ক্ষেত্র বিশেষে ভ্রমণকারীর অভিজ্ঞতার গল্প সুখপাঠ্য হয়ে উঠলে তাকে বলা হয় ভ্রমণ কাহিনি। আর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তথ্য, স্থানিক বিবরণ ইত্যাদি যখন আবেগ অনুভূতির স্পর্শে, ভাষার ঐশ্বর্যে, দার্শনিক জিজ্ঞাসায় ব্যক্তিগত কল্পিত স্তর থেকে উত্তীর্ণ হয় সব মানুষের আস্বাদন ও উপলব্ধির স্তরে তখন তাকে বলা হয় ভ্রমণ উপন্যাস। এ কথা অনস্বীকার্য যে, ভ্রমণ বৃত্তান্ত, ভ্রমণ কাহিনি, ভ্রমণ সাহিত্য, ভ্রমণ উপন্যাস ইত্যাদির একটিকে অন্যটি থেকে নিশ্চিতভাবে পৃথক করে ফেলা অনেক ক্ষেত্রেই অত্যন্ত কঠিন। ভ্রমণ বৃত্তান্তকে যিনি ভ্রমণ উপন্যাস মূল্যে মূল্যবান করতে চান তাঁকে এক নিরপেক্ষ ও সহৃদয় মানসিকতা নিয়ে স্থান-কাল, পাত্র-পাত্রীদের দেখতে হবে। কোনো বিশেষ অঞ্চলের প্রকৃতি, সমাজ ও মানুষের জীবনযাত্রার টুকরো টুকরো ছবির মধ্যেই নিরাসক্তভাবে লেখক দেখবেন ও দেখাবেন সত্য ও সুন্দরকে। তাই ভ্রমণ কাহিনি ও ভ্রমণোপন্যাস বিষয় ও রীতির দিক থেকে সমগোত্রীয়। শুধু ভ্রমণ কাহিনির সঙ্গে লেখকের নিজের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির কল্পিত অভিজ্ঞতা যখন মিলিত হয় তখন তাকে সরাসরি ভ্রমণ কাহিনি না বলে ভ্রমণ উপন্যাস বলা হয়। আসলে দুটি এক মেরুতে অবস্থানরত বস্তু।

উদাহরণ হিসাবে বলা যায় বেশ কিছু খণ্ডে রচিত রম্যানি বীক্ষা গ্রন্থের কথা—এই গ্রন্থের লেখক সুবোধ চক্রবর্তী ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চল পর্বে পর্বে পৃথক খণ্ডে প্রকাশ করেছেন। কিন্তু উপন্যাসের মতো এখানে ভ্রমণের সঙ্গেই কিছু কল্পিত কাহিনি এবং কল্পিত চরিত্রও আছে। এই কারণেই কোনো কোনো সমালোচক তাদের খাঁটি ভ্রমণ কাহিনি না বলে ভ্রমণোপন্যাস (ভ্রমণ + উপন্যাস) হিসাবে অভিহিত করতে চান। অবশ্যই এই নামকরণ কিছুটা বিতর্কিত। আমরা মনে করি ভ্রমণ কাহিনিকে আস্বাদ্য ও উপভোগ্য করে তুলবার জন্য একটা কাহিনি সূত্র তাতে থাকতেই পারে, কিন্তু ভ্রমণ কাহিনির চরিত্র তাতে যেন নষ্ট না হয় সে বিষয়েও তাঁকে সতর্ক থাকতে হবে। অর্থাৎ লেখকের সংযম এবং মাত্রা বোধই ভ্রমণ কাহিনিকে সজীব করে রাখতে পারে।