প্রশ্নঃ সাক্ষ্য আইনে পক্ষদের চরিত্র সম্পর্কিত সাক্ষ্যের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে কি বিধান আছে? “ভাল চরিত্র শব্দটি শুধুমাত্র সাধারণ খ্যাতিই বুঝায় না, বরং সাধারণ প্রকৃতিকেও বুঝায়”-ব্যাখ্যা কর।
চুরির অপরাধে ‘ক’–এর বিচার হচ্ছে। তার একমাত্র সাজা হয়েছিল চুরির অপরাধে, সে তার ভাল চরিত্র সম্পর্কে সাক্ষ্য দিল না কিন্তু দাবী করলো যে, বাড়ি যাওয়ার পথে রাস্তায় সে উল্লেখিত দ্রব্যটি পেয়েছিল এবং প্রকৃত মালিককে ফেরত দেয়ার জন্য সে দ্রব্যটি নিয়েছিল। এ ঘটনায় ‘ক’-এর খারাপ চরিত্র গ্রহণযোগ্য হবে কিনা যুক্তি প্রদর্শন কর।
উত্তরঃ সাক্ষ্য আইনের ৫৫ ধারার ব্যাখ্যা অনুসারে ‘চরিত্র’ শব্দটির দ্বারা খ্যাতি ও প্রকৃতি বুঝায়। এক ব্যক্তি সম্পর্কে অন্যে যা ধারণা করে তা হচ্ছে সে ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম। কিন্তু প্রকৃতি হচ্ছে এক ব্যক্তির স্বভাব সম্পর্কে অন্য লোকের অভিমত। অর্থাৎ সে লোক শান্ত প্রকৃতির না, বদমেজাজী। ওয়েবস্টারের মতে, চরিত্র হচ্ছে মানুষের স্বভাব বা প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য যা একজনকে অপর লোক হতে স্বতন্ত্র করে। তাই চরিত্র মানুষের একটি বিশেষ সম্পদ।
চরিত্র যদি বিচার্য বিষয় না হয়ে থাকে তবে পক্ষগণের চরিত্র বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান সাধারণত অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে পক্ষগণের চরিত্র বিষয়ক সাক্ষ্য প্রাসঙ্গিক হতে পারে। এই শর্তগুলি আবার দেওয়ানী মামলা ও ফৌজদারী মামলায় এক মামলার পক্ষগণের চরিত্রের প্রাসঙ্গিকতা ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয় বর্ণিত রয়েছে সাক্ষ্য আইনের ৫২ হতে ৫৫ ধারায় এবং সাক্ষীর চরিত্রের প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে বিধান রয়েছে ১৪৫, ১৪৬, ১৫৩ ও ১৫৫ ধারায়।
দেওয়ানী মামলা প্রসঙ্গে ৫২ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তির উপর আরোপিত আচরণের সম্ভাব্যতা বা অসম্ভাব্যতা প্রমাণ করার জন্য তার চরিত্র সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রদান অপ্রাসঙ্গিক, কেননা আদালতের কাজ হলো মামলার বিচার করা সংশ্লিষ্ট লোকের বিচার করা নয়। এই ধারায় আরো বলা হয়েছে যে, অন্যভাবে প্রাসঙ্গিক ঘটনা হতে চরিত্র সম্পর্কে যতটা জানা যায় ততটা প্রাসঙ্গিক। ৫৫ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তির চরিত্র যদি এরূপ হয় যে, তার অনুকূলে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণকালে ইহা প্রভাব বিস্তার করবে, তবে তার চরিত্র প্রাসঙ্গিক ঘটনা।
নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে বাদীর খারাপ চরিত্র প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের পরিমাণকে প্রভাবিত করে;
(১) মানহানির জন্য ক্ষতিপূরণের মামলায় বাদীর খারাপ চরিত্র সম্পর্কিত সাক্ষ্য গ্রহণীয়। কিন্তু খারাপ চরিত্র সম্পর্কে ওজর বা সন্দেহের উপর ভিত্তি করে প্রদত্ত সাক্ষ্য গ্রহণীয় নয়৷
(২) বিবাহের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের মামলায় বিবাদী প্ৰমাণ করতে পারে যে, বাদী খারাপ চরিত্রের লোক কিংবা নিষ্ঠুর প্রকৃতির লোক।
(৩) অভিযুক্ত ব্যভিচারীর বিরুদ্ধে দাবিকৃত ক্ষতিপূরণের মামলায় বিবাদী প্রমাণ করতে পারে; বাদী ব্যভিচারী ছিল বা সে লম্পট চরিত্রের লোক ছিল।
ফৌজদারী মামলা প্রসঙ্গে ৫৩ ও ৫৪ ধারায় বিধান রয়েছে। ৫৩ ধারা মতে অভিযুক্ত ব্যক্তির চরিত্র ভাল এটা একটা প্রাসঙ্গিক ঘটনা। অবশ্য তথ্যের দ্বারা অপরাধ প্রমাণিত হলে তার ভাল চরিত্র সম্পর্কে সাক্ষ্যের কোন গুরুত্ব থাকবে না। কিন্তু যে অপরাধগুলি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় নি, কিংবা যেখানে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে সেক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তির ভাল চরিত্র সম্পর্কিত সাক্ষ্যের বেশ গুরুত্ব থাকে। ভাল চরিত্র প্রাসঙ্গিক হলেও ৫৪ ধারার বিধান মতে আসামীর চরিত্র খারাপ এটা অপ্রাসঙ্গিক। তবে আসামী যদি তার সচ্চরিত্রতা প্রমাণ করার জন্য সাক্ষ্য দেয়, তবে সেক্ষেত্রে তার চরিত্র যে খারাপ তা প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে এবং খারাপ চরিত্র প্রমাণের জন্য সাক্ষ্য দেয়া যায়।
ভাল চরিত্রঃ একজন মানুষের চরিত্র হচ্ছে তার খ্যাতি ও প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য। খ্যাতি বা সুনাম হচ্ছে সেই ব্যক্তি সম্পর্কে অন্য লোকের ধারণা আর প্রকৃতি হচ্ছে কোন লোক সম্পর্কে বক্তা বা লেখকের ব্যক্তিগত ধারণা। ভাল চরিত্র বলতে সাধারণ লোকজনের মধ্যে শুধু সাধারণ খ্যাতি বুঝায় না, তার প্রকৃতি অর্থাৎ তার স্বভাব যেমন, বদমেজাজী বা আমুদে ইত্যাদিও বুঝানো হয়। তাই সাধারণ খ্যাতি ও ভাল স্বভাবের মানুষকে ভাল চরিত্রের অধিকারী বলা যায়।
ঘটনা বিশ্লেষণঃ ‘ক’ এর বিচার হচ্ছে চুরির অভিযোগ। ইতিপূর্বে চুরির অপরাধে একবার তার সাজা হয়েছিল। ইহা তার খারাপ চরিত্রের ইঙ্গিত বহন করে। কিন্তু ভাল চরিত্র দাবি না করলে ৫৪ ধারা অনুযায়ী খারাপ চরিত্রের প্রশ্ন উত্থাপন করা যায় না। ‘ক’ ভাল চরিত্রের লোক বলে দাবি করে নি। কিন্তু দাবি করেছে যে, বাড়ি যাবার পথে রাস্তায় সে উল্লেখিত দ্রব্যটি পেয়েছে এবং প্রকৃত মালিককে ফেরত দেয়ার জন্য সে দ্রব্যটি তুলে নিয়েছে। এরূপ বক্তব্য প্রকারান্তরে ভাল চরিত্রের লোক বলে দাবি করা। তাই তার চরিত্রের খারাপ দিকটা উত্থাপন করার জন্য ৫৪ ধারার ব্যাখ্যা ২ অনুযায়ী পূর্ববর্তী দণ্ডাদেশ প্রাসঙ্গিক হবে।
Leave a comment