ভারত বিশ্বের অন্যতম বস্ত্র উৎপাদনকারী দেশ হলেও এখানে এই শিল্পের কিছু সমস্যা আছে। এগুলি হল一

[1] উন্নতমানের তুলোর অভাব : ভারতে উৎপাদিত তুলাে ছােটো ও মাঝারি দৈর্ঘ্যের আঁশযুক্ত হয়। ভালাে বস্ত্র তৈরিতে লম্বা আঁশের তুলাে দরকার। তাই মিশর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি দেশ থেকে লম্বা আঁশের তুলাে আমদানি করতে হয় বলে বস্ত্রের উৎপাদন-ব্যয় বেশি হয়।

[2] কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি : বিগত কয়েক বছর ধরে কঁচা তুলাের মূল্যবৃদ্ধির জন্য মিলগুলি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

[3] পুরোনো যন্ত্রপাতি : অধিকাংশ কারখানার যন্ত্রপাতি বহু পুরােনাে। ফলে অপেক্ষাকৃত খারাপ মানের কাপড় উৎপাদিত হয়। এ ছাড়া বস্ত্র উৎপাদনের পরিমাণ কম হয়। ফলে উৎপাদন-ব্যয় প্রচুর হয়।

[4] বিদেশি বাজারে প্রতিযোগিতা : বর্তমানে ভারতকে চিন, জাপান, কোরিয়া,মালয়েশিয়া, তাইওয়ান প্রভৃতি দেশের উৎপাদিত বস্ত্রের সঙ্গে কঠিন প্রতিযােগিতার মুখােমুখি হতে হচ্ছে। বস্ত্রের নিকৃষ্ট মান এবং উৎপাদন ব্যয় বেশি বলে ভারত ক্রমশ আন্তর্জাতিক বাজারে পিছিয়ে পড়ছে।

[5] কৃত্রিম তন্তুজাত বস্ত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতা : নাইলন, পলিয়েস্টার, টেরিলিন প্রভৃতি কৃত্রিম তন্তুর তৈরি বস্ত্রের চাহিদা বাড়ছে। ফলে সুতিবস্ত্রের চাহিদা কমছে।

[6] শ্রমিক ধর্মঘট ও অসন্তোষ : দাবি-দাওয়া নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকদের প্রায়শই গণ্ডগােল বাধে এবং লক-আউট, ধর্মঘট ইত্যাদি লেগেই থাকে। ফলে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

[7] বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি : বস্ত্র কারখানাগুলিতে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ সরবারহ ব্যাহত হয়। ফলে উৎপাদন কমে যায়।

[8] পরিকাঠামোগত সমস্যা : কার্পাস-বয়ন শিল্প যেসমস্ত পরিকাঠামােগত সমস্যায় আক্রান্ত সেগুলি হল—শক্তির স্বল্প জোগান, পরিবহণের অসুবিধা, পণ্য প্রবেশে করের চাপ ইত্যাদি।

ভারতে কার্পাস-বয়ন শিল্পের সমস্যাগুলির সমাধানের উদ্দেশ্যে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেগুলি হল一

[1] শিল্পের আধুনিকীকরণ : বয়ন কলগুলি থেকে পুরােনাে ও অচল যন্ত্রপাতি সরিয়ে তার জায়গায় উন্নতমানের অত্যাধুনিক যন্ত্র বসানাের জন্য সরকার 750 কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে।

[2] অন্তঃশুল্ক হ্রাস : যােশি কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বর্তমানে কাঁচামালের অন্তঃশুল্ক হ্রাস পেয়েছে। সরকার আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক হ্রাস করে কার্পাস বয়ন শিল্পের উৎপাদন-ব্যয় কমানাের উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে প্রতিযােগিতায় শিল্পটি টিকে থাকে।

[3] স্বয়ংক্রিয় তাঁত স্থাপন : বস্ত্রের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সেই সঙ্গে উৎপাদন-ব্যয় কমানাের জন্য বয়ন কলগুলিতে স্বয়ংক্রিয় তাঁত বসানাে হয়েছে।

[4] গবেষণা সংস্থা স্থাপন : বয়ন শিল্পে উন্নতির জন্য মুম্বাই-এ টেক্সটাইল রিসার্চ অ্যাসােসিয়েশন স্থাপিত হয়েছে।

[5] অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ : ভারত সরকার বেশ কয়েকটি বস্ত্রশিল্পের কারখানা অধিগ্রহণ করে তাদের পুনরুজ্জীবন ঘটিয়েছে। রপ্তানি বাড়ানাের জন্য ভারত সরকার কার্পাসবস্ত্র রপ্তানি উন্নয়ন সংস্থা এবং বয়ন শিল্পের সমস্যা সমাধানের জন্য জাতীয় সুতিবস্ত্র কর্পোরেশন গঠন করেছে।