বৃষ্টির জল বা তুষারগলা জল চুইয়ে ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে ভূত্বকের উপপৃষ্ঠীয় স্তর সম্পৃক্ত হয়ে সৃষ্টি হয় ভৌমজলস্তর। ভৌমজলের পরিমাণ নির্ধারিত হয় অনুস্রাবণের মাত্রার ওপর। অনুস্রাবণের মাত্রা কতকগুলি প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রক ও মানুষের কার্যাবলির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এগুলি হল一

[1] বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও স্থায়িত্ব : বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও বণ্টনের প্রকৃতির ওপর ভৌমজলের পরিমাণ অনেকাংশে নির্ভরশীল। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হলে এবং তা বহুদিন ধরে হতে থাকলে অনুস্রাবণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে, ভৌমজলের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হলে কিংবা অল্প সময় ধরে হলে অনুস্রাবণের মাত্রা কমে যায়। ফলে, ভৌমজলের সঞ্চয়ও কম হয়। শুষ্ক অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম এবং অল্প সময় ধরে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে বলে ওই অঞ্চলে ভৌমজলের সঞ্চয়ও কম।

[2] শিলা বা মৃত্তিকার সচ্ছিদ্রতা ও প্রবেশ্যতা : শিলার খনিজ কণা ও মাটির কণা সংঘবদ্ধভাবে বিন্যস্ত হলেও এদের মধ্যে ফাক বা শূন্যস্থান থেকে যায়। ওই রন্ধ্র ছিদ্রপথ দিয়ে বায়ু, জল প্রভৃতি চলাচল করে। একটি নির্দিষ্ট আয়তন মৃত্তিকায় মােট মৃত্তিকা রন্দ্রের আয়তন ও মৃত্তিকার মােট আয়তনের অনুপাতকে সচ্ছিদ্রতা বলে। শিলার বা মৃত্তিকা রন্দ্রের ব্যাস বড়াে হলে জল সহজে ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে। রন্দ্রের মধ্য দিয়ে জলের চলাচল ক্ষমতাকে শিলা বা মৃত্তিকার প্রবেশ্যতা বলে। শিলা বা মৃত্তিকার সচ্ছিদ্রতা ও প্রবেশ্যতা ভৌমজল সঞ্জয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

[3] ভূমির ঢাল : ভূমির ঢাল বেশি হলে জল দ্রুত হারে নীচের দিকে গড়িয়ে যায়। ফলে ভূপৃষ্ঠের জল চুইয়ে মাটির নীচে বিশেষ প্রবেশ করতে পারে না। ভূমিরটাল কম হলে জল ধীরে ধীরে নীচের দিকে গড়িয়ে যায়। তাই এই অবস্থায় অনুস্রাবণের মাত্রা বাড়ে। ফলে ভূত্বকের উপপৃষ্ঠীয় স্তরে জলের সঞ্চয় বাড়ে।

[4] প্রবেশ্য নিলান্তরের নীচে অগ্রবেশ্য শিলান্তরের অবস্থান : প্রবেশ্য শিলার নীচে অপ্রবেশ্য শিলা অবস্থান করলে জলের নিম্নগামিতা বাধা পায়। ফলে অপ্রবেশ্য শিলার ওপর প্রবেশ্য শিলাস্তরে জল সঞ্চিত হয়ে ভৌমজলের সঞ্চয় বাড়ায়।

[5] বাষ্পীভবন : বাষ্পীভবনের মাত্রা বেশি হলে অনুস্রাবণের মাত্রা কমে। ফলে ভৌমজলের সঞ্চয়ও কমে। বাষ্পীভবনের মাত্রা কমলে ভৌমজলের পরিমাণ বাড়ে।

[6] ভূমি ব্যবহারের প্রকৃতি : কৃষিকাজের ফলে মাটি আলগা হয়, তাই অনুস্রাবণের মাত্রা বেড়ে যায় এবং ভৌমজলের সঞ্চয় বেশি হয়। শহর অঞ্চলে পাকা রাস্তা ও ঘরবাড়ির অবস্থানের জন্য জলের অনুপ্রবেশ ব্যাহত হয়। তাই, এই অঞ্চলে ভৌমজলের সঞ্চয় হয় না বললেই চলে।

ভৌমজলের উৎস

[1] আবহিক জল : বায়ুমণ্ডলের জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ভূপৃষ্ঠে বৃষ্টি, তুষার প্রভৃতি রূপে নেমে আসার পর ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ভৌমজলের ভাণ্ডার গড়ে উঠলে তাকে আবহিক জল (Meteoric Water) বলে। আবহিক জলই ভৌমজলের প্রধান উৎস।

[2] সহজাত জল : জলে নিমজ্জিত পলির স্তুপ পাললিক শিলায় পরিণত হওয়ার সময় সমুদ্র বা হ্রদের কিছু পরিমাণ জল আবদ্ধ হয়ে পড়ে। একে সহজাত জল (Connate Water) বলে।

[3] উৎস্যন্দ জল : ম্যাগমার মধ্যে সঞ্চিত উত্তপ্ত ও খনিজ সমৃদ্ধ জল যখন অগ্ন্যুৎপাতের সময় ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে, তখন তাকে উৎস্যন্দ জল (Juvenile Water) (‘উৎ’ শব্দের অর্থ ‘উত্থান’ এবং স্যন্দ শব্দের অর্থ ক্ষরণ) বলে।

[4] মহাসাগরীয় জল : অনেক সময় সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে সমুদ্রের জল শিলার মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে ভূ-অভ্যন্তরে ভৌমজলের সৃষ্টি করে। একে মহাসাগরীয় বা সামুদ্রিক জল (Oceanic Water) বলে।