ভারী শিল্প
বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভারী শিল্পের সংজ্ঞা দেওয়া যায়―
[1] যে শিল্পের মাধ্যমে ওজনে ভারী বা বিপুল পরিমাণ মূলধন বিনিয়ােগ করে পণ্য উৎপাদিত হয়, তাকে ভারী শিল্প বলে। বৃহৎ নির্মাণশিল্প, রাসায়নিক শিল্প, লৌহ-ইস্পাত শিল্প, ক্রেন বা বুলডােজারের মতাে বড় আকারের যন্ত্রপাতি নির্মাণশিল্প প্রভৃতিকে ভারী শিল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
[2] যে শিল্পে প্রচুর পরিমাণ শ্রমিক কর্মে নিয়ােজিত হয়, তাকে ভারী শিল্প বলা যায়। বৃহৎ যন্ত্রপ্রযুক্তি শিল্প, খনিজ শিল্প প্রভৃতি শিল্পে প্রচুর শ্রমিকের প্রয়ােজন হয় বলে এগুলি ভারী শিল্পের অন্তর্ভুক্ত।
[3] অন্যভাবে বলা যায়, ভারী শিল্প বলতে সেই শিল্পকে বােঝায়, যেখানে উৎপাদিত শিল্পপণ্য সর্বনিম্ন ক্রেতা বা ভােক্তাদের কাছে বিক্রি না করে অন্যান্য শিল্পক্ষেত্রে বিক্রি করা হয়। যেমন—লৌহ-ইস্পাত শিল্পে উৎপাদিত পণ্য বস্ত্রশিল্পের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে।
ভারী শিল্পের বিকাশে বিভিন্ন উদ্যোগ
[1] সরকারি উদ্যোগ: ভারী শিল্প সম্পর্কে সরকারি শিল্পনীতিতে বলা হয় যে, আগে থেকে বেসরকারি মালিকানায় থাকা শিল্পগুলিতে সরকার আপাতত হস্তক্ষেপ করবে না। সরকার মনে করলে ১০ বছর পর এগুলি জাতীয়করণ করতে পারে। তবে নতুন করে এসব ভারী শিল্পে বেসরকারি বিনিয়ােগের অনুমতি দেওয়া হবে না। এসব শিল্পের বিকাশে সরকার নিজে উদ্যোগ নেবে।
[2] মহলানবিশের ভূমিকা: প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর অর্থনৈতিক উপদেষ্টাদের মধ্যে অন্যতম পরিসংখ্যানবিদ প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ ভারী শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। তিনি পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুকে বােঝাতে সক্ষম হন যে, ভারতের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও অগ্রগতির জন্য মৌলিক কিছু ভারী শিল্প গড়ে তােলা খুবই জরুরি। মহলানবিশ আমেরিকা, সােভিয়েত রাশিয়া-সহ ইউরােপের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে সেখানকার ভারী শিল্প সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন এবং ভারতে অনুরূপ শিল্পের প্রসারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব রাখেন।
[3] নেহরুর সমর্থন: মহলানবিশ ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতের পরিকল্পনা কমিশনের কাছে তার পরিকল্পনা পেশ করেন। এতে তিনি দেশে ভারী শিল্পের বিকাশ ও আধুনিক যন্ত্রচালিত শিল্পায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। মহলানবিশের পরিকল্পনাকে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু সমর্থন করেন। ফলে ভারতের পরিকল্পনা কমিশন সেই পরিকল্পনা অনুসারে দেশে ভারী শিল্প ও আধুনিক যন্ত্রচালিত শিল্পায়ন বাস্তবায়িত করার উদ্যোগ নেয়।
[4] শক্তি কমিশন: ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়ােজন ছিল শক্তি উৎপাদন। পরমাণু শক্তির বিষয়ে গবেষণার উদ্দেশ্যে নেহরুর প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন হােমি জাহাঙ্গির ভাবা। তাঁর সভাপতিত্বে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতের শক্তি কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে ‘Development of Atomic Energy’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
[5] ‘CSIR’ প্রতিষ্ঠা: প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ‘Council for Scientific and Industrial Research’ (CSIR)-এর মাধ্যমে সারা ভারতে বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রসার ঘটানাের উদ্যোগ নেন। এই প্রতিষ্ঠান বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রসারের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির উদ্যোগ নেয়।
[6] জাতীয় গবেষণাগার স্থাপন: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিষয়ে গবেষণার জন্য নেহরুর উদ্যোগে সারা দেশে প্রায় ৫০টি জাতীয় গবেষণাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বিষয়ে তাকে বিশেষভাবে সহায়তা করেন শান্তিস্বরূপ ভাটনগর ও কে. এস. কৃষ্মান।
[7] বিদেশি সহায়তা: ভারতে ভারী শিল্পের প্রতিষ্ঠা ও প্রসার ঘটানাের উদ্দেশ্যে ভারত সরকার বিদেশ থেকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। প্রযুক্তিবিদ্যায় উন্নত ও অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী আমেরিকা, সােভিয়েত রাশিয়া সহ ইউরােপের বিভিন্ন দেশ থেকে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা গ্রহণ করা হয়।
[8] কারিগরি প্রশিক্ষণ: ভারী শিল্পের প্রসারের প্রয়ােজনে সরকার যথার্থ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রযুক্তিবিদ তৈরির প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করে। এই উদ্দেশ্যে নেহরুর সরকার বিভিন্ন আই.আই.টি. (Indian Institute of Technology) নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে খড়গপুরে এবং পরবর্তীকালে মাদ্রাজ, বােম্বাই, কানপুর ও দিল্লিতে আই.আই.টি. প্রতিষ্ঠিত হয়।
স্বাধীন ভারতের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার বিবরণ দাও।
স্বাধীন ভারতের তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার বিবরণ দাও।
স্বাধীন ভারতে বিভিন্ন ভারী শিল্পের ধারাবাহিক বিকাশের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
Leave a comment