পৃথিবীতে যেসকল ভূগঠনকারী প্রক্রিয়া ঘটে থাকে, তাদের পার্থিব প্রক্রিয়া বলে। এইসব প্রক্রিয়া পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে, ভূপৃষ্ঠে ও ভূ-অভ্যন্তরে সৃষ্টি হয় এবং কর্মসম্পাদন করে ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটায়।
মহাকাশ থেকে আগত উল্কার পতনের ফলে ভূপৃষ্ঠে কখনাে কখনাে গর্তের সৃষ্টি হয় এবং ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটে। এই প্রক্রিয়াকে ভূমিরূপ গঠনের মহাজাগতিক প্রক্রিয়া বলে। যেমন—আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা প্রদেশে মিটিওর ক্রেটার (Meteor Crater).
আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে অবলম্বন করে মানুষ নিজেই প্রতিনিয়ত ভূপৃষ্ঠের রূপ বদল করে চলেছে, এই প্রক্রিয়াকে ভূমিরূপ গঠনের মনুষ্যজনিত প্রক্রিয়া বলে। যেমন- নদীতে বাঁধ দেওয়া, পাহাড়ি অঞ্চলে ধাপচাষ প্রভৃতি।
ভূমিরূপ গঠনে পার্থিব প্রক্রিয়ার অন্তর্গত প্রক্রিয়া দুটি – (i) অন্তর্জাত প্রক্রিয়া ও (ii) বহির্জাত প্রক্রিয়া।
পৃথিবী সৃষ্টির সময় ভূপৃষ্ঠে সর্বপ্রথম যেসব ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, তাদের প্রথম ক্রম ভূমিরূপ বলে। যেমন—মহাদেশ ও মহাসাগর।
প্রথম ক্ৰম ভূমিরূপের ওপর অন্তর্জাত প্রক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হওয়া ভূমিরূপকে দ্বিতীয় ক্রম ভূমিরূপ বলে। পর্বতশ্রেণি, সমভূমি, নিম্নভূমি প্রভৃতি এই প্রকৃতির ভূমিরূপের উদাহরণ।
দ্বিতীয় ক্রমের ভূমিরূপের ওপরে বহিজাত প্রক্রিয়ার ফলে গঠিত ভূমিরূপ হল তৃতীয় ক্রমের ভূমিরূপ। যেমন— উপত্যকা, পাহাড়, মালভূমি প্রভৃতি এই ক্রমের ভূমিরূপের উদাহরণ।
যে প্রক্রিয়ায় নদীর ক্ষয়জাত ও পরিবাহিত সমস্ত পদার্থের পুঞ্জীভবন ও সঞ্চয় ঘটে, তখন তাকে আরােহণ প্রক্রিয়া বলে।
ভূত্বকে ধীরভাবে সংঘটিত অন্তর্জাত ভূগাঠনিক আলােড়ন দুই প্রকারের হয়। যথা-মহীভাবক আলােড়ন ও গিরিজনি আলােড়ন।।
ভূত্বকে আকস্মিকভাবে সংঘটিত অন্তর্জাত প্রক্রিয়া দুই প্রকারের হয়। যথা—অগ্নদগম ও ভূমিকম্প।
কার্বোনেশন প্রক্রিয়া মূলত চুনাপাথর ও ফেলস্পার-এর ওপর কার্যকরী হয়।
অক্সিডেশনের ফলে ল্যাটেরাইট এবং লালমাটি সৃষ্টি হয়।
হাইড্রেশনের ফলে সৃষ্ট মৃত্তিকায় লিমােনাইট এবং জিপসামের প্রাধান্য দেখা যায়।
রাসায়নিক আবহবিকার নিরক্ষীয় এবং মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে বেশি দেখা যায়।
একাধিক খনিজের সমন্বয়ে গঠিত শিলায় ক্ষুদ্রকণা বিশরণ দেখা যায়।
উপকূল বরাবর পর্যায়ক্রমে জোয়ারভাটার ফলে শিলা যখন ক্রমান্বয়ে আর্দ্র ও শুষ্ক হয়ে ফেটে যায়, তখন তাকে কলিকরণ বা Slaking বলে।
পর্যায়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী মাধ্যমগুলি হল—নদী, বায়ু, হিমবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ, ভৌমজলপ্রবাহ, ভর সঞ্চলন প্রভৃতি।
পর্যায়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী মাধ্যমগুলি হল—নদী, বায়ু, হিমবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ, ভৌমজলপ্রবাহ, ভর সঞ্চলন প্রভৃতি।
বিশ্বব্যাপী সমুদ্রের জল ধারণক্ষমতার হ্রাসবৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান ও পতনের পরিবর্তনকে ইউস্ট্যাটিক সঞ্চলন বলে।
যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূমিরূপের উচ্চতার হ্রাস ঘটে তাকে অবরােহণ বলে।
ক্ষয়ের শেষ সীমার সাপেক্ষে ভূপৃষ্ঠে সমতলীকরণ পর্যায়ন প্রক্রিয়ায় ঘটে থাকে।
শীতপ্রধান অঞ্চলে ভূমির ওপর সঞ্চিত বিপুল পরিমাণ বরফের স্তূপ অপসারিত হলে নীচের শিলাস্তর চাপমুক্তির কারণে প্রসারিত হয়ে খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যায়, একে সীটিং বলে।
শীতল অঞ্চলে শিলাস্তরের ফাটলে জল ঢুকে বরফে পরিণত হলে ফাটলের আয়তন বাড়ে এবং তার চাপে শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়, একে বলে তুহিন খণ্ডীকরণ।
ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টিতে অন্তর্জাত বল ভূত্বকে অনুভূমিকভাবে কাজ করে।
মহাদেশ গঠনে অন্তর্জাত বল ভূত্বকে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ বরাবর উল্লম্বভাবে কাজ করে।
গিরিজনি আলােড়নের ফলে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি হয়।
গ্রস্ত উপত্যকা ও স্তূপ পর্বত সৃষ্টিতে মহীভাবক আলােড়ন দায়ী।
পার্থিব ভূমিরূপ প্রক্রিয়া বায়ুমণ্ডল, ভূপৃষ্ঠ ও ভূ অভ্যন্তরে সৃষ্টি হয়।
ক্ষয় ও সঞ্চয় কাজের মাধ্যমে নদীর ধীরে ধীরে ভারসাম্য অবস্থায় আসাকে গ্রেড বলা হয়।
পর্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের উঁচু ও নীচু ভূভাগ একটি সাধারণ তল বা পৃষ্ঠে উপনীত হয়।
শিলার কাঠিন্যতার সাথে ভূমির পর্যায়িতকরণের সম্পর্ক ঋণাত্মক। কারণ কঠিন শিলায় প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্ষয়ের পরিমাণ কম হওয়ায় ভূমিভাগ পর্যায়িত হতে পারে না। ফলে ভূপৃষ্ঠের সমতলীকরণ সম্ভব হয় না।
বহির্জাত প্রক্রিয়াসমূহের সম্মিলিত ক্ষয় ও সঞ্জয়কার্যের দ্বারা উঁচুনীচু ভূমিভাগ একটি সাধারণ তল বা পৃষ্ঠে পরিণত হয়, এই সাধারণ তলকে ক্ষয়ের শেষ সীমা বলে। ক্ষয়ের শেষ সীমার সাপেক্ষে ভূপৃষ্ঠের সমতলীকরণ হল পর্যায়ন।
নদী উপত্যকার ঢাল হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে নদীর শক্তি ও বােঝা বহনক্ষমতা কমে গেলে আরােহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়।
আরােহণ প্রক্রিয়ার ফলে নদীর বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ যেমন বদ্বীপ, পলল শঙ্কু, স্বাভাবিক বাঁধ, প্লাবন সমভূমি ইত্যাদি গঠিত হয়।
ভূমির ঢাল, নুড়ি, কাকর, বালির পর্যাপ্ত জোগান, আবহাওয়া ও জলবায়ুগত অবস্থা, ভূমিরূপ ও ভূতাত্ত্বিক গঠন, ভূ-আলােড়ন প্রভৃতি আরােহণ প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রক।
প্রাকৃতিক শক্তির উপস্থিতি, পুঞ্জিত ক্ষয়ের পরিমাণ, আবহবিকারের তীব্রতা ও ব্যাপ্তি, ভূমিরূপের প্রকৃতি, ভূতাত্ত্বিক অবস্থা, আবহাওয়া ও জলবায়ুগত অবস্থা, স্বাভাবিক উদ্ভিদের আচ্ছাদন প্রভৃতি অবরােহণ প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রক।
নদী বক্ষে চর সৃষ্টির ফলে নদীর জল অনেকগুলি শাখায় ভাগ হয়ে প্রতিসারী প্রবাহ সৃষ্টি করলে সঞয়কাজের মাত্রা বেশি হয়।
নদীর শক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে পর্যায়নের অবরােহণ প্রক্রিয়া জড়িত।
অবরােহণ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রকার ক্ষয়জাত ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়।
গ্রানাইট শিলার ফাটল বরাবর আবহবিকার অনেক গভীরে পৌঁছালে টর ও ইনসেলবার্জ ভূমিরূপ গড়ে ওঠে।
আবহবিকারের ফলে উপপৃষ্ঠীয় অংশে লৌহ অক্সাইড জমাট বেঁধে কঠিন ত্বক বা ডুরিক্রাস্ট গঠন করে।
আবহবিকারের ফলে রেগােলিথ সৃষ্টি হয়।
যেসকল পদ্ধতিতে ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ভূমিরূপের পরিবর্তন ও বিবর্তন ঘটে, তাদের একত্রে ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া বলে।
কোনাে কারণে সমস্থিতিক অবস্থার বিঘ্ন ঘটলে অ্যাসথেনােস্ফিয়ারের ওপর বিভিন্ন ভূমিরূপগুলি পুনরায় পূর্বের সমস্থিতিক অবস্থায় ফিরে আসার জন্য যে আলােড়নের সৃষ্টি হয়, তাকে সমস্থিতিক আলােড়ন বলে।
পৃথিবীর অভ্যন্তরে অন্তর্জাত শক্তির মাধ্যমে ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটার পদ্ধতিকে অন্তর্জাত প্রক্রিয়া বলে।
ভূবিপর্যয়ের দুটি উদাহরণ হলভূমিকম্প ও অগ্ন্যুদগম।
ভূপৃষ্ঠে উল্লম্বভাবে ক্রিয়াশীল ভূগাঠনিক আলােড়নকে মহীভাবক আলােড়ন বলে। এই আলােড়নের ফলে মহাদেশ, চ্যুতি, স্তূপ পর্বত প্রভৃতির সৃষ্টি হয়।
ভূপৃষ্ঠে অনুভূমিকভাবে ক্রিয়াশীল ভূগাঠনিক আলােড়নকে গিরিজনি আলােড়ন বলে। এই আলােড়নের ফলে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয়।
মহীভাবক আলােড়ন ভূপৃষ্ঠে উল্লম্বভাবে ক্রিয়াশীল কিন্তু, গিরিজনি আলােড়ন ভূপৃষ্ঠে অনুভূমিকভাবে ক্রিয়াশীল।
ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের বিভিন্ন শক্তির মাধ্যমে ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটার পদ্ধতিকে বহির্জাত বা ভূবহির্জাত প্রক্রিয়া বলে।
ভূত্বকে ধীরভাবে সংঘটিত অন্তর্জাত প্রক্রিয়াকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (i) ভূগাঠনিক আলােড়ন, (ii) সমস্থিতিক সঞ্চলন ও (iii) ইউস্ট্যাটিক সঞ্চলন।
মূলত অবরােহণ এবং আরােহণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূমিভাগের পর্যায়ন ঘটে।
আরােহণ প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক শক্তির সঞ্চয়কার্যের ফলে ভূমিভাগের উচ্চতার বৃদ্ধি ঘটে এবং অবরােহণ প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়কার্যের ফলে ভূমিভাগের উচ্চতা হ্রাস পায়।
আরােহণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত ভূমিরূপগুলি হল- বদ্বীপ, পলিগঠিত সমভূমি, স্বাভাবিক বাঁধ প্রভৃতি।
ক্ষয়, আবহবিকার ও পুঞ্জিত স্বলন অবরােহণে প্রধান ভূমিকা পালন করে।
বহির্জাত প্রক্রিয়াসমূহের সম্মিলিত ক্ষয় ও সঞ্জয়কার্যের মাধ্যমে উঁচুনীচু ভূমিভাগ একটি সাধারণ তল বা পৃষ্ঠে পরিণত হয়। এই সাধারণতল বা পৃষ্ঠই ক্ষয়ের শেষ সীমাকে নির্দেশ করে।
আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানের সাহায্যে শিলা চূর্ণবিচূর্ণ ও বিয়ােজিত হলে, তাকে আবহবিকার বলে।
আবহবিকার তিন প্রকার। যথা- (i) যান্ত্রিক আবহবিকার, (ii) রাসায়নিক আবহবিকার ও (iii) জৈবিক আবহবিকার।
জলবায়ুর উপাদানের পরিবর্তন এবং জৈবিক কার্যাবলির কারণে শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হলে, তাকে যান্ত্রিক আবহবিকার বলে।
উদ্ভিদ ও প্রাণীর দ্বারা ভূপৃষ্ঠের শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হলে বা জীবদেহের পচনের ফলে সৃষ্ট হিউমিক অ্যাসিড দ্বারা শিলার বিয়ােজন ঘটলে তাকে জৈবিক আবহবিকার বলে।
জৈব আবহবিকার দুই প্রকার। যথা- (i) জৈব-যান্ত্রিক আবহবিকার ও (ii) জৈবরাসায়নিক আবহবিকার।
মরু ও মরুপ্রায় অঞলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যান্ত্রিক আবহবিকার প্রাধান্য লাভ করে।
অঙ্গরযােজন বা কার্বোনেশন প্রক্রিয়ার প্রাধান্য চুনাপাথরগঠিত অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়।
মাটিতে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রাণী (যেমন-কেঁচো, ইঁদুর, প্রেইরি কুকুর প্রভৃতি) শিলাস্তরের মধ্যে গর্ত খুঁড়ে এবং উদ্ভিদের শিকড় মাটির মধ্যে প্রবেশ করলে মাটিতে ফাটল সৃষ্টি হয়ে শিলার বিচূর্ণন ঘটে, একে জৈব-যান্ত্রিক আবহবিকার বলে।
জৈব পদার্থ (গাছের পাতা, ফুল প্রভৃতি) রাসায়নিকভাবে বিয়ােজিত হওয়ায় সৃষ্ট জৈবিক অল্প শিলার বিয়ােজন ঘটালে তাকে জৈব রাসায়নিক আবহবিকার বলে।
জৈব-রাসায়নিক আবহবিকারের একটি উদাহরণ হল- উদ্ভিদের শিকড় প্রস্বেদনের সময় কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে, যা মাটিতে অবস্থিত জলে দ্রবীভূত হয়ে কার্বনিক অ্যাসিড তৈরি করে এবং শিলার বিয়ােজন ও বিচূর্ণন ঘটায়।
দুটি বহির্জাত শক্তির নাম নদী ও বায়ুপ্রবাহ।
আবহাওয়ার উপাদান দ্বারা শিলার নিজ স্থানে বিচূর্ণন ও বিয়ােজন হল আবহবিকার। অন্যদিকে, প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা আবহবিকারপ্রাপ্ত শিলার অপসারণ হল ক্ষয়ীভবন।
আবহাওয়ার উপাদান দ্বারা শিলার নিজ স্থানে বিচূর্ণন ও বিয়ােজন হল আবহবিকার, অন্যদিকে, প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা আবহবিকারপ্রাপ্ত শিলা অপসারিত হয়ে ভূমিশিলার উন্মােচন হল নগ্নীভবন।
আবহাওয়ার উপাদান দ্বারা শিলার নিজ স্থানে বিচূর্ণন ও বিয়ােজন হল আবহবিকার। অন্যদিকে, অভিকর্ষের টানে ভূমির ঢাল বরাবর আবহবিকারপ্রাপ্ত শিলার স্থানান্তর হল পুঞ্জিত ক্ষয়।
ইলসেলবার্জ ভূমিরূপ শঙ্কমােচনের ফলে সৃষ্টি হয়।
দুটি অন্তর্জাত শক্তির নাম হল—পাত সঞ্চলন ও ভূ-আলােড়ন।
শিলার ওপর চাপ ও ভারমুক্তি ঘটলে সাধারণত যান্ত্রিক আবহবিকার ঘটে।
বহির্জাত শক্তির (যেমন নদী, বায়ুপ্রবাহ) ক্ষয় ও সঞ্চয় কাজের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠ ভারসাম্যজনিত সমতল অবস্থায় পৌঁছায়, যাকে পর্যায়ন বলে। তাই বহির্জাত প্রক্রিয়াকে পর্যায়ন বলে।
তাপীয় পরিবর্তনের ফলে প্রস্তরই খণ্ডীকরণ, ক্ষুদ্রকণা বিশরণ ও শল্কমােচন প্রক্রিয়ায় সাধারণত শিলার বিচূর্ণীভবন ঘটে।
আবহবিকারের ফলে উপপৃষ্ঠীয় অংশে ফেরাস অক্সাইড ফেরিক অক্সাইডে পরিণত হয়।
উয়তার পরিবর্তনজনিত কারণে শিলাস্তরে উল্লম্ব ও অনুভূমিকভাবে ফাটল সৃষ্টি হয়ে যে যান্ত্রিক আবহবিকার ঘটে তাকে প্রস্তরচাই খণ্ডীকরণ বলে।
একাধিক খনিজ দ্বারা গঠিত শিলাখণ্ড উয়তার পরিবর্তনে। চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যে যান্ত্রিক আবহবিকার ঘটায় তাকে ক্ষুদ্রকণা বিশরণ বলে।
আবহবিকারপ্রাপ্ত শিলা ক্ষয় পেয়ে অপসারিত হলে নীচের আদি শিলা ভূপৃষ্ঠে উন্মােচিত হয় বা দৃশ্যমান হয়, এই উন্মােচনের প্রক্রিয়াই হল নগ্নীভবন।
পুঞ্জিত ক্ষয়কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—ধীর প্রবাহ ও দ্রুত প্রবাহ।
শিলাখণ্ড পিঁয়াজের খােসার মতাে খুলে গিয়ে শল্কমােচন নামক যান্ত্রিক আবহবিকার ঘটায়।
রাসায়নিক আবহবিকারের ফলে শিলার প্রধান খনিজ পরিবর্তিত হয়ে গৌণ খনিজে পরিণত হয়।
উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত আবহবিকারে অধিক কার্যকরী।
কার্বনিক অ্যাসিড শিলার খনিজের সাথে বিক্রিয়া ঘটিয়ে শিলার রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটালে, তাকে কার্বোনেশন বলে।
শিলার খনিজের সাথে অক্সিজেন যুক্ত হয়ে শিলার রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটালে, তাকে জারণ বলে।
শিলা খনিজের সাথে জল যুক্ত হয়ে শিলার রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটালে, তাকে হাইড্রেশন বলে।
জল হাইড্রোজেন (H+) এবং হাইড্রোক্সিল (-OH) আয়নে ভেঙে শিলার খনিজের সাথে যুক্ত হয়ে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটালে, তাকে হাইড্রোলিসিস বলে।
হাইড্রেশন বা জলযােজন প্রক্রিয়ায় খনিজের মধ্যে জল শােষিত হয়ে নতুন খনিজের সৃষ্টি হয়।
Leave a comment