বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১) বাংলা গদ্যের জনক ও প্রথম যথার্থ শিল্পী। বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিবর্তনের ইতিহাসে তিনি এক উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে আছেন। গদ্যের অবয়ব নির্মাণে তিনি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। গদ্যের অনুশীলন পর্যায়ে তিনি সুশৃঙ্খলা, পরিমিতিবোধ ও ধ্বনিপ্রবাহে অবিচ্ছিন্নতা সঞ্চার করে বাংলা গদ্যকে উৎকর্ষের এক উচ্চতর পরিসীমায় উন্নীত করেন। তাঁর বলিষ্ঠ প্রতিভার স্পর্শে বাংলা গদ্য কৈশোরের অনিশ্চয়তাকে অতিক্রম করে উৎকর্ষের এক উচ্চতর পরিসীমায় উন্নীত হয়। ভাষার সরলতা ও স্নিগ্ধতার জন্য বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যের নানাবিধ সংস্কার করেন। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
- ক. বিরামচিহ্নের যথাযথ প্রয়োগ নির্দেশ করে বিদ্যাসাগর প্রথম বাংলা গদ্যের নিজস্ব রূপটি আবিষ্কার করেন। তিনি
বাক্যকে শ্বাস পর্ব এবং সার্থ পর্ব অনুসারে সাজিয়ে বাক্যের মধ্যে দাঁড়ি, কমা প্রভৃতি বিরামচিহ্নের অজস্র অথচ
পরিমিত ব্যবহার করেন। - খ. গদ্যের অন্তর্নিহিত ছন্দকে আবিষ্কার করে তিনিই প্রথম সুসম বাক্য গঠনরীতি প্রবর্তন করেন। ফলে বাংলা গদ্য হয়ে উঠে সুশ্রাব্য, সরস ও ছন্দোময়।
- গ. তিনিই প্রথম বাংলা গদ্যের পদবিন্যাস রীতি বিশুদ্ধভাবে নির্ধারণ ও প্রয়োগ করেন।
- ঘ. বিদ্যাসাগরের রচনায় গদ্যের অন্তর্নিহিত ছন্দ ও অনুপ্রাসের ব্যবহার সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়। তিনিই প্রথম বাংলা গদ্যে প্রবাদ বা ইডিয়মের সার্থক ব্যবহার করেন। এসব প্রবাদ-প্রবচনের ব্যবহারের ফলে বাংলা ভাষা হয়ে উঠে সরস, সমৃদ্ধ ও আকর্ষণীয়।
- ঙ. বিষয় অনুসারে ভাবগম্ভীর বা লঘুচপল গদ্যভঙ্গির ব্যবহার করে তিনি বাংলা ভাষাকে সহজ গতি ও কার্যকুশলতা দান করেন।
ভাষাকে সরলতা ও স্নিগ্ধতা প্রদানের জন্য বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষার নানাবিধ সংস্কার করেন। বস্তুত শিল্পরস সমন্বিত ভাষা-ভঙ্গিমার প্রথম প্রয়োগকর্তার গৌরব তাঁরই প্রাপ্য। বাংলা পরিণত গদ্যরীতির উন্নয়নে বিদ্যাসাগরের প্রভাব অনস্বীকার্য।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।
Leave a comment