ভূমিকা: ভারতের সংবিধানে কেন্দ্রীয় শাসন বিভাগের সর্বোচ্চ পদাধিকারী হলেন রাষ্ট্রপতি। শাসন বিভাগের শীর্ষে রাষ্ট্রপতির অবস্থান। সংবিধানের ৫৩ নং ধারায় বলা হয়েছে যে, ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতেই ন্যস্ত থাকবে। তিনি নিজে কিংবা তার অধস্তন কর্মচারীদের মাধ্যমে শাসনক্ষমতা প্রয়ােগ করেন। তিনি একাধারে শাসন বিভাগের প্রধান, অন্যদিকে আইন বিভাগের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তবে ভারতের রাষ্ট্রপতি হলেন একজন নিয়মতান্ত্রিক শাসক।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলি শ্রেণিবিভাগ

সংবিধানের ৫৩ (১) নং ধারানুযায়ী রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ দুর্গাদাস বসু রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাসমূহকে আলােচনা করেছেন। যেমন—

  • (A) শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা,
  • (B) আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা,
  • (C) অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা,
  • (D) বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা,
  • (E) জরুরি অবস্থাকালীন ক্ষমতা এবং
  • (F) অন্যান্য ক্ষমতা।

(A) শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা: রাষ্ট্রপতির শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা বলতে কেবলমাত্র আইনের বাস্তবায়নকেই বােঝায় না, সরকারের অন্যান্য কাজকর্ম পরিচালনাকেও বােঝায়। ব্যাপক অর্থে রাষ্ট্রপতির শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়―

  • নিয়ােগ সংক্রান্ত ক্ষমতা: নিয়ােগ সংক্রান্ত ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির প্রশাসনিক ক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ােগ করেন এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী অপরাপর মন্ত্রীদেরও নিয়ােগ করে থাকে। অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপাল গণের তিনি নিয়ােগ করেন। এ ছাড়া ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেল, কম্পট্রোলার ও অডিটর-জেনারেল, সুপ্রিমকোর্ট এবং হাইকোর্টের বিচারপতিগণ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হয়ে থাকেন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সদস্যবৃন্দ এবং অর্থ কমিশনের সদস্যবৃন্দও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হয়ে থাকে।
  • অপসারণ সংক্রান্ত ক্ষমতা: রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের অপসারিত করতে পারেন। অ্যাটর্নি জেনারেল এবং অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপাল গণ ও তাঁর দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে অপসারিত হন। এ ছাড়া পার্লামেন্টের সুপারিশ অনুযায়ী তিনি সুপ্রিমকোর্ট এবং হাইকোর্টের বিচারপতিদের, নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের, কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্যদের আনুষ্ঠানিকভাবে অপসারিত করেন। ভারতের কম্পট্রোলার এবং অডিটর জেনারেলকেও তিনি সুপ্রিমকোর্টের সুপারিশ অনুযায়ী অপসারিত করে থাকেন।
  • সামরিক ক্ষমতা: রাষ্ট্রপতি ভারতের সামরিক বাহিনীর প্রধান। স্থল, জল এবং আকাশ বাহিনীর প্রধানদের তিনি নিয়োগ করেন। তিনি জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিটির (National Defence Committee) প্রধান এবং এই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যুদ্ধ ঘােষণা করতে পারেন।
  • কূটনৈতিক ক্ষমতা: রাষ্ট্রপতি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ভারতীয় কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের পাঠান। অন্যদিকে বিদেশি কোনাে দেশের প্রতিনিধি বা রাষ্ট্রদূত যখন ভারতে আসেন তখন তারা ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সর্বপ্রথম শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সমস্ত আন্তর্জাতিক সন্ধি ও চুক্তি রাষ্ট্রপতির নামেই সম্পাদিত হয়। তবে এক্ষেত্রে পার্লামেন্টের অনুমােদন না থাকলে সন্ধি ও চুক্তি কোনােটাই কার্যকর হতে পারে না।
  • তত্ত্বাবধায়ক ক্ষমতা: ভারতের রাষ্ট্রপতি একটি অনুসন্ধান কমিশন গঠন করেন অনগ্রসর সম্প্রদায়গুলির অবস্থা অনুসন্ধানের জন্য। এ ছাড়া জাতীয় ও সামরিক বিচারে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত বিষয়, তথা- যোগাযোগ ব্যবস্থা, রেল ব্যবস্থা প্রভৃতি সঠিকভাবে সংরক্ষণের জন্য রাষ্ট্রপতি প্রয়ােজনমতাে নির্দেশ দিতে পারেন।

(B) আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা: রাষ্ট্রপতি ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভা অর্থাৎ পার্লামেন্টের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তিনি পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের অধিবেশন আহ্বান করেন, আবার প্রয়ােজনে স্থগিত রাখেন। তিনি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ অর্থাৎ লোকসভা ভেঙে দিতে পারেন। উভয় কক্ষের মধ্যে মতবিরােধের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি যৌথ অধিবেশন (Joint sitting) আহ্বান করতে পারেন।

  • অধিবেশন সম্পর্কিত ক্ষমতা: রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৮৫ (১) নং ধারানুসারে পার্লামেন্টের অধিবেশন আহ্বান করতে পারেন, স্থগিত রাখতে পারেন কিংবা কার্যকাল শেষ হওয়ার পূর্বে লোকসভা ভেঙে দিতে পারে। যদিও সমস্ত কাজই রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে করে থাকেন।
  • অধিবেশন ভাষণদান ও বাণী পাঠানো: রাষ্ট্রপতি নবগঠিত পার্লামেন্টের প্রথম যুগ্ম অধিবেশনে ভাষণ দেন। এ ছাড়াও পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির উদ্বোধনী ভাষণ দিয়ে থাকেন। এই ভাষণের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নীতিসমূহ বর্ণনা করে থাকেন। পার্লামেন্টের বাৎসরিক অধিবেশনের শুরুতেই তিনি ভাষণ দিতে পারেন। এ ছাড়া পার্লামেন্টের যে-কোনাে কক্ষে যে-কোনাে সময় রাষ্ট্রপতি বক্তৃতা দিতে পারেন ও বাণী পাঠাতে পারেন।
  • সদস্য মনােনয়ন: রাষ্ট্রপতি লোকসভায় ইঙ্গ-ভারতীয় সম্প্রদায় থেকে অনধিক ২ জন এবং রাজ্যসভায় ১২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে মনােনীত করতে পারেন।
  • বিলে স্বাক্ষর ও ভেটো ক্ষমতা প্রয়ােগ: রাষ্ট্রপতির সম্মতি ব্যতিরেকে কোনাে বিল আইনে পরিণত হতে পারে না। পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে একটি বিল গৃহীত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য প্রেরিত হয়। রাষ্ট্রপতি বিলটিতে সম্মতি দিলে বিলটি আইনে পরিণত হয়। তিনি বিলে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। আইন প্রণয়ন ব্যবস্থার উপর প্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই ভেটো ক্ষমতা (Veto Power)-কে চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা পূর্ণাঙ্গ ভেটো (Absolute veto), নিয়ন্ত্রিত ভেটো (Qualified veto), স্থগিতকারী ভেটো (Suspensive veto), পকেট ভেটো (Pocket veto)আবার সম্মতি না দিয়ে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের পুনর্বিবেচনার জন্য তিনি বিলটিকে ফেরত পাঠাতে পারেন। বিলটি যদি পুনরায় পার্লামেন্টে গৃহীত হয়ে তাঁর নিকট আসে, তবে তিনি তাতে সম্মতি জানাতে বাধ্য থাকেন (১১১ নং ধারানুযায়ী)। কোনো অর্থবিলকে তিনি পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন না বা সংবিধানের কোনাে সংশােধনী বিলকেও তিনি ফেরত পাঠাতে পারেন না। এগুলি তার কাছে। এলে তিনি সম্মতি জানাতে বাধ্য।
  • রাজ্য আইনসভার বিলে সম্মতি জ্ঞাপন: রাজ্যের আইন প্রণয়নের ব্যাপারেও রাষ্ট্রপতির ভূমিকা রয়েছে। রাজ্য আইনসভায় গৃহীত বিলে রাজ্যপাল সম্মতি জানালেই বিলটি আইনের মর্যাদা লাভ করে। কিন্তু বিলে সম্মতি না জানিয়ে রাজ্যপাল বিলটিকে রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য পাঠাতে পারেন (২০৯ নং ধারানুযায়ী)। এরকম ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সম্মতি জানালে তবেই বিলটি আইনে পরিণত হয়।
  • অধ্যাদেশ জারি করার ক্ষমতা: পার্লামেন্টের অধিবেশন না থাকলে, রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ (Ordinance) জারি করতে পারেন। তবে পার্লামেন্ট যদি অধিবেশন বসার ৬ সপ্তাহের মধ্যে সেই অধ্যাদেশ অনুমোদন না করে, তবে ৬ সপ্তাহ পরে তা বাতিল হয়ে যায়।
  • সম্মতি জ্ঞাপন সংক্রান্ত ক্ষমতা: এমন কতকগুলি বিল আছে- যেগুলি রাষ্ট্রপতির পূর্ব অনুমতিসাপেক্ষে পার্লামেন্টে উপস্থাপিত করতে হয়। অর্থ বিল হল এরকম একটি বিলের উদাহরণ। রাজ্যগুলির নাম ও সীমানা পরিবর্তন সংক্রান্ত কোনাে বিলকেও রাষ্ট্রপতির পূর্বসম্মতি নিয়েই পার্লামেন্টে প্রেরণ করতে হয়। এ ছাড়া বাজেট, অতিরিক্ত বাজেট, অর্থ কমিশনের সুপারিশ ইত্যাদি রাষ্ট্রপতির নির্দেশেই পার্লামেন্টে উপস্থাপিত হতে পারে।

(C) অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা :

  • অর্থ বিল সংক্রান্ত ক্ষমতা: রাষ্ট্রপতির সম্মতি ব্যতীত অর্থ বিল সংসদে পেশ করা যায় না। কোনাে অর্থ বিলকে এবং সংবিধান-সংশােধনী বিলকেও তিনি পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন না।
  • বাজেট সংক্রান্ত ক্ষমতা: কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির তরফে সরকারের বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের হিসাব বা বাজেটে পার্লামেন্টে পেশ করেন। অনিশ্চিত ব্যয়ের জন্য যে তহবিল (Contingency Fund) রয়েছে, পার্লামেন্টের অনুমােদন পাওয়ার পূর্বেই তিনি সেই তহবিল থেকে ব্যয়ের মঞ্জুরির প্রস্তাব অনুমােদন করেন।
  • অর্থ কমিশন গঠন সংক্রান্ত ক্ষমতা: রাষ্ট্রপতি প্রতি ৫ বছর অন্তর অর্থ কমিশন গঠন করেন। দেশে আর্থিক সংকট তৈরি হলে আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘােষণা করতে পারেন।
  • জরুরি তহবিল তত্ত্বাবধান সংক্রান্ত ক্ষমতা: আকস্মিক ব্যয় নির্বাহের জন্য রাষ্ট্রপতি আকস্মিকতা তহবিল বা জরুরি তহবিল তত্ত্বাবধান করে থাকেন। এ ছাড়া সংবিধানের ৪২তম সংশােধন আইন অনুসারে কেন্দ্র ও রাজ্যের হিসাব কীভাবে রাখা যাবে তা ঠিক করে দেওয়ার ভার এসে পড়েছে রাষ্ট্রপতির উপর। এক্ষেত্রে তিনি কম্পট্রোলার এবং অডিটর জেনারেলের সঙ্গে আলােচনা করতে পারেন।

(D) বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা:

  • বিচারপতিদের নিয়ােগ সংক্রান্ত ক্ষমতা: রাষ্ট্রপতি ভারতের সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করেন। সংসদের সুপারিশক্রমে তিনি বিচারপতিদের পদচ্যুত পর্যন্ত করতে পারেন।
  • শাস্তিযোগ্য ব্যক্তিদের ক্ষমা প্রদর্শন সংক্রান্ত ক্ষমতা: ভারতের রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন ধরনের ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন। যেমন— ক্ষমা (Pardon), প্রবিলম্ব (Reprieve), বিলম্ব (Respite), রেহাই (Remission), লঘুকরণ (Commutation)। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি মৃত্যুদণ্ড জ্ঞান প্রাপ্ত ব্যক্তির দণ্ডাদেশ মকুব করতে পারেন (৭২নং ধারানুযায়ী)। তবে কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় তালিকাভুক্ত বিষয়ের উপর সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের বা মৃত্যুদণ্ড মকুবের এই ক্ষমতা কার্যকরী।

(E) জরুরি অবস্থাকালীন ক্ষমতা: দেশে জরুরি অবস্থা দেখা দিলে রাষ্ট্রপতি প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। যদি কোনাে বৈদেশিক আক্রমণ বা কোনাে সশস্ত্র বিদ্রোহের দ্বারা ভারতবর্ষের অথবা ভারতবর্ষের কোনাে অংশের নিরাপত্তা বিপন্ন হয়, তবে জরুরি অবস্থা দেখা দিতে পারে। এরূপ অবস্থায় রাষ্ট্রপতি ক্যাবিনেটের পরামর্শক্রমে সারা দেশে অথবা দেশের কোনাে অংশে জরুরি অবস্থা ঘােষণা করতে পারেন। দেশের কোনাে রাজ্যের সাংবিধানিক অচলাবস্থা বা কোনাে অংশের অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলেও রাষ্ট্রপতি সেই রাজ্যে অথবা সেই অংশে জরুরি অবস্থা ঘােষণা ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির তিন ধরনের জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা একটি চার্টের সাহায্যে বিশ্লেষণ করা হল, যা পরবর্তী ক্ষেত্রে বিস্তারিতভাবে আলােচনা করা হবে।

(F) অন্যান্য ক্ষমতা: রাষ্ট্রপতির আরও অন্যান্য অনেক ক্ষমতা রয়েছে। ভারত সরকারের কাজকর্ম পরিচালনার জন্য তিনি নিয়মাবলি প্রণয়ন (making of rules) করতে পারেন। তিনি অর্থ কমিশন নিয়ােগ করেন, আন্তঃরাজ্য পরিষদ গঠন করেন। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সম্পর্কে তাঁর বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। এই অঞ্চলগুলির জন্য তিনি প্রশাসক নিযুক্ত করেন এবং তাদের মধ্য দিয়ে তিনি এই অঞ্চলগুলির শাসনকার্য পরিচালনা করেন।

রাষ্ট্রপতির পদমর্যাদা

ভারতীয় সংবিধানে রাষ্ট্রপতির প্রকৃত ভূমিকা ও পদমর্যাদা সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা নেই, গণপরিষদে সংবিধান প্রণয়নের প্রাক্কালে বলা হয়েছিল যে, রাষ্ট্রপতি ইংল্যান্ডের রাজা রানির মতাে নিয়মতান্ত্রিক শাসকপ্রধানের ভূমিকা গ্রহণ করবেন। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর মতানুসারে এদেশে মন্ত্রীপরিষদ-শাসিত শাসন ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব আরােপ করা হয়েছে। এবং সংসদীয় ক্ষমতা প্রকৃতপক্ষে মন্ত্রীসভা ও আইনসভার হাতে ন্যস্ত থাকে, রাষ্ট্রপতির হাতে নয়। রাষ্ট্রপতির প্রকৃত পদমর্যাদা এবং মন্ত্রীসভার সঙ্গে তার সম্পর্ক প্রসঙ্গে গভীর মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়েছে। একশ্রেণির সংবিধান বিশেষজ্ঞ তত্ত্বগতভাবে বলেন যে, রাষ্ট্রপতি হলেন দেশের প্রকৃত শাসক। কিন্তু বাস্তববাদী সংবিধান বিশেষজ্ঞরা অন্য মত পােষণ করেন। তাদের মতানুসারে রাষ্ট্রপতি হলেন নিয়মতান্ত্রিক শাসক প্রধান। ড. আম্বেদকর বলেছেন, “ইংল্যান্ডের শাসন ব্যবস্থায় রাজা বা রানি যে পদমর্যাদা ভােগ করেন, ভারতের রাষ্ট্রপতি সমমর্যাদাসম্পন্ন“।

উপসংহার: ভারতের রাষ্ট্রপতির উল্লিখিত ক্ষমতা বিশ্লেষণের পর রাষ্ট্রপতিকে প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী বলে মনে হতে পারে। তত্ত্বগতভাবে তিনি তাই, কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি অন্য। রাষ্ট্রপতি যে ক্ষমতাই প্রয়ােগ করুক-না-কেন তাকে মন্ত্রীসভার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে হয়। তিনি হলেন নামসর্বস্ব শাসক, প্রকৃত শাসক নন। তিনি শুধুমাত্র নামসর্বস্ব শাসক নন, ভারতের রাষ্ট্রপতি জাতির প্রতীক, সংবিধানের রক্ষাকর্তা হিসেবে পরিচিত। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান কিন্তু শাসন বিভাগের প্রধান বলে বিবেচিত হন না। তা সত্ত্বেও ভারতের রাষ্ট্রপতিকে দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়।