ইউরােপে মােটামুটিভাবে একাদশ শতকের শেষদিকে এবং দ্বাদশ শতকের প্রথমদিকে গিল্ড বা সংঘগুলির প্রতিষ্ঠা শুরু হয়। ইউরােপে সর্বপ্রথম ব্যবসায়ীদের এবং পরে কারিগরদের গিল্ড প্রতিষ্ঠিত হয়।

[1] ব্যবসায়ীদের গিল্ড: ইউরােপে খ্রিস্টীয় দশম-দ্বাদশ শতাব্দীতে প্রথম ফ্লান্ডার্স, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও জার্মানিতে ব্যবসায়ীদের গিল্ড (Merchant Guild) প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার প্রথম পর্বে ব্যবসায়ী এবং কারিগর—উভয়ই গিল্ডের সদস্য ছিল। পরে তাদের গিল্ড বা সংঘ আলাদা হয়ে যায়।

[2] কারিগরদের গিল্ড: পরবর্তীকালে বিভিন্ন কারিগরি শিল্পের কাজে নিযুক্ত শিল্পী এবং শ্রমিকরাও নিজেদের পৃথক গিল্ড (Craft Guild) প্রতিষ্ঠা করে। সর্বপ্রথম কারিগরদের পৃথক গিল্ড প্রতিষ্ঠিত হয় ইটালিতে। স্বর্ণকার, কর্মকার, চর্মকার, ক্ষৌরকার প্রভৃতি বিভিন্ন পেশার কারিগর, শিল্পী ও শ্রমিকরা নিজেদের পৃথক পৃথক গিল্ড গড়ে তােলে।

মধ্যযুগে বাণিজ্যের প্রসারে ইউরােপের গিল্ডগুলি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিল। এইগুলি হল一

[1] প্রতিযােগিতার অবসান ঘটানো: বিভিন্ন গিল্ড বহিরাগত বণিকদের সঙ্গে প্রতিযােগিতা বন্ধ করার জন্য নিজেদের শহরের বাজারের ওপর একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠা করত। কোনাে বণিক অতিরিক্ত উদ্যোগী হয়ে নিজেদের গিল্ডের অন্য বণিকদের সঙ্গে ব্যাবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করলে গিল্ড তার কার্যকলাপের ওপর রাশ টেনে ধরত।

[2] সততার প্রতিষ্ঠা: গিল্ডগুলি পণ্যদ্রব্যের গুণগত মান বজায় রাখা এবং ব্যবসায় দুর্নীতি প্রতিরােধ করাও ব্যাবসায়িক সততা বজায় রাখার দায়িত্ব পালন করত।

[3] পণ্যের মূল্য: গিল্ডগুলি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরােধ করত ও পণ্যের মূল্য বেঁধে দিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে ব্যাবসায়িক রেষারেষি বন্ধ করত।

[4] কাজ সচল রাখা: কারখানায় কঁচামাল ও শ্রমিকের নিয়মিত জোগান, শ্রমিকের কাজের সময় বেঁধে দেওয়া, কারখানায় কাজের সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখা প্রভৃতি দায়িত্ব গিল্ড পালন করত।

[5] বাণিজ্য সচল রাখা: বাণিজ্যের পণ্য রক্ষা করা, পপ্য চলাচলের পথে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, কাঁচামালের জোগান অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা প্রভৃতির মাধ্যমে গিল্ড বাণিজ্য বিকাশের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছিল।

[6] অন্যান্য পদক্ষেপ: গিল্ডগুলি বাণিজ্যের প্রসারে আরও কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করত। যেমন

  • শিক্ষাদান: উৎকৃষ্ট শিল্প সামগ্রী উৎপাদনের জন্য গিল্ডগুলি শিক্ষানবিশদের শিল্প সংক্রান্ত শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করত।

  • শুল্ক মকুব: আর্থিক লাভ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে শহরের অভ্যন্তরীণ সব ধরনের বাণিজ্য শুল্ক ও কর মকুব করার বিষয়ে গিল্ড উদ্যোগ নিত।

  • পরিদর্শক নিয়ােগ: গিল্ডের নিয়মকানুন সঠিকভাবে মান্য করা হচ্ছে কি না তা দেখার উদ্দেশ্যে গিল্ডগুলি পরিদর্শক নিয়ােগ করত।

উপসংহার: মধ্যযুগের ইউরােপে গিল্ডগুলি বাণিজ্যে সততা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা বাস্তব ক্ষেত্রে যে পুরােপুরি কার্যকর করা সম্ভব হত না তা সমকালীন বিভিন্ন সাহিত্যে পাওয়া যায়।