ভাষাবিজ্ঞানে সামগ্রিকভাবে ভাষার গঠন, প্রকৃতি এবং পদ্ধতির বিজ্ঞানসম্মত চর্চা করা হয়। ভাষাবিজ্ঞানে কোনাে একটি বা দুটি ভাষা আলােচিত হয় না, ভাষাবিজ্ঞান সাধারণভাবে ভাষার আলােচনা করে। এ ছাড়াও ভাষার সঙ্গে মনুষ্যসমাজ, মানবমন, মানব-স্নায়ুতন্ত্র, নৃতত্ত্ব, কম্পিউটার ও সাহিত্যের ভাষা প্রভৃতির পারস্পরিক সম্পর্ক, অভিধান-সংকলন প্রভৃতিও ভাষাবিজ্ঞানের আলােচ্য বিষয়। অর্থাৎ ভাষার বিজ্ঞানসম্মত আলােচনাই শুধু নয়, মানবসমাজ ও মানবসভ্যতায় ভাষার কার্যকলাপও ভাষাবিজ্ঞানের আলােচ্য বিষয়।

সাধারণভাবে মানুষ কথ্য ভাষার থেকে লিখিত ভাষাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করলেও ভাষাবিজ্ঞান মূলত কথ্য ভাষাকেই প্রাধান্য দেয়। প্রথমত, লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মানুষ কথা বলে চললেও খুব বেশি হলে ছয়-সাত হাজার বছর আগে মানুষ লিখতে শুরু করেছে। সুতরাং কথ্য ভাষা আদি এবং প্রাচীন এবং লেখ্য ভাষা নবীনতর।

দ্বিতীয়ত, মুখের ভাষাকে যথাযথভাবে লেখার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করা যায় না, তাতে অনেক কৃত্রিমতাও থাকে। তৃতীয়ত, সমগ্র পৃথিবীতে যত ভাষা প্রচলিত আছে, তার অধিকাংশের কোনাে লিখিত রূপ অর্থাৎ লিপি নেই। মাত্র কয়েকটি উন্নত ভাষারই লেখ্য রূপ আছে। চতুর্থত, পৃথিবীর যেসব ভাষার লিখিত রূপ আছে, সেইসব ভাষাভাষীদেরও একটা বড়াে অংশই লিখতে-পড়তে জানে না। এসব কারণে মুখের ভাষাকেই ভাষাবিজ্ঞানীরা প্রকৃত ভাষা বলে মানেন।