ভূপৃষ্ঠের মাত্র দুই শতাংশ অঞ্চল ভারতের অধীন কিন্তু এখানে পৃথিবীর 5 শতাংশ জীববৈচিত্র্য দেখা যায়। এদেশে প্রায় 81 হাজার প্রাণী ও 45 হাজার উদ্ভিদ প্রজাতি দেখা যায়। এ ছাড়া আছে প্রায় 850 প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া ও বিভিন্ন অনুজীব। ভারতে প্রায় 15 হাজার প্রজাতির সপুষ্পক উদ্ভিদ রয়েছে, যার শতকরা 18 ভাগ উদ্ভিদ ভারত ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না। এইরূপ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বিশ্বব্যাপী অনুসরণযােগ্য কোনাে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি নেই। একাধিক পদ্ধতি অনুসরণ করে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা সম্ভব। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হয়েছে一
(১) প্রজাতি সংরক্ষণ : বিপন্ন প্রজাতি, আহত প্রজাতি, বিরল প্রজাতি ও স্বল্পজ্ঞাত প্রজাতিকে স্বস্থানিক ও অস্থানিক সংরক্ষণ এবং জিন ভাণ্ডার সৃষ্টির মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা হয়।
-
স্বস্থানিক সংরক্ষণ : বিপন্ন প্রজাতিগুলিকে নিজ আবাসস্থলে রক্ষা করার পদ্ধতিকে জীববৈচিত্র্যের স্বস্ধানিক বা অন্তঃক্ষেত্রীয় সংরক্ষণ বলা হয়। এক্ষেত্রে বাস্তুতন্ত্রে যেমন জীবের সংখ্যা বাড়ে, তেমনি বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। ওডিশার, ভিতরকণিকা ম্যানগ্রোভ অরণ্য ও পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চল স্বস্থানিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদাহরণ।
-
অস্থানিক সংরক্ষণ : কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে উদ্ভিদ ও প্রাণী স্বস্থানিক ব্যবস্থাপনায় বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে। এমন অবস্থান তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল থেকে উদ্ধার করে কৃত্রিম ব্যবস্থাপনায় উদ্ভিদ উদ্যান, প্রাণী উদ্যানে সংরক্ষণ করা হয়। উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের এইরূপ ব্যবস্থাপনাকে অস্থানিক বা বহিঃক্ষেত্রীয় সংরক্ষণ (Ex-situ Conservation) বলা হয়। এইরূপ ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন প্রজাতির সংখ্যা বাড়তে থাকে। শিবপুর উদ্ভিদ উদ্যান এবং আলিপুর চিড়িয়াখানা বহিঃক্ষেত্রীয় ব্যবস্থাপনার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
-
জিন ভাণ্ডার : জীবদেহের জৈবিক অংশ জিন ভাণ্ডারে রেখে বিপন্ন প্রজাতির জন্মগত বৈশিষ্ট্যগুলিকে সংরক্ষণ করা হয়। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে জীব, পরাগরেণু, কন্দ ও বিভিন্ন দেহকলা হিমায়িত ও শুষ্ক পরিবেশে সংরক্ষণ করা হয়।
(২) জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি : জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি নির্ধারণ ও তার যথাযথ প্রয়ােগ করে বিপন্ন ও বিপদগ্রস্থ উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির সংরক্ষণ করা হয়।
(৩) সংরক্ষণ পরিকল্পনা : বিপন্ন প্রজাতির সংরক্ষণে সংরক্ষণমূলক পরিকল্পনা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এই জাতীয় সংরক্ষণ পরিকল্পনার জীববৈচিত্র্য অপেক্ষা একটি বা কয়েকটি নির্বাচিত প্রজাতির ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।
(৪) অখন্ড ভূদৃশ্য ব্যবস্থাপনা : বহুসংখ্যক ক্ষুদ্রকণার বিচ্ছিন্ন বাস্তুক্ষেত্র অপেক্ষা অল্প সংখ্যক নিরবচ্ছিন্ন বৃহৎ আকৃতির বাস্তুক্ষেত্র জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের শ্রেষ্ঠ ব্যবস্থাপনা। বিস্তীর্ণ ভূভাগের অভাবে ক্ষুদ্রাকার বাস্তুক্ষেত্রের মধ্যে সংযােগ স্থাপনের মাধ্যমে প্রাণীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা সুগম করেও প্রজাতি সংরক্ষণ করা হয়।
(৫) ক্ষতিগ্রস্ত বাস্তুক্ষেত্রের সংস্কারসাধন : ক্ষতিগ্রস্ত বাস্তুক্ষেত্রের সংস্কারসাধন করে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা সম্ভব। মধ্য অক্ষাংশীয় তৃণভূমি অঞ্চল ও উপক্রান্তীয় অঞলের বনভূমি পরিষ্কার করে কৃষিক্ষেত্র গড়ে তােলার ফলে বিস্তীর্ণ অরণ্য অঞ্চল ক্ষুদ্রাকার বিচ্ছিন্ন বনভূমিতে পরিণত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন এই বাস্তুক্ষেত্রগুলির মধ্যে অলিন্দ স্থাপনের মাধ্যমে সংযােগ স্থাপন করে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে হবে।
(৬) বিনোদনমূলক শিকারি : কোনাে কোনাে বাস্তুক্ষেত্রে শিকারি প্রজাতি অপেক্ষা শিকার প্রজাতি এত বেশি হয় যে বাস্তুতন্ত্র অচিরেই ধ্বংস হয়। তৃণভােজী প্রাণীর সংখ্যা বেশি হলে এই প্রাণীগুলি অধিক মাত্রায় উদ্ভিদ ভক্ষণ করে। ফলে বহু বিপন্ন প্রজাতি বিলুপ্ত প্রজাতিতে পরিণত হয়। অনুমতি সাপেক্ষে বিনােদনমূলক শিকারের মাধ্যমে শিকার প্রজাতির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
(৭) প্রজাতি ও বাস্তৃতন্ত্র সংরক্ষণ আইন : আইন প্রণয়ন ও তার প্রয়ােগ করে প্রজাতি ও বাস্তু সংরক্ষণ করা উচিত। পৃথিবীর প্রায় সবদেশ আইন প্রণয়ন করে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করছে।
নির্মিত আইনসমূহ: ভারতে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে প্রায় 40টি আইন রয়েছে। এই আইনগুলি মূলত বন্যপ্রাণী, উদ্ভিদ প্রজাতি, বন্য উদ্ভিদ এবং গৃহপালিত পশু সংরক্ষণের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য কতকগুলি আইন হল- [1] Indian Forest Act (1927), [2] Seed Act (1966), [3] Wild Life Protection Act (1972), [4] Forest Conservation Act (1980) ইত্যাদি।
আমাদের দেশে জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য The Biological Diversity Bill-2000 পার্লামেন্টে আলােচনার জন্য পেশ করা হয়েছে। এর পূর্বে 1999 খ্রিস্টাব্দে উদ্ভিদ ও কৃষকদের অধিকার বা সংরক্ষণ নিয়ে Protection of Plant Varieties and Farmers Right Bill-1999 পেশ করা হয়। এই দুটি বিলই ভারতের জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রে অতি প্রয়ােজনীয়।
Leave a comment