে জড়িত বলে নৈতিক সুখবাদ ঔচিত্যমূলক বিষয় নিয়ে জড়িত।
চতুর্থত, মনস্তাত্ত্বিক সুখবাদ ও নৈতিক সুখবাদ- এই উভয় মতবাদই সুখকে নৈতিকতার মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করলেও নৈতিক সুখবাদ মনস্তাত্ত্বিক সুখবাদ থেকে অধিকতর উন্নততর।
পঞ্চমত, মনস্তাত্ত্বিক সুখবাদ অনুসারে মানুষ তার স্বভাববশত সর্বাধিক পরিমাণ সুখ কামনা করে থাকে। পক্ষান্তরে, নৈতিক সুখবাদ অনুসারে, সুখের পরিমাণ ও গুণের উপর মানব আচরণের নৈতিক মূল্য নির্ভর করে বলে মানুষের সর্বাধিক পরিমাণ সুখ অন্বেষণ করা উচিত।
ষষ্ঠত, মনস্তাত্ত্বিক সুখবাদ অনুযায়ী সুখ ক্ষীণ ও দুর্বল। অন্যদিকে নৈতিক সুখবাদ অনুযায়ী সুখ খুবই তীব্র ও দীর্ঘ স্থায়ী।
সপ্তমত, মনস্তাত্ত্বিক মতবাদ একটি বস্তুনির্ভর মতবাদ। অন্যদিকে নৈতিক মতবাদ একটি আদর্শনিষ্ঠ মতবাদ।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, মনস্তাত্ত্বিক সুখবাদ ও নৈতিক সুখবাদের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান থাকলেও উভয়রেই কাজের বৈশিষ্ট্য এক ও অভিন্ন। মনস্তাত্ত্বিক সুখবাদের উপর ভিত্তি করে নৈতিক সুখবাদ গড়ে উঠে। মনস্তাত্ত্বিক সুখবাদ অনুসারে মানুষ সর্বাধিক সুখ কামনা করে। নৈতিক সুখবাদ সর্বাধিক অনুসারে মানুষের উচিত সর্বাধিক পরিমাণ সুখ অন্বেষণ করা।
Leave a comment