রাজনৈতিক অবস্থা:
হর্ষবর্ধনের মৃত্যু উত্তর ভারতের রাজনীতিতে কেন্দ্রীকরণের সম্ভাবনা শেষ করে দেয়। অতঃপর কনৌজকে কেন্দ্র করে বাংলার পালবংশ, উত্তর ভারতের গুর্জর-প্রতিহারবংশ এবং দাক্ষিণাত্যের রাষ্ট্রকুটবংশের মধ্যে দীর্ঘ প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়। অষ্টম শতকের শেষ থেকে নবম শতকের শেষ পর্যন্ত প্রায় একশো বছরের বেশি এই ত্রিপাক্ষিক সংঘর্ষ চলেছিল। বাংলার পালরাজা ধর্মপাল প্রাথমিক পর্বে সাফল্যলাভ করেন। কিন্তু উত্তর ভারত থেকে প্রতিহাররাজ বৎস অভিযান চালিয়ে ধর্মপালকে পরাস্ত করেন। কিন্তু দাক্ষিণাত্য থেকে রাষ্ট্রকুটরাজ দাক্ষিণাত্যে ফিরে গেলে ধর্মপাল কনৌজসহ উত্তর ভারতে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার সুযোগ পান। পালরাজা দেবপাল, প্রতিহাররাজ মিহিরভোজ এবং রাষ্ট্রকুটরাজ তৃতীয় গোবিন্দ একইভাবে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যান। এই দীর্ঘস্থায়ী ত্রিশক্তি সংঘর্ষ উত্তর ভারতের রাজনীতিতে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলার জন্ম দেয়। কারণ এই সংঘর্ষে তিনটি রাজ্যেরই বিপুল অর্থ ও শক্তিক্ষয় ঘটেছিল।
হর্যের গৌরবদীপ্ত শাসনের পরে কনৌজসহ উচ্চগাঙ্গেয় উপত্যকা অঞ্চলে যে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছিল, অষ্টম শতকের গোড়ার দিকে যশোবর্মনের নেতৃত্বে তার সাময়িক অবসান ঘটে। সুযোদ্ধা, সুশাসক এবং সংস্কৃতিমনা যশোবর্মনের নেতৃত্বে কনৌজ আবার তার হৃতগৌরব ফিরে পায়। এই সময়ে কনৌজের গুরুত্ব বর্ণনা প্রসঙ্গে জনৈক ঐতিহাসিক লিখেছেন : “পশ্চিম-এশীয় দেশগুলির কাছে ব্যাবিলন, টিউটন জাতির কাছে রোম এবং পূর্ব ও দক্ষিণ ইউরোপের কাছে বাইজানটাইন মধ্যযুগে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তেমনি অষ্টম ও নবম শতকে উত্তর ভারতের উঠতি রাজ্যগুলির কাছে কনৌজ ছিল গুরুত্বপূর্ণ।”
কনৌজের ভৌগোলিক অবস্থান তাকে এই আর্থরাজনৈতিক গুরুত্বের গরিমায় ভূষিত করেছিল। যাই হোক্, যশোবর্মনের নেতৃত্বে কনৌজের রাজ্যসীমা এক সময় পূর্বে বাংলা থেকে উত্তর-পশ্চিমে থানেশ্বর ও পূর্ব পাঞ্জাব পর্যন্ত, এবং উত্তরে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণে নর্মদার তীর পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছিল। শোনা যায়, কাশ্মীররাজ মুক্তাপীড়ের সাথে মিলিতভাবে যশোবর্মন তিব্বতের বিরুদ্ধে এক অভিযান পাঠিয়েও কিছুটা সাফল্য পেয়েছিলেন। বিদ্যানুরাগী হিসেবেও তাঁর সুনাম ছিল। কথিত আছে, প্রখ্যাত সংস্কৃত নাট্যকার এবং ‘উত্তর-রামচরিত’এর রচয়িতা ভবভূতি যশোবর্মনের রাজসভা অলংকৃত করেছিলেন। কিন্তু যশোবর্মনের বংশধররা ছিলেন দুর্বল ও প্রতিভাহীন। তাঁদের আমলে কনৌজ বিশৃঙ্খলা-জর্জরিত হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত প্রতিহাররাজ নাগভট্ট কনৌজ দখল করে সেখানে প্রতিহার শাসনের সূচনা করেন। গুর্জর-প্রতিহার মিহিরভোজ (৮৩৫/৪০-৯০ খ্রিঃ) এবং প্রথম মহেন্দ্রপালের (৮৯০-৯১০ খ্রিঃ) আমলে কনৌজ যথেষ্ট শক্তিশালী রাজ্যে পরিণত হয়। মিহিরভোজ পাঞ্জাব, রাজপুতানা এবং যুক্তপ্রদেশের কিছু অংশ কনৌজের সাথে যুক্ত করতে সক্ষম হন। কিন্তু মহীপালের আমলে কনৌজ আবার দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রাষ্ট্রকুটরাজ তৃতীয় ইন্দ্রের কাছে মহীপাল চূড়ান্তভাবে বিপর্যস্ত হন (৯১৬ খ্রিঃ)। মহীপাল হৃতরাজ্য পুনর্দখল করতে পারলেও রাজ্যের অবক্ষয় রোধ করতে পারেননি। সেই অবক্ষয়ের চরম পরিণতি ঘটে ১০১৮ খ্রিস্টাব্দে, যখন গজনির সুলতান মামুদ কনৌজের সীমান্তে উপস্থিত হলে কনৌজের রাজা রাজ্যপাল সামান্যতম প্রতিরোধের পরিবর্তে অত্যন্ত অপমানজনক শর্তে মামুদের বশ্যতা স্বীকার করে নেন। ১০৯০ খ্রিস্টাব্দে কনৌজে প্রতিহারবংশের শাসনের অবসান ঘটে এবং সেখানে শুরু হয় গাহড়বালবংশীয় রাজপুতদের শাসন।
খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে স্বাধীন রাজ্য হিসেবে কাশ্মীরের উত্থান ঘটে। কার্কোত-বংশীয় দুর্লভবর্ধন এখানে এক শক্তিশালী হিন্দু শাসনের সূচনা করেন। এই বংশের রাজা ললিতাদিত্য মুক্তাপীড়ের আমলে (৭২৫-‘৫২ খ্রিঃ) কাশ্মীর যথেষ্ট শক্তিশালী রাজ্যে পরিণত হয়। মুক্তাপীড় ৭৪০ খ্রিস্টাব্দে কনৌজরাজ যশোবর্মনকে পরাজিত করে তাঁর বশ্যতা আদায় করেন। তিব্বতের বিরুদ্ধেও তিনি অভিযান প্রেরণ করেন। কলহনের গ্রন্থে ললিতাদিত্যের কৃতিত্ব ও বিজয়কাহিনি সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে। তাঁর আমলেই প্রসিদ্ধ মার্তণ্ড ‘সূর্য-মন্দির নির্মিত হয়। চিনের সম্রাটের সাথেও ললিতাদিত্যের সুসম্পর্ক ছিল। ললিতাদিত্যর উত্তরসূরি জয়াপীড়ের আমলে সিন্ধুদেশে আরব-আক্রমণ ঘটেছিল। নবম শতকে কার্কোত-বংশের পতন ঘটে এবং সেখানে উৎপল-বংশের শাসন শুরু হয় (৮৫৫ খ্রিঃ)। এই বংশের দুজন দক্ষ শাসক ছিলেন অবম্ভীবর্মন এবং শংকরবর্মন। শংকরবর্মনের মৃত্যুর পর (৯০২ খ্রিঃ) উৎপল-বংশ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত একটি স্থানীয় মুসলমান-বংশ কাশ্মীরের শাসনক্ষমতা দখল করে নেয় (১০৩৯ খ্রিঃ)। ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে বাবরের নিকটাত্মীয় তথা প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ মির্জা হায়দার দখলত কাশ্মীর-উপত্যকায় নিজ কর্তৃত্ব স্থাপনে সক্ষম হন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর (১৫৫১ খ্রিঃ) পুনরায় কাশ্মীরে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা গ্রাস করে। শেষ পর্যন্ত সম্রাট আকবরের আমলে কাশ্মীর মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
প্রতিহার-রাজ্য খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যাওয়ার পর উত্তর ভারতে বেশ কয়েকটি রাজপুত রাজ্যের উদ্ভব হয়। রাজপুত জাতির উৎপত্তি ও উত্থান সম্পর্কে নানা মত আছে। সম্ভবত, এরা বিদেশি এবং ব্রাহ্মণরা বিশেষ প্রয়োজনে এদের ক্ষত্রিয়ের মর্যাদা দিয়েছে এবং রাজবংশসম্ভূত বলে স্বীকার করে নিয়েছে। অধিকাংশ পণ্ডিতের মতে, রাজপুতরা হুনদের বংশধর। ড. রোমিলা থাপারের মতে, হুনদের আক্রমণের সময় আরও যেসব বিভিন্ন উপজাতির লোক ভারতে প্রবেশ করেছিল; এবং পরে উত্তর ও পশ্চিম ভারতে বসতি স্থাপন করেছিল, রাজপুতরা তাদের বংশধর। রাজপুতের মধ্যে ‘সংকর-গোষ্ঠীর উপাদান থাকার সম্ভাবনাই প্রবল। যাই হোক, আলোচ্য পর্বে উত্তর ভারতে উদ্ভূত রাজপুত রাজ্যগুলির মধ্যে চারটি গোষ্ঠী বিশেষ সম্মান দাবি করত। এরা হল প্রতিহার (বা পরিহার), চৌহান (চাহমান), শোলাঙ্কি (বা চৌলুক্য,—এরা দাক্ষিণাত্যের চালুক্যদের কেউ নয়) এবং পরমার (বা পাওয়ার) বংশ। আবু পাহাড়ের যজ্ঞের আগুন থেকে উদ্ভূত এই পৌরাণিক দাবি অনুযায়ী এরা নিজেদের ‘অগ্নিকুল’ গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত মনে করত। প্রাক্তন প্রতিহার সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তূপের ওপর এরা নিজেদের রাজ্য গড়ে তোলে। প্রতিহাররা দখল করে দক্ষিণ রাজস্থান। কাথিয়াবাড়ে শোলাঙ্কিরা। মালব দখলে থাকে পরমারদেব, এবং চৌহানরা দিল্লির দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে কর্তৃত্ব স্থাপন করে।
শোলাঙ্কি-বংশীয় মূলরাজা আনুমানিক ৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটের অনহিল পাটকে স্বাধীন শাসনের সূচনা করেন। ইতিপূর্বে এরা সম্ভবত গুর্জরদের অধীনস্থ সামন্ত ছিল। মূলরাজা ছিলেন সুযোদ্ধা। তিনি আবুর পরমারদের পরাজিত করেন এবং সিন্ধু, কচ্ছ এবং কাথিয়াবাড়ের বন্হলিদের মিলিত জোটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বীরত্ব প্রদর্শন করেন। তিনি সিদ্ধাপুরে ‘রুদ্র-মহালয়’-এর বিখ্যাত শিবমন্দির নির্মাণ করেন। মূলরাজের মৃত্যুর পর (৯৯৫ খ্রিঃ) তাঁর পুত্র চামুণ্ডারাজা সিংহাসনে বসেন। তাঁর আমলে মালবের পরমারদের সাথে শোলাঙ্কিবংশের বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করে। অতঃপর সিংহাসনে বসেন যথাক্রমে বল্লভরাজা, দুর্লভরাজা এবং প্রথম ভীম। গজনির সুলতান মামুদ যখন গুজরাট আক্রমণ করে সোমনাথের মন্দির লুণ্ঠন করেন, তখন ভীম কোনোপ্রকার বাধাদানের পরিবর্তে আত্মগোপন করে নিজ নামকে কলঙ্কিত করেন। শোলাঙ্কিবংশের পরবর্তী রাজা তথা ভীমের পুত্র জয়সিংহ (১০৯৩ (১১৪২ খ্রিঃ) ছিলেন নানা গুণের অধিকারী। তিনি ‘সিদ্ধারাজা’ নামেই অধিক পরিচিত। তিনি মালব, গিরনার, আজমির প্রভৃতি রাজ্য আক্রমণ করে তাদের বশ্যতা আদায়ে সফল হয়েছিলেন। বিদ্যা ও বিদ্বানের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধাবোধ ছিল। পরবর্তী শাসক কুমারপালও ছিলেন সুযোদ্ধা ও সংস্কৃতিমনা। মালব ও রাজপুতানার কিছু অংশ তিনি গুজরাটের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। শোলাঙ্কিবংশের শেষ স্বাধীন রাজা ছিলেন কর্ণ। ১৩১০ খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিনের সেনাপতি মালিক কাফুর কর্ণকে পরাজিত করে গুজরাটে মুসলমান শাসনের সূচনা করেন।
খ্রিস্টীয় নবম শতকে জনৈক কৃষ্ণ রাজা (বা উপেন্দ্র) মালবে পরমারবংশের কর্তৃত্ব স্থাপন করেন। প্রথমে পরমাররা কনৌজের প্রতিহারদের সামন্ত ছিলেন। দশম শতকের শেষদিকে এই বংশের দ্বিতীয় শিয়াক স্বাধীন শাসনের সূচনা করেন। এঁদের রাজধানী ছিল উজ্জয়িনী। পরমারদের সাথে সীমান্তবর্তী রাজ্য চেদির কলচুরি, মহাবার চন্দেলা, গুজরাটের শোলাঙ্কি এবং দাক্ষিণাত্যের চালুক্যদের যুদ্ধবিগ্রহ ছিল নিত্য ঘটনা। পরমারবংশের শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন ডোজ (১০১০-৬০ খ্রিঃ)। সুযোদ্ধা ও শিক্ষানুরাগী হিসেবে তিনি বিশিষ্টতা অর্জন করেছিলেন। ভোজের মৃত্যুর পর পরমারবংশ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং চতুর্দশ শতকের প্রথম দশকে এই রাজ্য তুর্কি শাসনের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
দিল্লির দক্ষিণ-পশ্চিমে সম্ভর বা শাকম্ভরীত স্বতন্ত্র শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলে চৌহানবংশ। আজমির ছিল সম্ভরের অন্তর্গত একটি অঞ্চল। চৌহানবংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে চতুর্থ বিগ্রহরাজা’র নাম পাওয়া যায়। তিনি বিশালদেব চৌহান নামেও পরিচিত ছিলেন। সাহসী ও সুযোদ্ধা বিশালদেব মুসলমানদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে চৌহানবংশের শাসন উত্তরে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণে বিন্ধ্য পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। শিক্ষানুরাগী হিসেবেও তাঁর খ্যাতি ছিল। তাঁর রাজসভাসদ কর্তৃক ললিতবিগ্ররাজ এবং হরকেলি নামক দুটি বিখ্যাত নাটক রচিত হয়েছিল। আজমিরে তিনি একটি উচ্চ-বিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠা করেন। চৌহানবংশের সর্বাধিক কীর্তিমান শাসক হিসেবে পৃথ্বীরাজ চৌহানের নাম ইতিহাসে স্মরণ করা হয় (১১৭৮-‘৯২ খ্রিঃ)। ১১৮২ খ্রিস্টাব্দে তিনি চান্দেলা-রাজ্য আক্রমণ করে মহাবার নিকট রাজা পরমলকে পরাজিত করেন। ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ ঘুরির বিরুদ্ধে পৃথ্বীরাজ রাজপুত রাজাদের একটি জোট গঠন করেন। তরাইনের প্রথম যুদ্ধে তিনি মুসলমানদের পরাজিত করতে সক্ষম হন। অবশ্য পরের বছরেই ঘুরির কাছে তিনি পরাজিত হয়ে বশ্যতা স্বীকার করেন। তবে অল্পদিনের মধ্যেই ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে তাকে হত্যা করা হয়। এর অল্পদিনের মধ্যেই দিল্লি ও আজমির তুর্কি শাসনের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
সূর্য বা চন্দ্রবংশোদ্ভূত আরও কয়েকটি রাজপুতগোষ্ঠী পশ্চিম ও উত্তর ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করেছিল। এদের মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল বুন্দেলখণ্ডের চন্দেলবংশ এবং চেদির (মধ্যপ্রদেশ) কলচুরিবংশ। চান্দেলারা প্রথমে কনৌজের প্রতিহারদের সামন্ত হিসেবে এই অঞ্চল শাসন করতে থাকে। খ্রিস্টীয় নবম শতকের শেষদিকে নান্নুক চান্দেলা প্রথম স্বাধীনভাবে শাসন শুরু করেন। হর্ষ চান্দেলা (৯০০- ২৫ খ্রিঃ) রাষ্ট্রকুটরাজ ইন্দ্রের বিরুদ্ধে কনৌজের প্রতিহার রাজের পক্ষে যুদ্ধ করে নিজের সামরিক দক্ষতার পরিচয় দেন। চৌহানবংশের রাজকন্যার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের ফলে চান্দেলাদের হাত শক্ত হয়। হর্যের পুত্র যশোবর্মন এবং পৌত্র খাঙ্গার আমলে চান্দেলাবংশ যথেষ্ট প্রতিপত্তির অধিকারী হয়েছিল। যশোবর্মন কনৌজের শাসককে পরাজিত করে এবং ধাঙ্গা গজনির সুলতান সবুক্তগীনের বিরুদ্ধে রাজপুতদের জোটের নেতৃত্ব দিয়ে সুনাম অর্জন করেন। ধাঙ্গার পুত্র গণ্ডও যুদ্ধ দ্বারা রাজ্যবিস্তার নীতি অনুসরণ করতে থাকেন। গণ্ডর মৃত্যুর পর চান্দেলাবংশের সাথে প্রতিবেশী রাজপুত রাজ্যগুলির দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ চলতে থাকে। চেদির কলচুরিদের হাতে চান্দেলারাজ পরাজিত ও রাজ্যচ্যুত হন। অবশ্য ব্রাহ্মণ মন্ত্রী গোপালা’র সাহায্যে শীঘ্রই তা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন। মদনবর্মনের আমলে (১১২৯-‘৬৩ খ্রিঃ) চান্দেলাবংশ আবার হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার করে। পরবর্তী শাসক পরমারদিদেব-এর আমলে দিল্লির চৌহানবংশের সাথে চান্দেলাদের তীব্র বিরোধ শুরু হয় এবং এবং চৌহান পৃথ্বীরাজের হাতে তিনি চূড়ান্তভাবে পরাজিত হন (১১৮২ খ্রিঃ)। এই অপমানের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য পৃথ্বীরাজ ও মহম্মদ ঘুরির সাথে যুদ্ধের কালে পরমারদিদেব পৃথ্বীরাজকে সাহায্য দিতে অস্বীকার করেন। তবে ১২০২ খ্রিস্টাব্দে তিনি নিজেই ঘুরির সেনাপতি কুতুবউদ্দিনের হাতে বিধ্বস্ত হন। অতঃপর চান্দেলাদের শক্তির ক্রম-অবক্ষয় শুরু হয়।
দিল্লির নিকটবর্তী বর্তমান হরিয়ানা অঞ্চলে ছিল রাজপুত তোমরবংশের শাসন। এরাও প্রথমে প্রতিহারদের সামন্ত ছিল। তোমররা ৭৩৬ খ্রিস্টাব্দে ধিল্লিক শহর প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে এটিই ‘দিল্লি’ শহর নামে পরিচিত।
এই যুগে কামরূপ বা আসামে একটি পার্বত্য রাজ্য গড়ে উঠেছিল। ড. থাপার এর মতে, “পূর্ব ভারতের সাথে তিব্বত ও চিনের বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে কামরূপ ক্রমশ স্বাধীন রাজ্যে রূপান্তরিত হয়েছিল।” ত্রয়োদশ শতকে শান উপজাতিভুক্ত অহোমরা কামরূপের অনেকটা দখল করে নেয়। পরবর্তীকালে এদের নামানুসারে এই অঞ্চল ‘আসাম’ নামে পরিচিত হয়।
নবম শতকে কাবুল উপত্যকা ও গান্ধার অঞ্চলে শাহীক নামক যে মুসলিমবংশ শাসন করত, তাদের জনৈক ব্রাহ্মণ মন্ত্রী সেখানে ক্ষমতা দখল করে হিন্দুশাহীবংশের শাসনের সূচনা করেন। উত্তর ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যবর্তী আটক অঞ্চলে এই হিন্দুশাহী রাজ্যের প্রতিষ্ঠা ঘটে। এই বংশের জয়পাল পাঞ্জাব পর্যন্ত রাজ্যসীমা সম্প্রসারণ করেন। এই জয়পালই সর্বপ্রথম মামুদ গজনির আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছিলেন।
হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর তাঁর সাম্রাজ্যের অন্যতম অংশ বাংলাতেও চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তী প্রায় একশো বছর বাংলায় চলেছিল ‘মাৎস্যন্যায়’অবস্থা। শেষ পর্যন্ত সমাজপতিদের উদ্যোগে জনৈক গোপাল অষ্টম শতকের মাঝামাঝি বাংলার সিংহাসনে বসেন (আনুঃ ৭৫০ খ্রিঃ) এবং পালবংশের শাসনের সূচনা করেন। অর্থাৎ সিন্ধুদেশে আরব আক্রমণকালে বাংলায় গোপালের শাসন ছিল বলে মনে করা হয়। এই বংশের দুজন পরাক্রমশালী রাজা ছিলেন ধর্মপাল ও দেবপাল। দেবপালের রাজত্বকালে আরবীয় পর্যটক সুলেইমান ভারতে এসেছিলেন (৮৬১ খ্রিঃ)। তিনি পালরাজাদের সামরিক শক্তির উল্লেখ করলেও সেই শক্তি যে প্রতিহার ও রাষ্ট্রকুটদের সাথে সংঘর্ষের ফলে দ্রুত ক্ষয়িত হচ্ছিল, তা উল্লেখ করতে ভোলেননি। বস্তুত, দেবপালের মৃত্যুর অল্পকালের মধ্যেই পালসাম্রাজ্যের গৌরব অস্তমিত হতে থাকে। দশম শতকের মধ্যেই খণ্ডবিখণ্ড পালসাম্রাজ্যের ওপর একাধিক ক্ষুদ্র ও স্বাধীন রাজ্যের জন্ম হয়েছিল, যেমন—উত্তর ও পূর্ববঙ্গে কম্বোজ; ঢাকা-ফরিদপুরে চন্দ্র; ত্রিপুরায় লৌহচন্দ্র ইত্যাদি। এদের মধ্যে কম্বোজরাই কিছুটা শক্তির অধিকারী হয়েছিল। সম্ভবত, প্রথম মহীপাল এইসব রাজ্যাংশ পুনরধিকার করেছিলেন। তবে পালসাম্রাজ্য তার পূর্ব গৌরব ও কর্তৃত্ব আর ফিরে পায়নি। কারণ মামুদ গজনির আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য আর্যাবর্তের রাজারা যখন শক্তিসংঘ গঠন করেন, তখন মহীপাল তাতে যোগ দিতে অস্বীকার করেন। কারণ যাই হোক্, এটি তাঁর দুর্বলতা ও কাপুরুষতার দৃষ্টান্ত বহন করে। একাদশ শতকের গোড়ায় পালসাম্রাজ্য সংকুচিত হয়ে পড়ে এবং ১১৬২ খ্রিস্টাব্দে সেনবংশীয় রাজা বিজয় সেনের হাতে মদন পালের পরাজয়ের পরে পালশাসনের চূড়ান্ত অবসান ঘটে। সেনবংশীয় রাজা লক্ষ্মণ সেনের আমলে তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ারউদ্দিন মহম্মদ-বিন্-বখতিয়ার খলজি বাংলাদেশ দখল করে (সম্ভবত ১২০২ খ্রিঃ) সেখানে মুসলমান শাসনের সূচনা করেন।
ভারতে মুসলমান আক্রমণের ঢেউ প্রবলভাবে যে রাজ্যে লেগেছিল, তা হল সিন্ধু। একদা হর্ষবর্ধনের রাজ্যাংশ সিন্ধুতে প্রথমে একটি শুদ্র-শাসনের প্রতিষ্ঠা হয়। পরে সেখানকার জনৈক ব্রাহ্মণ মন্ত্রী চাচা শূদ্র শাসনের অবসান ঘটিয়ে স্বাধীন শাসনের সূচনা করেন। চাচার পৌত্র দাহিরের আমলে সিন্ধুর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে মহম্মদ-বিন্-কাশিম আরবীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
উত্তর ভারতের রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা যদি মুসলমান আক্রমণকারীদের ভারত-আক্রমণে উৎসাহিত করে, তাহলে দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যগুলির আত্মধ্বংসী নিরস্তর সংগ্রামে তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বলা যেতে পারে। উত্তরের তুলনায় দক্ষিণ ভারতে আঞ্চলিক রাজ্যস্থাপনের প্রবণতা অর্থনৈতিক কারণে সবদিনই বেশি এবং ভৌগোলিক কারণে সেখানকার ছোটো ছোটো রাজ্যগুলির বিরামহীন সংঘর্ষ ছিল। অনিবার্য। ড. রোমিলা থাপার লিখেছেন : “উর্বর বৃহৎ সমভূমির অভাবে সেখানে কোনো কৃষিভিত্তিক সাম্রাজ্য গড়ে উঠতে পারেনি। স্থানীয় সংগঠনকে ভিত্তি করে ছোটো ছোটো রাজ্য গড়ে ওঠার প্রবণতা দক্ষিণ ভারতে প্রথম থেকে নিয়মিতভাবেই লক্ষ্য করা যায়।” ষষ্ঠ শতকের দ্বিতীয় ভাগ থেকে পরবর্তী তিনশো বছর দাক্ষিণাত্যের প্রধান শক্তিগুলির মধ্যে সংঘর্ষের ভৌগোলিক রাজনীতি ছিল পশ্চিম পর্বতমালা থেকে প্রবাহিত বঙ্গোপসাগরমুখী, বিশেষত কৃষ্ণা ও গোদাবরী নদীগুলির প্রবাহপথ নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছা। এই সংঘর্ষ ছিল পশ্চিম দাক্ষিণাত্যের মালভূমি অঞ্চলের সাথে আর দক্ষিণের তামিলনাদের উর্বরা সমভূমির সংঘর্ষ। এই উর্বরাভূমির কেন্দ্রে ছিল বেঙ্গী (অন্ধ্র) রাজ্য। তাই এই অঞ্চল নিয়েই বিরোধ ছিল সবথেকে বেশি। দক্ষিণের পরস্পরবিরোধী রাজ্যগুলির মধ্যে প্রধান ছিল বাদামী বা বাতাপীর চালুক্যবংশ, কাঞ্চিপুরমের পল্লববংশ এবং মাদুরার পাণ্ড্যবংশ। কালক্রমে অন্যান্য রাজবংশও এই আঞ্চলিক সংঘর্ষের শরিক হয়েছিল।
বাতাপীর চালুক্যবংশের (Western Chalukyas) প্রথম স্বাধীন শাসক ছিলেন প্রথম পুলকেশী (আনুঃ ৫৩৫-৬৬ খ্রিঃ)। দ্বিতীয় পুলকেশীর আমলে (৬১১-‘৪২ খ্রিঃ) চালুক্যদের কর্তৃত্ব কাবেরী নদী অতিক্রম করে চোল, কেরল ও পাণ্ড্য রাজ্য পর্যন্ত প্রসারিত হয়। পল্লবরাজ প্রথম মহেন্দ্রবর্মনকে পরাজিত করে পল্লবদের রাজধানী কাঞ্চিপুরমের নিকটস্থ অঞ্চল পর্যন্ত তিনি দখল করে নেন। কিন্তু পরবর্তী পল্লব-রাজা নরসিংহবর্মন চালুক্যদের আক্রমণ করে বাতাপী বিধ্বস্ত করেন এবং সম্ভবত দ্বিতীয় পুলকেশীকে হত্যা করেন (৬৪২ খ্রিঃ)। দ্বিতীয় পুলকেশীর মৃত্যুর ফলে চালুক্যবংশ সাময়িকভাবে প্রতিপত্তিহীন হয়ে পড়ে। তাঁর পুত্র প্রথম বিক্রমাদিত্য (৬৫৫-৮১ খ্রিঃ) বাতাপী পুনরুদ্ধার করেন এবং পল্লবদের রাজধানী ‘কাঞ্চিপুরম’ লুণ্ঠন করে অপমানের প্রতিশোধ নেন। সপ্তম ও অষ্টম শতক ধরে পদ্মব ও চালুক্যদের সংঘর্ষ চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রকূটশক্তির হাতে চালুক্য-শাসনের অবসান ঘটে (৭৫৭ খ্রিঃ)। অবশ্য বেঙ্গীর চালুক্যগণ (Eastern Chalukyas) এবং কল্যাণের চালুক্যগণ যথাক্রমে একাদশ ও দ্বাদশ শতক পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকেছিল। এরাও পল্লব, রাষ্ট্রকুট এবং চোল শক্তিসমূহের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত থেকে নিজেদের ক্রম-অবক্ষয় ডেকে আনে।
পল্লববংশের উত্থান ঘটে ষষ্ঠ শতকের শেষদিকে। সিংহবিষ্ণু পাণ্ড্য চোল এবং সিংহলরাজকে পরাজিত করেছিলেন বলে কথিত আছে। প্রথম নরসিংহবর্মন ছিলেন পল্লববংশের সর্বাধিক কৃতী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। তিনি চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীকে হত্যা করে এবং বাতাপী দখল করে (৬৪২ খ্রিঃ) পল্লবদের দক্ষিণ ভারতে শ্রেষ্ঠ শক্তিতে পরিণত করেন। সপ্তম ও অষ্টম শতক ধরে পল্লব-চালুক্য সংঘর্ষ দক্ষিণ ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়। এই সকল যুদ্ধের পরিণতি সম্পর্কে উভয় পক্ষই নিজেদের কৃতিত্বের কথা প্রচার করেছেন। যাই হোক্, এর ফলে যে পক্ষই আপাত বিজয়লাভ করুক, পরিণতিতে উভয়েরই যে শক্তিক্ষয় হয়েছিল, — সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। নবম শতকে চোলরাজ প্রথম আদিত্য পল্লবরাজ অপরাজিত বর্মনকে পরাজিত করে (৮৯৭ খ্রিঃ) পল্লব-শাসনের অবসান ঘটান।
ভারতে মুসলমান অনুপ্রবেশ ও ক্ষমতাবিস্তারের আদিলগ্নে দাক্ষিণাত্যের অন্যতম শক্তিশালী রাজশক্তি হিসেবে রাষ্ট্রকূটদের আবির্ভাব ঘটেছিল। দাক্ষিণাত্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে রাষ্ট্রকূটগণ দুই শত বছরেরও বেশি সময় প্রভুত্ব করেন। সম্ভবত এঁরা ছিলেন চালুক্যদের সামস্ত এবং আদিনিবাস ছিল কর্ণাটকে। অষ্টম শতকে দস্তিদুর্গ রাষ্ট্রকূট শক্তির প্রতিষ্ঠা করেন। তবে রাষ্ট্রকূটদের গৌরবময় উত্থান শুরু হয় রাজা ধ্রুব (৭৮০-‘৯৩ খ্রিঃ)-র রাজত্বকাল থেকে। গঙ্গরাজ ও পল্লবরাজকে পরাজিত করে তিনি দাক্ষিণাত্যে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব স্থাপন করেন। অতঃপর তিনি বাংলার পালরাজা ধর্মপাল ও প্রতিহাররাজ ব্রহ্মকে পরাজিত করে দক্ষতা প্রদর্শন করেন। অবশ্য উত্তর ভারতে রাজ্যস্থাপনের কোনো চেষ্টা তিনি করেননি। ধ্রুবর পুত্র তৃতীয় গোবিন্দও (৭৯৪-৮১৪ খ্রিঃ) পরাক্রান্ত শাসক ছিলেন। তিনিও পালরাজা ধর্মপাল, প্রতিহার রাজা দ্বিতীয় নাগভট্টকে পরাজিত করেন এবং দক্ষিণের পাণ্ড্য, পল্লব, গঙ্গ, কেরল, চালুক্য-সহ কোশল, অবন্তী ও সিংহলরাজকে বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য করেন। লক্ষণীয় যে, ক্ষমতাশালী হলেও রাষ্ট্রকূটগণ সিন্ধু-দখলকারী আরবদের সাথে কোনোরকম বিরোধে যাননি; পরস্তু আরব বণিকদের সাথে রাষ্ট্রকূটদের সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বের এবং পরস্পর সহাবস্থানের নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। দাক্ষিণাত্যের এই ওঠাপড়ার খেলায় আরও কয়েকটি ছোটো ছোটো রাজ্যের সৃষ্টি হয়েছিল, যেমন কদম্ব, গঙ্গ, যাদব, কাকতীয় বংশ ইত্যাদি; এবং এরাও অবিরাম নিজেদের মধ্যে সংগ্রামে লিপ্ত ছিল।
সামগ্রিকভাবে বলা যায়, ষষ্ঠ শতকের শেষদিক থেকে ভারতীয় রাজনীতিতে আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদ এমনভাবে থাবা বিস্তার করেছিল যে, সাম্রাজ্যিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা ছিল অসম্ভব। একই সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ ভারত, যা একদা ভারতবর্ষের রাজনৈতিক কর্তৃত্বের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল, অসংখ্য ছোটো ছোটো আঞ্চলিক রাজ্যের অসংহত সমষ্টিতে পরিণত হয়েছিল। অন্যদিকে, একই সময়ে ইসলামধর্মকে ভিত্তি করে একদা বিচ্ছিন্ন বিভ্রান্ত এবং অরাজকতায় দীর্ণ আরবদেশ পেয়েছিল নতুন জীবন। স্থাপিত হয়েছিল জাতীয় সংহতি ও রাষ্ট্রীয় ঐক্য। তারা তখন স্বপ্ন দেখছিল বিশ্ববিজয়ের। ধর্মবিজয়ের আকুল আকাঙ্ক্ষার পরিপূর্ণতার মাধ্যমে তারা অর্জন করতে চেয়েছিল রাজনৈতিক প্রাধান্য। আর ভারতীয় রাজনীতিতে তখন ভাটার টান। গতিহীন জড়তা আর অবক্ষয় গ্রাস করেছে তার প্রাণশক্তিকে। এমতাবস্থায় বহিরাগত মুসলমানদের অগ্রগতি হয়েছে সহজ, সরল ও প্রায় বাধাহীন।
Leave a comment