ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলিতে বাজারভিত্তিক উদ্যান কৃষি ও ফল উৎপাদক কৃষি নিম্নলিখিত কারণে উন্নতি লাভ করেছে—

[1] অনুকূল জলবায়ু : ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের জলবায়ু উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ প্রকৃতির। এখানকার বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 50 সেমি থেকে 90 সেমি। বার্ষিক গড় উষ্ণতা 10 °সে. থেকে 25.°সে.। যা ফল ও সবজি চাষের পক্ষে উপযুক্ত।

[2] পর্যাপ্ত জমি : এই অঞ্চলের দেশগুলিতে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি নয়। সেকারণে কৃষিকাজের জন্য পর্যাপ্ত জমি এখানে সহজেই পাওয়া যায়।

[3] দক্ষ শ্রমিক : ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলির কৃষিশ্রমিকরা কৃষিবিদ্যায় যথেষ্ট দক্ষ। তারা আধুনিক কৃষিব্যবস্থার সাথেও ভালােভাবে পরিচিত।

[4] পর্যাপ্ত জলসেচ ব্যবস্থা : বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হলেও পর্যাপ্ত জলসেচ ব্যবস্থা গড়ে ওঠায় কৃষিকাজ উন্নতি লাভ করেছে।

[5] উন্নত প্রযুক্তি : আধুনিক উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি, ভালাে রাসায়নিক ও জৈব সার, উন্নত বীজ, কীটনাশক ইত্যাদি এই দেশগুলির কৃষিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবহার করা হয়।

[6] বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে চাষ : ফল ও সবজি উৎপাদনে এখানে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়। যেসব চাষে অধিক উয়তার প্রয়ােজন হয় সেখানে কাচের ঘর তৈরি করে চাষ করা হয়।

[7] ব্যাপক মূলধন বিনিয়োগ : ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের দেশগুলির বেশিরভাগ দেশই ধনী। সেক্ষেত্রে ফল ও সবজি চাষে মূলধনের বিনিয়ােগের কোনাে অভাব ঘটে না।

[8] উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা : এই দেশগুলির পরিবহণ ব্যবস্থা খুব উন্নত। তাই নিয়মিত সময়েই উৎপাদিত ফল ও সবজি সহজে বাজারে পৌছে দেওয়া যায়।

[9] বিস্তৃত বাজার : ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলির উৎপাদিত ফল, সবজি ও ফুলের অভ্যন্তরীণ বাজার চাহিদার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও চাহিদা যথেষ্ট বেশি।

[10] পর্যান্ত কোল্ড স্টোর : উৎপাদিত ফল, ফুল ও সবজি যাতে সহজে পচে না যায় সেকারণে এই দেশগুলিতে যথেষ্ট পরিমাণে কোল্ড স্টোর গড়ে উঠেছে।

[11] খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উন্নতি : ফল ও সবজি ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ শিল্পের দ্রুত উন্নতি ঘটেছে। এই দেশগুলিতে। ফলে কাঁচা ফল ও সবজির চাহিদা যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল অনুকূল নাতিশীতােয় জলবায়ু, পর্যাপ্ত জমি, দক্ষ শ্রমিক, পর্যাপ্ত জলসেচ, উন্নত প্রযুক্তি, পর্যাপ্ত মূলধনের জোগান, উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা এবং বিস্তৃত বাজার ইত্যাদি কারণে ফল উৎপাদনে খুব উন্নত। এই অঞ্চলের উল্লেখযােগ্য ফল উৎপাদনকারী দেশগুলি হল—ইটালি, ফ্রান্স, স্পেন, তুরস্ক, পােল্যান্ড ইত্যাদি। সারা পৃথিবীতে আপেল উৎপাদনে তুরস্ক, পােল্যান্ড ও ইটালি যথাক্রমে চতুর্থ, পঞ্চম ও সপ্তম স্থান (FAO, 2011) অধিকার করেছে। আবার আঙুর উৎপাদনে সারা পৃথিবীতে ইটালি, ফ্রান্স, স্পেন ও তুরস্ক যথাক্রমে দ্বিতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থান (FAO, 2011) অধিকার করেছে। ফল চাষের এই ব্যাপক প্রসারের জন্যই এই অঞ্চলকে পৃথিবীর ফলের ঝুড়ি বা পৃথিবীর ফলের বাগান’ বলা হয়।

Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)