রামমােহন ‘সম্বাদ কৌমুদী (বাংলা ভাষায়), ‘মিরাৎ-উল-আখবার (ফারসি ভাষায়) এবং ‘The Brahmanical Magazine (ইংরেজি ভাষায়) নামক সংবাদপত্র প্রকাশনা করেন।

রামমােহন সম্পাদিত পত্রিকাগুলিতে তৎকালীন সমাজ, ধর্ম, শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ক প্রবন্ধ, আলােচনা ও সংবাদ ছাপা হত।

রামমােহনের প্রগতিশীল সংস্কারের বিভিন্ন দিক হল- ভারতের প্রশাসনে ভারতীয়দের অধিকার, আদালতে ফারসি ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি ভাষার প্রবর্তন, জুরি প্রথার প্রবর্তন, শাসনবিভাগ ও বিচারবিভাগের মধ্যে পৃথকরণ, সতীদাহ প্রথা নিবারণ, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন প্রভৃতি।

শিক্ষার সংস্কারে যে সমস্ত ভারতীয় মনীষী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে কয়েকজন হলেন রাজা রামমােহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, শ্রী অরবিন্দ ও মহাত্মা গান্ধি।

রাজা রামমােহন রায় এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর পাশ্চাত্য ও প্রাচ্য সংস্কৃতির সমন্বয়ের ক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।

নবজাগরণ আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে 1815 খ্রিস্টাব্দে আত্মীয় সভা স্থাপিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু সমাজের গোঁড়ামি, অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার এবং পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা।

রামমােহন রায় সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার সাহস দেখিয়েছিলেন। তিনি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সম্পর্কে সােচ্চার হয়েছিলেন, দেশবাসীকে সামাজিক কুপ্রভাব সম্পর্কে সচেতন করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন এবং দেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার সূচনা করেছিলেন। এইভাবে বাংলা তথা ভারতের নবজাগরণে তিনি এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেন। এইসব কারণে রামমােহনকে ‘ভারত পথিক বলা হয়।

রামমােহন তার প্রস্তাবিত পাঠক্রমে অঙ্ক, প্রকৃতিবিজ্ঞান, রসায়ন, শারীরবিদ্যা ও অন্যান্য প্রয়ােজনীয় বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করেন।

পাশ্চাত্য শিক্ষার পাশাপাশি বেদান্তের মূলকথা প্রচারের জন্য রামমােহন বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষার মেলবন্ধন ঘটানােই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য।

অ্যাংলাে হিন্দু বিদ্যালয় 1822 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিদ্যালয়ে যেসকল বিষয় পড়ানাে হত সেগুলি হল জ্যোতির্বিজ্ঞান, যন্ত্রবিদ্যা, ইউক্লিডের জ্যামিতি, কারিগরি বিদ্যা এবং ভেলতেয়ারের হিস্ট্রি অব্ চার্লস টুয়েলভ অ সুইডেন প্রভৃতি সাহিত্য।

রামমােহন রায় রচিত মৌলিক গ্রন্থগুলি হল- উৎসবানন্দ বিদ্যাবাগীশের সহিত বিচার’, ‘ভট্টাচার্যের সহিত বিচার’, ‘গােস্বামীর সহিত বিচার’, কবিতা-কারের সহিত বিচার’, ‘পথ্যপ্রদান’, ইংরেজি ও বাংলায় ভূগােল,  ব্রহ্মসংগীত”, গৌড়ীয় ব্যাকরণ ইত্যাদি।

রামমােহন বেদান্ত, বেদান্তসার ও উপনিষদ-এর বিভিন্ন ভাগ অনুবাদ করেন।

কয়েকজন রক্ষণশীল ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে পৌত্তলিকতা বিরােধী ও একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী রামমােহনের অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই জন্যই হিন্দু বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের তালিকায় রামমােহনের নাম নেই।

1825 খ্রিস্টাব্দে ইংরেজি ও বিজ্ঞানের পাশাপাশি হিন্দু দর্শন ও সাহিত্য পড়ানাের জন্য বেদান্ত মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।

হিন্দুসমাজের ধর্মান্ধতা দূর করার উদ্দেশ্যে রাজা রামমােহন রায় হিন্দুদের পৌত্তলিকতা ও আড়ম্বরপূর্ণ আচার অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে একেশ্বরবাদ প্রচার করেন।

বেঙ্গল গেজেট’ হল ভারতীয় ভাষায় প্রথম সংবাদপত্র। এটি 1818 খ্রিস্টাব্দের 15ই মে তারিখে প্রকাশিত হয়।

রাজা রামমােহন রায় 1822 খ্রিস্টাব্দে ইঙ্গ-বৈদিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

সম্বাদ কৌমুদী হল একটি পত্রিকা। রামমোহন রায় বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ এই দুটি সামাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করার জন্য এই পত্রিকায় প্রবন্ধ প্রকাশ করেন।

মিরাৎ-উল-আখবার কথাটির বাংলা অর্থ হল ‘সংবাদ দর্পণ। এই পত্রিকাটি প্রায় এক বছর চলেছিল।

‘ব্রজসূচি’ হল হিন্দুসমাজের জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে লেখা একটি বৌদ্ধ গ্রন্থ। রামমােহন রায় ‘ব্রজসূচি বাংলায় অনুবাদ করেন।

ভারতের নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন রাজা রামমােহন রায়।

রামমােহন রায়ের লেখা প্রথম বাংলা ব্যাকরণ বইয়ের নাম গৌড়ীয় ব্যাকরণ।

1867 খ্রিস্টাব্দে নবগােপাল মিত্র হিন্দু মেলা প্রবর্তন করেন।

রাজা রামমােহন রায়কে ‘নবযুগের Prophet’ অ্যাখ্যায় ভূষিত করেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।

1818 খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে ‘দিগদর্শন পত্রিকা প্রকাশিত হয়।

বেঙগল হেরাল্ড হল একটি ইংরেজি পত্রিকা। এটি 1829 খ্রিস্টাব্দে প্রথম প্রকাশিত হয়।

‘ব্রাম্মণসেবধি’ পত্রিকাটি রাজা রামমােহন রায় প্রকাশ করেন।

1813 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সনদ আইন নবীকরণ বিল উপস্থাপিত হয়।

রামমােহন রায় বেদান্ত মহাবিদ্যালয় স্থাপন করেন।

বিদ্যাসাগর ‘নারীশিক্ষার ভাণ্ডার গঠন করেন। নারীশিক্ষার ভাণ্ডার গঠনের উদ্দেশ্য ছিল বালিকা বিদ্যালয়গুলির জন্য তহবিল গঠন বা অর্থসংগ্রহ করা।

বিদ্যাসাগর ছদ্মনামে যেসব পুস্তক রচনা করেন সেগুলি হল অতি অল্প হইল’, ‘আবার অতি অল্প হইল’, ‘ব্রজবিলাস’, রত্ন পরীক্ষা’ ইত্যাদি।

বিদ্যাসাগর যেসব প্রশাসনিক পদে ছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল—বেথুন স্কুলের সম্পাদক পদ, সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ পদ, সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক পদ, ভারতীয় বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদে অছি পরিষদের সদস্যপদ ইত্যাদি।

বিদ্যাসাগরের অনুবাদ গ্রন্থপুলি হল–বেতাল পঞ্চ বিংশতি’, ‘শকুন্তলা’, ‘সীতার বনবাস’, ‘ভ্রান্তিবিলাস’ ইত্যাদি।

বিদ্যাসাগর রচিত কয়েকটি মৌলিক গ্রন্থ হল—“বাঙ্গালার ইতিহাস’, ‘বােধােদয়’, ‘জীবনচরিত’, ‘উপক্রমণিকা ইত্যাদি।

বিদ্যাসাগর প্রাচ্য শিক্ষায় বিশারদ হয়েও যুগের দাবিকে অস্বীকার করেননি। তিনি ধর্মীয় গোড়ামি, অন্ধবিশ্বাস ও সবরকমের কুসংস্কার থেকে মুক্ত ছিলেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অনেক উন্নতি করেছিলেন। তাই তাঁকে প্রথম আধুনিক বাঙালি বলা হয়।

বিদ্যাসাগর তত্ত্ববােধিনী’ ও ‘সর্বশুভকরী’—এই দুটি সংবাদ পত্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া ‘সােমপ্রকাশ ও ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি৷

প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে বিদ্যাসাগরের দুটি উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব হল- শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষার মাধ্যমে পাঠদান করতে হবে। পাঠক্রমে সাধারণ গণিত, ভূগােল, ইতিহাস, জ্যামিতি, প্রকৃতিবিজ্ঞান, নীতিবিজ্ঞান, শারীরতত্ত্ব রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে স্থান দিতে হবে।

বিদ্যাসাগর মনে করতেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নতি সম্ভব ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য অনুশীলনের মাধ্যমে। তাই তিনি বাংলা ও সংস্কৃত ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের ওপর জোর দিতেন।

বিদ্যাসাগরের মতে, বাংলা ভাষার লৌকিক ব্যবহার ও কথােপকথন অত্যন্ত নিম্ন মানের। সংস্কৃত শব্দভান্ডার এই ভাষায় সন্নিবেশিত না করলে এর শ্রীবৃদ্ধি করা যাবে না। এইসব কারণে সংস্কৃত ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করা দরকার বলে মনে করতেন তিনি।

শিক্ষার লক্ষ্য সম্বন্ধে বিদ্যাসাগরের সুচিন্তিত অভিমত হল ইংরেজি, সংস্কৃত, বাংলায় সমান গুরুত্ব সহ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষার মধ্যে সমন্বয়সাধন করতে হবে।বিদ্যাসাগর মনে করতেন যে, যদি ইংরেজিতে জ্ঞান অর্জন করা যায়, তাহলেই পাশ্চাত্য সভ্যতা ও বিজ্ঞানের জ্ঞানের মাধ্যমে ভারতীয় সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ভাষাকে উন্নত করা সম্ভব হবে।

লেখা, পড়া ও অঙ্ক কষার মধ্যেই শুধুমাত্র বাংলা শিক্ষাকে সীমাবদ্ধ করে রাখলে চলবে না, বাংলা ভাষাতেই সম্পূর্ণ শিক্ষাকে পরিচালিত করতে হবেএটিই ছিল বাংলা শিক্ষা সম্বন্ধে বিদ্যাসাগরের অভিমত।

বিদ্যাসাগরের পরিকল্পিত মডেল স্কুলগুলি বাংলার যে জেলায় স্থাপিত হয়েছিল, সেগুলি হল- হুগলি, বর্ধমান, নদিয়া ও মেদিনীপুর।

ঈশ্বরচন্দ্রকে সংস্কৃত কলেজের পক্ষ থেকে বিদ্যাসাগর উপাধি দেওয়া হয়। কারণ তিনি সংস্কৃত, ইংরেজি সাহিত্য, বেদান্ত, স্মৃতি ও ন্যায় ইত্যাদি সবধরনের বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নারী শিক্ষার ভাণ্ডার গঠন করেন। তিনি বালিকা বিদ্যালয়গুলির আর্থিক সমস্যা সমাধানের জন্য নারীশিক্ষার ভাণ্ডার গঠন করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে ‘বাংলা ভাষার প্রথম যথার্থ শিল্পী অ্যাখ্যা দিয়েছেন।

বিদ্যাসাগরের লেখা ভ্রান্তিবিলাস শেক্সপিয়রের ‘কমেডি অব এররস্ গ্রন্থের বঙ্গানুবাদ।

1856 খ্রিস্টাব্দে 15নং ধারায় ‘হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ আইনগত স্বীকৃতি পেয়েছিল।

কথামালা গ্রন্থের রচয়িতা হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দুটি সমাজসেবামূলক কাজ হল- বিধবাবিবাহ প্রবর্তন, নারীশিক্ষার বিস্তার।

প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বর্ণপরিচয় (প্রথম ভাগ এবং দ্বিতীয় ভাগ) রচনা করেন। পরবর্তী কালে তিনি বাংলার ইতিহাস, চারুপাঠ ও জীবনচরিত রচনা করেন।

গণশিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে বিদ্যাসাগরের লেখা গ্রন্থগুলি হল—বর্ণপরিচয়, বােধােদয়, কথামালা, ভ্রান্তিবিলাস, সীতার বনবাস, বেতাল পঞ্চবিংশতি ইত্যাদি।

বিদ্যাসাগর 1850 খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন।

বিদ্যাসাগরের রচনা ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি হিন্দি ‘বেতাল পচ্চিশি’ থেকে অনুদিত।

বিদ্যাসাগরের ‘শকুন্তলা গ্রন্থটি কালিদাসের অভিজ্ঞান শকুন্তলম” থেকে অনুদিত।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ‘নাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।

মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনের বর্তমান নাম হল- বিদ্যাসাগর কলেজ।

Central Advisory Board of Education I

বেথুন স্কুল 1878 খ্রিস্টাব্দে কলেজে পরিণত হয়।

রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন, চারিত্রিক গুণসম্পন্ন গুরুর সান্নিধ্যে এলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আপনা থেকেই প্রকৃত মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটবে। পারস্পরিক মেলামেশার মধ্য দিয়ে ছাত্রশিক্ষকের মধ্যে যে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠবে, তা শিক্ষার্থীর শিখন প্রক্রিয়ার গতিকে ত্বরান্বিত করবে।

রবীন্দ্রনাথের মতে, শিক্ষার লক্ষ্য হল ব্যক্তিজীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ, সামাজিক গুণের বিকাশ, ধর্মীয় ভাবের জাগরণ এবং প্রকৃত জীবনাদর্শ গঠন, এককথায় মনুষ্যত্বের সার্বিক বিকাশ।

রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল বিদ্যালয়রূপী খােপওয়ালা বড়াে বাক্সের ক্ষুদ্র গণ্ডি থেকে ছাত্রছাত্রীদের মুক্তি দেওয়া। ব্রহ্মচর্যের সংযমের দ্বারা বােধশক্তিকে বাধামুক্ত করা, ভােগবিলাসের আকর্ষণ থেকে অভ্যাসকে মুক্তি দেওয়া।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য রবীন্দ্রনাথ পাঠক্রমে কৃষি, পশুপালন, বিভিন্ন প্রকার দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেন।

রবীন্দ্রনাথ ছিলেন প্রকৃতিবাদী। তিনি মনে করতেন, প্রকৃতির ছায়ান্নিঃধ পরিবেশে বিশ্বপ্রকৃতির সৌন্দর্য উপলব্ধি করার মাধ্যমেই উপযুক্ত শিক্ষালাভ সম্ভব। তাই তিনি শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

শান্তিনিকেতনকে বিশ্বভারতীতে পরিণত করার মূল কারণ ছিল একটি বিশ্বমানের শিক্ষার মিলনস্থল প্রতিষ্ঠা করা, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে একটি আন্তর্জাতিক মিলনক্ষেত্র তৈরি করা।

শ্রীনিকেতনে ‘শিক্ষাসন্র খােলার উদ্দেশ্য ছিল হাতেকলমে শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্বনির্ভর করে তােলা। এ ছাড়া কৃষির উন্নতি, বিভিন্ন হস্তশিল্প ও কুটিরশিল্পের বিকাশ ঘটানাে।

পেগান হল রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শনের চারটি ধারার মধ্যে একটি। পেগানের অর্থ হল বাহ্যিক ইন্দ্রিয়গত সৌন্দর্য ভােগ। রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুন্দর। সুন্দরকে তিনি ধ্যানের মধ্য দিয়ে উপলব্ধি করে জীবনে তা রূপায়িত করেছিলেন |

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শনের পাঁচটি দিক হল— প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ থেকে শিক্ষা, শিক্ষায় আনন্দ, শিক্ষায় স্বাধীনতা, বিকাশ হিসেবে শিক্ষা, শিক্ষায় সক্রিয়তার নীতি।

রবীন্দ্রনাথের মতে ধর্ম হল—“ঈশ্বরের জন্য আবেগপূর্ণ আকুলতা, তথা ঈশ্বরকে উপলব্ধি করার আনন্দ’।

শিক্ষা বিকিরণ ও ‘শিক্ষার বাহন গ্রন্থের রচয়িতা হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

শ্রীনিকেতনে শিক্ষাসত্র স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য ছিল লােকশিক্ষার বিস্তার এবং কর্মশক্তির জাগরণ।।

1921 খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্যাশ্রম বিশ্বভারতীতে পরিণত হয়।

শিক্ষার সাঙ্গীকরণ প্রবন্ধটির রচয়িতার নাম বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ‘সৌন্দর্যের সন্ন্যাসী অ্যাখ্যা দিয়েছেন শ্রী অজিত কুমার চক্রবর্তী।

দেশের কাজ বলতে রবীন্দ্রনাথ মূলত গ্রামােন্নয়নের কাজকে বুঝিয়েছেন।

রবীন্দ্রনাথের মতে, প্রতিভার প্রধান চারটি ধারা হল যথাক্রমে—উপনিষদের ধারা, বৈয়ভাবের ধারা, বাহ্যিক ইন্দ্রিয়গত সৌন্দর্য ভােগের ধারা এবং আধুনিক যুক্তি বােধের ধারা।

রবীন্দ্রনাথ শ্রীনিকেতনে পরীক্ষামূলক খামার এবং গবেষণাকেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন।

রবীন্দ্রনাথের মতে, স্বাধীনতা হল আত্মকর্তৃত্ব।

রবীন্দ্রনাথের মতে, আত্মকর্তৃত্বের লক্ষ্য হল সৃষ্টি বা Creation ।

রবীন্দ্রনাথের মতে, বিদ্যালয় হল মানব সংস্কৃতির অনুশীলন ক্ষেত্র।

“বিশ্বমানবের পূর্ণ উপলব্ধি হল শিক্ষা”—এই কথাটি বলেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবীন্দ্রনাথ 1911 খ্রিস্টাব্দে ধর্ম শিক্ষা গ্রন্থটি রচনা করেন।

রবীন্দ্রনাথ 1901 খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে ব্রম্মচর্যাশ্রম প্রতি করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 1824 খ্রিস্টাব্দে শ্রীনিকেতনে যে গ্রামীণ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, তার নাম ছিল শিক্ষাসত্র।

স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃয় মিশন প্রতিষ্ঠা করেন, জনগণের সেবা ছিল এর উদ্দেশ্য। শিক্ষার প্রসার, চিকিৎসার সুযোগ এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সেবাই ছিল এর লক্ষ্য।

বিবেকানন্দ উপলব্ধি করেছিলেন, দেশের মানুষের দুঃখ ও দুর্দশা দূর করতে হলে গণশিক্ষার প্রয়ােজন৷ তিনি বলেছেন গণশিক্ষা অবহেলা জাতীয় পাপ আর এই জন্যই আমাদের অধঃপতন। তিনি আরও বলেছেন—যতদিন না পর্যন্ত জনগণ খাদ্য পাবে, যত্ন পাবে, উপযুক্ত পরিমাণে শিক্ষিত না হবে ততদিন পর্যন্ত কোনাে রাজনীতির দ্বারা কিছু হবে না।

বিবেকানন্দ মনে করতেন, নারীজাতির সমস্যা একমাত্র শিক্ষার দ্বারাই সমাধান করা সম্ভব। তিনি নারীশিক্ষার ওপর। যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যে দেশ নারীকে শ্রদ্ধা করে না, সেই দেশ জাতি কখনােই বড়াে হয় না।

বিবেকানন্দের মতে, “Education is the manifestation of perfection already in man” অর্থাৎ মানুষের অন্তর্নিহিত মহত্বের বিকাশসাধনই হল শিক্ষা।

বিবেকানন্দের মতে প্রকৃত শিক্ষা হল মানুষ গড়ার শিক্ষা। এই শিক্ষার ফলে মানুষের চরিত্র সুগঠিত হয়, মনের বল বৃদ্ধি পায়, বুদ্ধি ও মেধাশক্তির বিকাশ ঘটে এবং মানুষ স্বনির্ভর হয়।

বিবেকানন্দ শিক্ষার পদ্ধতির ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ের ওপর পুরুত্ব দিয়েছেন সেগুলি হল মনােসংযােগ, ধ্যান, যােগাসন অভ্যাস এবং আত্মশিক্ষা।

1945 খ্রিস্টাব্দে সেবাগ্রামে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বুনিয়াদি শিক্ষাকে জীবনের জন্য শিক্ষা’ বলে অভিহিত করা হয়। এক্ষেত্রে মনে করা হয় যে, এই শিক্ষাব্যবস্থা সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে ভারতীয় সমাজকে এক নতুন পথের সন্ধান দেবে। এই কারণেই গাল্ধিজি বুনিয়াদি শিক্ষাকে ‘নঈ তালিম হিসেবে গণ্য করেন।

বুনিয়াদি শিক্ষাব্যবস্থার সাফল্যের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে যে প্রস্তুতি থাকা দরকার, যে অর্থনৈতিক বাজার থাকা দরকার, যে ধরনের অভিজ্ঞ শিক্ষকের প্রয়ােজন, সর্বোপরি আপামর জনসাধারণের যে সদিচ্ছা থাকা প্রয়ােজন ছিল, তার অভাব ছিল। তাই এই শিক্ষা ব্যবস্থা সাফল্য লাভ করতে পারেনি।

বুনিয়াদি শিক্ষার দুটি গুণ হল— এই শিক্ষা সক্রিয়তার নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা খুব সহজেই এর প্রতি আকৃষ্ট হয়। এই শিক্ষাব্যবস্থায় কায়িক পরিশ্রমে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা শ্রমের মর্যাদা উপলব্ধি করতে পারে।

বুনিয়াদি শিক্ষার দুটি বৈশিষ্ট্য হল— এই শিক্ষা অবৈতনিক, বাধ্যতামূলক এবং উৎপাদনমুখী। এই শিক্ষার মাধ্যম হল মাতৃভাষা।

গান্ধিজির মতে, সত্যের উপলদ্ধি এবং অহিংসার আদর্শ অনুসরণের মধ্য দিয়ে ব্যক্তিসত্তার সর্বাঙ্গীণ বিকাশসাধনই হল শিক্ষা।

গান্ধিজির জীবনদর্শনের মূলকথা হল অধ্যাত্মবাদ। তাঁর মতে, মানবজীবনের একমাত্র লক্ষ্য হল ঈশ্বরলাভ। ঈশ্বরকে লাভ করতে পারলে সত্যে উপনীত হওয়া যাবে। এর জন্য প্রয়ােজন। অহিংসার পথ অবলম্বন করা।

গান্ধিজি প্রস্তাবিত বুনিয়াদি শিক্ষা পরিকল্পনার দুটি বৈশিষ্ট্য- শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা এবং গ্রামের অর্থনীতিকে হল শক্তিশালী করে তােলা।

শিল্পকেন্দ্রিক স্বনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করার উদ্দেশ্যে ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে ওয়ার্ধায় ড. জাকির হােসেনের নেতৃত্বে সাতটি প্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়ে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলন ওয়ার্ধা পরিকল্পনা নামে পরিচিত।

বুনিয়াদি শিক্ষা সম্পর্কে কেন্দ্রের মূল বক্তব্যটি হল—7 থেকে 14 বছরের সব ছেলেমেয়ের জন্য বুনিয়াদি শিক্ষা হবে সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক।

আর্থিক বিচারে বুনিয়াদি শিক্ষা হবে এমন এক শিক্ষা যা জাতির জীবনে বুনিয়াদ বা ভিত্তি রচনা করবে। এই শিক্ষা শিক্ষার্থীকে স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলবে। শিক্ষার্থী কর্তৃক উৎপাদিত বস্তু বিক্রি করে যে অর্থ পাওয়া যাবে তার দ্বারা শিক্ষার ব্যয় বহন করা হবে।

গান্ধিজির কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা সত্যের উপলদ্ধি এবং অহিংসার আদর্শের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। এই শিক্ষাব্যবস্থাটিকে ভাববাদ, প্রকৃতিবাদ ও প্রয়ােগবাদের মিশ্রণে গড়ে তােলা হয়েছিল।

গান্ধিজির মতে সব ধরনের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে যে সমাজ গঠিত হবে, তাই ই হল সর্বোদয় সমাজ বা।dealState এই সমাজব্যবস্থায় একজন অতি দরিদ্র ব্যক্তিও দেশের সঙ্গে একাত্ম বােধ করবে এবং সেখানে তার মতামতেরও গুরুত্ব থাকবে।