[1] ক্রিপস প্রস্তাবের ব্যর্থতা: ক্রিপসের প্রস্তাবে ভারতবাসী অনুভব করে যে— ইংরেজ সরকার কখনােই স্বেচ্ছায় তাদেরকে স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেবে না। তাই স্বাধীনতা পেতে হলে সরাসরি ইংরেজদের সঙ্গে সংগ্রামে লিপ্ত হওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনাে পথ নেই।
[2] ব্রিটিশ দমননীতি: শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জবাব হিসেবে ব্রিটিশ সরকার তার সামরিকবাহিনী দ্বারা ভারতবাসীর ওপর যে অকথ্য নির্যাতন, অত্যাচার চালিয়ে আসছিল তাতে ভারতীয়রা বিক্ষুদ্ধ হয়ে মুক্তির পথ খুঁজতে শুরু করেছিল।
[3] দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে প্রয়ােজনের তুলনায় খাদ্যের জোগান কম হওয়ায় মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। চালের খুচরাে দাম বেড়ে হয় ৩০-৩৫ টাকা প্রতি মণ; কেরােসিন, কাপড়, ওষুধপত্র প্রভৃতি দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়ে। এই সুযােগে অসাধু ব্যবসায়ীরা ফায়দা তােলার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার এই অপচেষ্টা আটকাতে তেমন উদ্যোগী হয়নি।
[4] স্বাধীনতার তীব্র আকাঙ্ক্ষা: অসহযােগ, আইন অমান্য আন্দোলন ভারতবাসীর স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে তীব্রতর করে তুলেছিল। ভারতবাসী চেয়েছিল শেষবারের মতাে এক সর্বভারতীয় গণ আন্দোলন গড়ে তুলে ব্রিটিশের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে।
[5] শীর্ষ নেতাদের জঙ্গি মনােভাব: ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে দেশের শীর্ষ নেতাদের জঙ্গি মানসিকতা, বিশেষত গান্ধিজির অনমনীয় মনােভাব আর-একটি গণ আন্দোলনের পটভূমি রচনা করেছিল। গান্ধিজি দেশবাসীর উদ্দেশে ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’ মন্ত্র ঘােষণা করেন। জওহরলাল এ প্রসঙ্গে বলেছেন— “গান্ধিজিকে ইতিপূর্বে আর কখনও এতটা ব্রিটিশবিরােধী হতে দেখা যায়নি।”
জাতীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎগতিতে আন্দোলন ভারতের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। “ইংরেজ তুমি ভারত ছাড়াে” ধ্বনিতে আকাশ বাতাস আলােড়িত হতে থাকে।
[1] বাংলায়: বাংলায় আগস্ট আন্দোলনের মূলকেন্দ্র ছিল কলকাতা, ঢাকা, মেদিনীপুর, হুগলি-সহ বিভিন্ন জায়গা। মেদিনীপুর জেলার তমলুক ও কাথি মহকুমায় এই আন্দোলন সবচেয়ে তীব্ররূপ ধারণ করেছিল। মাতঙ্গিনী হাজরার নাম এই প্রসঙ্গে উল্লেখযােগ্য। তমলুকে গঠিত হয় স্বাধীন তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। এ ছাড়াও দিনাজপুর, বীরভূম, ফরিদপুর, বরিশাল, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান প্রভৃতি জেলাতেও আন্দোলন গণচরিত্র লাভ করে। দিনাজপুরের বালুরঘাটে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
[2] বিহারে: বিহারের মুঙ্গের, ভাগলপুর, মুজাফফরপুর, পূর্ণিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এই আন্দোলন তীব্ররূপ ধারণ করেছিল। ওইসব জায়গায় আন্দোলনকারীরা জাতীয় পতাকা তােলেন। উত্তর ভাগলপুরে এক জাতীয় সরকার গড়ে তােলা হয়। বিহারের ১০টি জেলার অন্তত ৮০ শতাংশ থানা বিদ্রোহীদের দখলে চলে যায়। জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে এবং সিয়ারাম ও পরশুরাম নামক দুই বৈপ্লবিক দলের প্রভাবে আন্দোলন চরমে পৌছােয়।
[3] যুক্তপ্রদেশে: যুক্তপ্রদেশের বালিয়া, আজমগড়, সুলতানপুর, জৌনপুর, গােরক্ষপুর প্রভৃতি জেলায় গান্ধিজির ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’ ধ্বনি জনগণকে স্বাধীনতালাভে ব্যাকুল করে। বালিয়া জেলায় চিতু পাণ্ডের নেতৃত্বে জাতীয় সরকার গড়ে ওঠে।
[4] ওড়িশায়: ওড়িশার বালেশ্বর, তালচের, কোরাপুট, কটকে বিক্ষিপ্তভাবে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলনের পুরােভাগে ছিল ছাত্ররা। কোরাপুটে লক্ষ্মণ নায়েকের নেতৃত্বে উপজাতি কৃষকরা সক্রিয় হয়। তালচেরে ‘চাব্বি মল্লা রাজ’ কায়েম হয়।
[5] অন্যান্য অঞ্চলে: মধ্যপ্রদেশের নাগপুর, অমরাবতী, বান্দ্রা, বেতুল ছিল এই আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র। মদনলাল বাগড়ি নাগপুর ‘হিন্দুস্থান রেড আর্মি গঠন করেন। আসামের গােয়ালপাড়া, তেজপুর, বরপােতা অঞ্চলে, কেরলের কালিকটে, মাদ্রাজের মাদুরায় এই আন্দোলনের রেশ ছড়িয়ে পড়ে।
Leave a comment