উভয় গােলার্ধে মহাদেশগুলির পশ্চিম প্রান্তে 30° থেকে 45° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে শুষ্ক গ্রীষ্ম ও আর্দ্র শীতসম্পন্ন জলবায়ু বিরাজ করে। ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশগুলিতে এই জলবায়ুর বিস্তার ও প্রভাব বেশি বলে একে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বলে। এই জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি হল一
উষ্ণতা সক্রান্ত বৈশিষ্ট্য :
-
গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা : এই অঞ্চলে স্থানভেদে গ্রীষ্মকালীন গড় তাপমাত্রা 21 °সে. থেকে 27 °সে. পর্যন্ত হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে আকাশ মেঘমুক্ত থাকে বলে দিনের বেলা বাতাসের তাপমাত্রা থাকে 32 °সে. থেকে 35 °সে.। ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাক্রামেন্টোতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা 45.5 °সে. পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে।
-
শীতকালীন উষ্ণতা : শীতকালে এই অঞ্চলের জলবায়ু মৃদুভাবাপন্ন। মেঘাচ্ছন্নতার কারণে শীতকালে রাত্রিকালীন তাপমাত্রা বিশেষ কমে না। এই অঞ্চলের শীতলতম মাসের উষ্ণতা থাকে 4 °সে. থেকে 10 °সে.।
বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহ সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য :
-
চাপ বলয়ের স্থানান্তর : সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের সঙ্গে সঙ্গে বায়ুচাপবলয়গুলি যথাক্রমে উত্তর ও দক্ষিণে সরে যায়।
-
বায়ুপ্রবাহে তারতম্য : উত্তর গােলার্ধে গ্রীষ্মকালে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু এবং দক্ষিণ গােলার্ধে শীতকালে উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয়। আবার উত্তর গােলার্ধে শীতকালে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে পশ্চিমা বায়ু এবং দক্ষিণ গােলার্ধে গ্রীষ্মকালে আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয়।
-
ঘূর্ণিঝড়ের আগমন : এই অঞ্চলে নিয়মিতভাবে ঘূর্ণিঝড় প্রবাহিত হয় বলে বৃষ্টিপাতের বণ্টন ও প্রকৃতি ঘূর্ণিঝড়ের দ্বারা নির্ধারিত হয়।
-
স্থানীয় বায়ুর অবির্ভাব : এই অঞ্চলের আর-একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল—অসংখ্য ভিন্নধর্মী স্থানীয় বায়ুর আবির্ভাব। গ্রীষ্মকালে এই জলবায়ু অঞ্চলের মধ্য দিয়ে খামসিন, সিরক্কো, ঘিবলি, ব্রিকফিল্ডার প্রভৃতি উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হয়। শীতকালে ফ্রান্সের রােন উপত্যকায় মিস্ট্রাল এবং অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলে বােরা প্রভৃতি শুষ্ক ও শীতল বায়ু প্রবাহিত হয়।
বৃষ্টিপাত সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য :
-
শুষ্ক গ্রীষ্ম ও আর্দ্র শীত : শুষ্ক গ্রীষ্মকাল ও আর্দ্র শীতকাল ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের প্রধান বৈশিষ্ট্য। উত্তর গােলার্ধে সাধারণত ডিসেম্বর মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এবং দক্ষিণ গােলার্ধে মে মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
-
বৃষ্টিপাতের পরিমাণ : এই অঞ্চলে মহাদেশগুলির পশ্চিম প্রান্তে গড়ে 35 সেমি থেকে 90 সেমি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। পশ্চিমা বায়ুর গতিপথে উচ্চভূমি অবস্থান করলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা বেশি হয়—প্রায় 125 সেমি। অ্যাড্রিয়াটিক উপসাগরের পূর্বদিকে ডালমেশিয়ান উচ্চভূমিতে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় 450 সেমি।
-
তুষারপাত : এই অঞ্চলের সর্বত্র তুষারপাত হয় না। এই অঞ্চলের মেরুমুখী প্রান্তে কখনাে কখনাে অতি সামান্য তুষারপাত হয়। এই অঞ্চলের উচ্চভূমিতে তুষারপাতের পরিমাণ বেশি। এই অঞ্চলের অভ্যন্তরভাগে বা নিম্নভূমিতে শীতকালে কখনাে কখনাে তুহিন জমে।
-
ঋতুকালীন আবহাওয়ার বৈচিত্র্য : এই অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল শুষ্ক এবং শীতকাল আর্দ্র। (1) শীতকালে উত্তর গােলার্ধে বায়ুরচাপবলয়গুলি কয়েক ডিগ্রি দক্ষিণে সরে যায়। ফলে ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চল পশ্চিমা বায়ুর দ্বারা প্রভাবিত হয়। ওই সময় মেরুপ্রদেশ থেকে শীতল বায়ুপুঞ্জ এই অঞ্চলে প্রবেশ করলে নাতিশীতােয় ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়। এই ঘূর্ণবাতের কারণে এই অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। (2) গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চলে উচ্চচাপ বিরাজ করে এবং নিম্নগামী বাতাস ক্রমশ উয় হয়ে ওঠে। ফলে, ওই সময় এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ঘটে না, আবহাওয়া উয় ও শুষ্ক প্রকৃতির হয়।
Leave a comment