ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্পের ঐতিহ্য অতি প্রাচীন। বিভিন্ন পর্যায়ে ভারতে বস্ত্রশিল্পের বিকাশ ঘটে। যেমন一

প্রথম পর্যায় : 1818 সালের আগে পর্যন্ত ভারতের বস্ত্রবয়ন শিল্প ছিল কুটির শিল্পের আকারে। প্রথম যন্ত্রচালিত কাপড়ের কল স্থাপিত হয় 1818 সালে হাওড়ার ঘুসুড়িতে।

দ্বিতীয় পর্যায় : ইংল্যান্ডের মিলের তৈরি কাপড় ইংরেজ- শাসনকালে ভারতে প্রবেশ করায় ভারতের কুটিরশিল্প ধ্বংস হয়।

তৃতীয় পর্যায় : কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রকৃত সূচনা হয় 1851 সালের মুম্বাই-আমেদাবাদ অঞ্চলে এবং 1953 সাল থেকে শুরু হয় এই শিল্পের একদেশীভবন।

চতুর্থ পর্যায় : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে আন্তর্জাতিক বাজারে বস্ত্রের চাহিদা কমায় এই শিল্প শশাচনীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পঞ্চম পর্যায় : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বস্ত্রের চাহিদা বিপুল হারে বৃদ্ধি পায় এই সময়কে বস্ত্র শিল্পের সুবর্ণযুগ বলা হয়। এ সময় ভারতে 389টি কাপড়ের কল চালু ছিল।

ষষ্ঠ পর্যায় : স্বাধীনতার পরে ভারত ভাগ হওয়ায় তুলা উৎপাদক অঞ্চলের অনেকটাই পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। ফলে কাপড়ের কলগুলি তীব্র কাঁচা তুলাের সংকটে পড়ে।

সপ্তম বা পরবর্তী পর্যায় : বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারতের সর্বত্র এই শিল্পের বিকেন্দ্রীভবন ঘটতে থাকে। 1980 খ্রিস্টাব্দে যেখানে কাপাস-বয়ন কলের সংখ্যা ছিল 661টি সেখানে বর্তমানে ভারতে কার্পাস-বয়ন কলের সংখ্যা 1,824টি।

কার্পাস বয়ন শিল্প বিশুদ্ধ কাঁচামালভিত্তিক শিল্প বা শিকড় আলগা শিল্প হওয়ায় শিল্প স্থাপনের অনুকূল পরিবেশ পেলে তুলাে উৎপাদক অঞ্চল, বাজার বা শক্তি সম্পদের উৎসস্থলে অথবা উপযােগী যে-কোনাে স্থানে এই শিল্প গড়ে উঠতে পারে। তাই ভারতে বিভিন্ন পর্যায়ে এই শিল্পের বিকেন্দ্রীভবন ঘটেছে। যেমন一

  • প্রথমে আমেদাবাদে দ্রুত হারে এই শিল্পের বিকাশ ঘটতে থাকে। কারণ এখানে বস্ত্রের দেশীয় বাজার ছিল এবং কৃয়মৃত্তিকা অঞ্চল থেকে কাঁচা তুলাে পাওয়ার সুবিধা ছিল।

  • পরবর্তী পর্যায়ে উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতে এই শিল্পের দ্রুত প্রসার ঘটতে থাকে। কারণ—(i) নতুন নতুন অঞ্চলে যেমন—পাঞ্জাব, হরিয়ানা, তামিলনাড়ু রাজ্যে জলসেচের মাধ্যমে তুলাে চাষ শুরু হয়। (ii) বহু জলুবিদ্যুৎ ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়, ফলে বিদ্যুৎ শক্তির জোগান বৃদ্ধি পায়। (iii) সমগ্র ভারতে রেল ও সড়ক যােগাযােগ ব্যবস্থায় প্রভূত উন্নতি ঘটে। ফলে সর্বত্র কাঁচা তুলাে ও বস্ত্র রপ্তানি করার সুবিধা হয়। (iv) নতুন বন্দর গড়ে ওঠায় বিদেশ থেকে শিল্পের জন্য প্রয়ােজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি ও উৎপাদিত বস্ত্র বাইরে রপ্তানির সুযােগ বেড়ে যায়। (v) সর্বোপরি অভ্যন্তরীণ বিশাল বাজার সৃষ্টি হয়।