ভারতে আর্য-অভ্যাগমের পর অনার্যদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ এবং সংমিশ্রণ যুগপৎ চলতে থাকে। তার ফলে প্রভূত পরিমাণ অনার্য ধ্যান-ধারণা, আচার-আচরণ, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং দেব-দেবী আর্য সমাজেও প্রবেশ লাভ করে। এই অনার্য প্রভাবকে স্বাঙ্গীকরণ করে নিয়ে আর্যগণ নতুন ক’রে আবার সাহিত্য রচনায় প্রবৃত্ত হন এবং তারই ফলস্বরূপ অসংখ্য পুরাণ উপপুরাণ রচিত হয়। গৌড়বাঙ্গে তুর্কী-আক্রমণ আবার নতুনভাবে আর্য-অনার্য সমীকরণ প্রক্রিয়া চলতে থাকে। অনার্য প্রভাবের ফলে আর্য তথা উচ্চবর্ণের হিন্দু সমাজে যে সকল নতুন দেব দেবী এবং ভাবধারার অনুপ্রবেশ ঘটে, তাদের যথাযথ মর্যাদাদানের জন্যই রচিত হয়েছিল নানা রকম মঙ্গলকাব্য। অতএব, আমরা বলতে পারি, যে উদ্দেশ্যে যেভাবে সংস্কৃত ভাষায় পুরাণগুলি রচিত হয়েছিল, সেই একই উদ্দেশ্য এবং অনুরূপভাবেই বাংলা ভাষায় মঙ্গলকাব্যসমূহ রচিত হয়েছিল। উভয়ক্ষেত্রে দেবতা এবং ধর্মীয় মনোভাবই প্রধান স্থান অধিকার করলেও এদের মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য কিন্তু আগাগোড়া বজায় রয়েছে।
প্রধানত কোনো কোনো দেবতার মাহাত্ম্য-কীর্তনই পুরাণের এবং মঙ্গলকাব্যের একমাত্র লক্ষ্য বলেই এদের মধ্যে অলৌকিক কাহিনীর পরিবেষণ একান্তই স্বাভাবিক। অবশ্য উভয়ক্ষেত্রেই কাহিনীর বাহনরূপে এই মানবজগৎ থেকেই বিভিন্ন পাত্র-পাত্রীকে গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু পুরাণে এই সব মানব-মানবীরা লৌকিক জগতের অধিবাসী হওয়া সত্ত্বেও যেন সব সময়ই একটি অলৌকিকতার আবরণে মণ্ডিত ছিল, পক্ষাস্তরে মঙ্গল কাব্যে মানব-মানবীরা তো বটেই এমন কি অলৌকিক জগতের অধিবাসী দেব-দেবীরাও কিন্তু মানবিক জীবনরসে অভিসিঞ্চিত ছিলেন। মঙ্গলকাব্যের শ্রেষ্ঠ গবেষক অধ্যাপক আশুতোষ ভট্টাচার্যও একথা স্বীকার করে বলেছেন, “সাধারণভাবে বলিতে গেলে বলিতে পারা যায় যে, পুরাণের লক্ষ্য দেবতা এবং মঙ্গলকাব্যের লক্ষ্য মানুষ। পুরাণ একান্তভাবে অলৌকিকতাশ্রয়ী এবং মঙ্গলকাবা প্রধানত বাস্তবজীবনাশ্রয়ী।’
বাংলা ভাষায় রচিত মঙ্গলকাব্যগুলির মধ্যে কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত ‘অভয়ামঙ্গল’ বা ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যটি নানা কারণেই বিশিষ্টতা অর্জন করেছে। কাহিনীর দিক থেকে যে গ্রন্থটির কোনো অসাধারণত্ব রয়েছে তা নয়, কবিকঙ্কণের প্রতিভার কারণেই এই গ্রন্থটি সমজাতীয় অন্যান্য গ্রন্থ অপেক্ষা অধিকতর আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। অসাধারণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি এবং সহৃদয়তার ফলে কবিকঙ্কণ একটি গতানুগতিক কাহিনির মধ্যেও যে প্রাণসঞ্চার করতে পেরেছেন, তার মূলে রয়েছে তার জীবনরসিকতাবোধ।
যে কোনো মঙ্গলকাব্যেই মূল কাহিনীর আগে একটি দেবখণ্ড যোগ করে অলৌকিক বাতাবরণ সৃষ্টি করা হয়। উদ্দেশ্য, পৌরাণিক দেবদেবীর মাহাত্ম্য কীর্তন দ্বারা পাঠকের মনে একটি বিশ্বাস্যতা ও মোহজাল সৃষ্টি করা এবং সেই সঙ্গে মঙ্গলকাব্যের অনার্য দেবতাকে ঐ পৌরাণিক দেবতার সঙ্গে কোনো না কোনো ভাবে সম্পর্কিত ক’রে পুর্বোক্ত দেবতার কৌলিন্য বৃদ্ধি করা। এইভাবে দেবতাকে লোকমানসে প্রতিষ্ঠিত কাঁরে মূল কাহিনীর সূচনা হয় এবং কাহিনীর মধ্য দিয়ে দেবতার মাহাত্ম্য প্রচার করা হয়। এটিই মঙ্গলকাব্যের সাধারণ রূপ। কবিকঙ্কণ মুকুন্দ কিন্তু তার অসাধারণ প্রতিভা এবং পাণ্ডিত্যের সমন্বয় ঘটিয়ে এই প্রচলিত রীতি থেকে সরে গিয়ে নতুনভাবে অলৌকিক কাহিনীর মধ্যেও সমন্বয় সাধন করেছেন।
সব কবিই দেবখণ্ডে প্রধানত উমা-মহেশ্বরের অলৌকিক কাহিনীকেই গ্রহণ করেছেন। এ বিষয়ে সকল কবিই কালিদাসের ‘কুমারসম্ভব’-এর নিকট অল্পাধিক ঋণী মহাকবি কালিদাসই প্রথম এই স্বর্গীয় কাহিনীকে লৌকিক জীবনের পটভূমিকায় স্থাপন করেছেন,—মুকুন্দ কবি কালিদাসের ধারাটি অনুসরণ করলেও উমা-মহেশ্বরকে একেবারেই নিম্নবিত্ত বাঙালী পরিবারের জীবনরসে অভিসিক্ত করেছেন—কাব্যের বহিরঙ্গে কবিকঙ্কণ কালিদাসের আনুগত্য স্বীকার কাঁরেও অন্তঃচেতনায় তিনি একেবারে সমকালীন জীবনধারার সঙ্গে কাহিনীকে যোগযুক্ত ক’রে দিয়েছেন। “প্রাচীন ভারতীয় এবং মধ্যযুগীয় বাঙ্গালী জীবনের সামাজিক ও মানসিক পার্থক্যহেতু ঊমা-মহেশ্বরের জীবনানুসরণে এই প্রাণহীন গতানুগতিকতা সত্ত্বেও প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্য থেকে মুকুন্দরাম যে প্রেরণা সার্থকভাবে নিজের কাব্যরচনায় নিয়োগ করেছিলেন, তা হল দেবীর রূপচিত্রণে মানবীয় চেতনার আরোপের অবাধ এবং একচ্ছত্র অধিকার…. কালিদাসের শিবদুর্গা কখন যে বাঙ্গালী সমাজে চিরদারিদ্র্য পীড়িত নিম্নমধ্যবিত্ত দম্পতিতে পরিণত হয়েছে, তা যেন আমরা বুঝতেই পারি না।”
দেবতার মাহাত্ম্যকীর্তনের জন্য যে কাব্য রচিত হয়েছে, তাতে অলৌকিকতা তো অবশ্যই থাকবে, কিন্তু তার মধ্যেও যে অলৌকিকতার প্রভাবকে অতিক্রম ক’রে লৌকিক জীবনরসের ধারা চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে প্রবাহিত হয়েছে,–এই কৃতিত্ব সম্পূর্ণত কবিকঙ্কণের প্রাপ্য। চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে প্রধানত দেবখণ্ডেই অলৌকিকতার প্রাধান্য, মুকুন্দ কবি এখানেও কীভাবে জীবনরসকে ফুটিয়ে তুলেছেন, প্রথমেই আমরা তার দিকে নজর দিতে পারি।
দক্ষযজ্ঞে কাহিনীর শুরু। দক্ষ সেই যজ্ঞে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে আমন্ত্রণ জানালেও কন্যা-জামাতা সতী ও মহাদেব রইলেন অনিমন্ত্রিত। কিন্তু তৎসত্ত্বেও সতী পিতৃগৃহে যাবার আগ্রহ প্রকাশ ক’ৱে বলেন—
‘অনুমতি দেহ হর যাইব বাপের ঘর
যজ্ঞমহোৎসব দেখিবারে।’
মহাদেবের বক্তব্য –
‘বিনা নিমন্ত্রণে গেলে হ’বে মাথাকাটা।
আমার প্রসঙ্গে তুমি পাবে বড় খোঁটা।।’
মহাদেব লৌকিক জগতের রীতি অনুযায়ীই তার মনোভাব ব্যক্ত করেছিলেন, কাজেই দেবীও সেইভাবে তার যুক্তি উপস্থাপিত করলেন—
‘সুমঙ্গল সুত্র করে আইনু তোমার ঘরে
পূর্ণ হৈল বৎসর ছয় সাত
দূর কর বিসংবাদ পূরহ মনের সাধ
মায়ের রান্ধনে খাব ভাত।।’
মায়ের হাতের রান্না বাঙালী নারীর জীবনরস দেবীর অস্তরে প্রবাহিত না হ’লে অলৌকিক ‘ শক্তির অধিকারিণী দেবীর মুখ থেকে এমন বাক্য উচ্চারিত হত না। শুধু কি তাই? আরো আছে—
‘পর্বত কন্দরে বসি নাহি পাট পড়শী
সীমস্তে সিন্দুর দিতে সখী …
পিতা বড় পুণ্যবান করিবে অনেক দান
কন্যাগণে করিবে ব্যাভার।’
অলৌকিক স্বর্গীয় কাহিনীতেও এমনভাবেই জীবনরস-রসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়।
পতিনিন্দা শুনে আত্মঘাতী হলেন সতী, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই আবার জন্ম নিলেন হিমালয় গৃহে উমা-পাবতী-রূপে। এ জন্মেও শিবের সঙ্গে তার বিবাহ হ’ল, বিবাহের পর শিব ঘরজামাই হাঁয়ে রইলেন, উমা-মহেশ্বরের দুটি ছেলে হল– কার্তিক আর গণেশ। দীর্ঘদিন উমা-মহেশ্বরের পরিবারটি হিমালয়ের সঙ্গেই যুক্ত রয়েছে, মহেশ্বরের কোনো উপার্জন নেই, আবার উমাও গৃহকর্মে মায়ের কোনো সহায়তা করেন না। এ নিয়ে কোমর বেঁধে মায়ে-ঝিয়ে ঝগড়া শুরু হ’ল। মা মেনকা বলেন—
‘রান্ধি বাড়ি আমার কাকল্যে হৈল বাত।
ঘরে জামাই রাখিয়া জোগাব কত ভাত।’
দেবী দক্ষযজ্ঞে পতিনিন্দা শুনে দেহত্যাগ করেছিলেন, তখনও হয়তো তার কিছুটা দেবত্ব অবশিষ্ট ছিল। কিন্তু উমা-রূপে তিনি সর্বৈব মানবীকন্যা, অলৌকিকতার ছিটেফোঁটাও আর তার মধ্যে ছিল না, তাই তিনিও মায়ের কথায় সমান প্রত্যুত্তর করেন—
‘রান্ধিয়া বাড়িয়া মাতা কত দেহ খোঁটা।
আজি হৈতে তোমার দুয়ারে দিন কাটা।।’
ওঁরা তো রাগ ক’রে চলে গেলেন কৈলাসে। সেখানে শিব ভিক্ষাজীবী হ’য়ে সংসারযাত্রা নির্বাহ করেন। একদিন শিব ভিক্ষায় যাবেন না— ঘরে বসে পরমানন্দে বিশ্রামসুখ ভোগ করবেন। কিন্তু ঘরে একদানা চাল নেই–এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীতে ঝগড়া এবং পরিণামে দু’জনেই গৃহত্যাগে উদ্যত হন।
দেবখণ্ডের প্রধান কাহিনী এটুকুই। কবিকঙ্কণ কিন্তু অলৌকিক এই কাহিনীকে একেবারেই মানবজীবন-রস-ধারায় সিক্ত করে এমন রূপ দিয়েছেন যাতে এর অলৌকিকত্ব একেবারেই চাপা পড়ে গেছে। অবশ্য পুরাণের অনুসরণে কার্ত্তিক-গণেশের জন্মকাহিনীর অলৌকিকত্ব বর্জন করার অধিকার কবির ছিল না এবং কাহিনীটির পরবর্তী অংশেও কিছুটা অলৌকিকত্ব সৃষ্টি না করলে কালকেতু-কাহিনীর উৎপত্তি ঘটে না বলে কবিকে এইটুকু করতেই হবে। যেমন মর্ত্যলোকে দেবীর পূজা প্রচারের জন্য মহাদেব ছলনা ক’রে ইন্দ্রপুত্র নীলাম্বরকে শাপ দিয়ে মর্ত্যলোকে পাঠালেন। কিন্তু এর মধ্যেও ফাঁকে ফাকে যে জীবনরস-রসিকতার পরিচয় রয়েছে, তা’ যে-কোনো সনিষ্ঠ পাঠকের দৃষ্টিতেই পড়ে। যেমন, ইন্দ্রের আদেশে পুত্র নীলাম্বর শিবপূজার জন্য ফুল তুলতে গিয়ে স্বর্গের নন্দনকানন ছেড়ে চলে এলেন মর্ত্যের বিজুবনে। সেখানে এক ব্যাধকে শিকার করতে দেখে তাঁর মনেও জাগে জীবনভোগের প্রতি আগ্রহ, তাই—
‘বসিয়া তরুর তলে ভাসিয়া নয়ন জলে
বিবাদ ভাবেন নীলাম্বর।
হৃদয়ে রহিল শাল বেয়াধ জনম ভাল
কেনে হৈনু ইন্দ্রের কোঙর।।’
মূল কাহিনীতে পশুদের কথোপকথনের যে অপ্রাকৃত জীবনের পরিচয় পাওয়া যায়, এটিকে রূপক-রূপে ভেবে নিলেই এতে আমরা জীবনরসের পরিচয় পেতে পারি। ভালুক যখন বলে—“নিয়োগী চৌধুরী নহি না করি তালুক–তখন এর ওপর মানবরস আরোপ না ক’রে উপায় থাকে না। বস্তুত বনের পশুদের কাতরোক্তিতে ডিহিদার মামুদ সরীফ দ্বারা অত্যাচারিত প্রজাকুলের ক্রন্দনই ধ্বনিত হয়ে ওঠে। কাজেই এখানেও অলৌকিকতার ওপর জীবন-রসের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়।
দেবী চণ্ডীর গোধিকারূপ, দশভূজারূপ ও ষোড়শী কন্যার রূপধারণ এবং কালকেতুর দৈব ধন-প্রাপ্তিতে অলৌকিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। প্রথম দুটি ঘটনা কাহিনীকে গড়ে তুলেছে কাজেই এর পরিবর্তন সম্ভব নয়, কিন্তু ষোড়শী রূপসী রূপে দেবীর আচরণে কিন্তু মানব জীবনেরই প্রতিফলন দেখা যায়। আর কালকেতুর দৈবধন প্রাপ্তিকে কোনো অলৌকিক ঘটনা বলে গ্রহণ না করলেও চলে—কারণ গুপ্তধন প্রাপ্তির সংবাদ বাস্তবে আমরা অনেক সময়ই পেয়ে থাকি।
কালকেতুর গুজরাট নগর-নির্মাণে বিশ্বকর্মার ভূমিকাকেও অলৌকিক ব্যাপার মনে করবার কোনো কারণ নেই। বাস্তব জীবনে অর্থবান ব্যক্তির পক্ষে এরকমভাবে বন হাসিল কাঁরে রাজ্য পক্তন করা খুব একটা অসম্ভব ব্যাপার মনে হয় না। সেই গুজরাট নগরে প্রজা না আসায় চণ্ডী যে কলিঙ্গনগরে ঝড় বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন, তাকে কিন্তু কলিঙ্গের প্রজারাও কোনো অলৌকিক ঘটনা বলে গ্রহণ না ক’রে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলেই মনে করেছিল।
মুরারিশীলকে দেবী একবার স্বপ্নাদেশ করেছিলেন এবং পরে দৈববাণী করেছিলেন। কিন্তু এতে খুব একটা কাজ হয়েছিল বলে মনে হয় না। কারণ মুরারি যদি দেবীর আদেশ মানতো, তবে নিশ্চয়ই সে কালকেতুকে ঠকানোর চেষ্টা না করে প্রথমেই প্রকৃত মূল্য দিয়ে দিতো। কাজেই আংটির লোভেই মুরারি কালকেতুকে যথোচিত মূল্য দিয়েছিল এর পশ্চাতে কোনো অলৌকিক ক্ষমতার প্রকাশ লক্ষ্য করার প্রয়োজন নেই।
কাহিনীর সমাপ্তিতে চণ্ডীর মাহাত্ম্য প্রকাশের সুযোগ ক’রে দেবার জন্যই প্রথমে কালকেতুর কিছু দুর্গতি এবং পরে মুক্তি বিধান হ’ল। এখানেও দেবীর অলৌকিকতার অপরিহার্যতা ছিল না। রাজায় রাজায় যুদ্ধে এমন পরাজয়, বন্দিত্ব এবং মুক্তিলাভ আলাপ-আলোচনার সাহায্যেও হতে পারে। অতএব কবিকঙ্কণের কাব্যে স্থানে স্থানে অলৌকিকতার প্রকাশ থাকলেও সর্বত্র তা অপরিহার্য নয় এবং বহু স্থলেই অলৌকিকতা সত্ত্বেও এর মধ্যে জীবন-বস-রসিকতাই প্রাধান্য লাভ করেছে। দেবমাহাত্ম্য প্রচারের প্রয়োজনে মঙ্গলকাব্যের সৃষ্টি হলেও মানবমহিমাই যে এতে উজ্জ্বলতর হ’য়ে উঠেছে, এ বিষয়ে ডঃ শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘দেবমহিমার খরোজ্জ্বল রৌদ্র ও ডাবাবেগ-বিগলিত ভক্তির স্নিগ্ধ চন্দ্রিকা মানব-জীবনের ওপর পতিত হইয়া উহার মধ্যে নূতন তাৎপর্য ও আকর্ষণীয়তা সঞ্চার করিলেও মানবের সহিত সম্পর্ক স্থাপনের জন্য দেবতার আগ্রহাতিশয্যের সূত্র অনুসরণ করিয়া কবিও সাধারণ মানুষের প্রতি অনিবার্যভাবে আকৃষ্ট হইলেন।”
Leave a comment