কোনাে দেশের অর্থনীতির ওপর পর্যটন শিল্পের প্রভাব আলােচনা করাে।
বহুবৈচিত্র্যময় ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন কারণে পর্যটনশিল্প বিকাশলাভ করেছে। এই পর্যটনশিল্পকেন্দ্রগুলিকে অবস্থান অনুযায়ী তিনভাগে ভাগ করা যায়- [1] হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের পর্যটন কেন্দ্রসমূহ, [2] উত্তর ভারতের বৃহৎ সমভূমি অঞ্চলের পর্যটন কেন্দ্রসমূহ এবং [3] দাক্ষিণাত্যের মালভূমি এবং উপকূলবর্তী অঞ্চলের পর্যটন কেন্দ্রসমূহ।
[1] হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের পর্যটন কেন্দ্রসমূহ : হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের পশ্চিমে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে পূর্বে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত বহু পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগর, গুলমার্গ, পাহালগাম, সােনমার্গ এবং অমরনাথ ইত্যাদি উল্লেখযােগ্য পর্যটন কেন্দ্র। হিমাচল প্রদেশের সিমলা, কুলু মানালি; উত্তরাঞ্চলের হরিদ্বার, হৃষীকেশ, কেদারনাথ, বদরীনাথ, গঙ্গোত্রী, নৈনিতাল ইত্যাদি উল্লেখযােগ্য পর্যটন কেন্দ্র। পূর্বদিকে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, মিরিক; সিকিমের গ্যাংটক; মেঘালয়ের শিলং; নাগাল্যান্ডের কোহিমা; মণিপুরের ইম্ফল; ত্রিপুরার আগরতলা; আসামের উপত্যকা অঞ্চল ইত্যাদি হল প্রধান প্রধান পর্যটন কেন্দ্র।
[2] উত্তর ভারতের বৃহৎ সমভূমি অঞ্চলের পর্যটন কেন্দ্রসমূহ : পশ্চিমে রাজস্থান থেকে পূর্বে সুন্দরবন পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পর্যটনশিল্পকেন্দ্রগুলি অবস্থিত। রাজস্থানের পর্যটন কেন্দ্রগুলি হল— জয়সলমির, যােধপুর, বিকানীর, জয়পুর। পাঞ্জাবের লুধিয়ানা, পাতিয়ালা, ভাটি হরিয়ানার আম্বালা, কুরুক্ষেত্র, পাণিপথ; দিল্লি; চণ্ডীগড়: উত্তরপ্রদেশের বৃন্দাবন, এলাহাবাদ, বারাণসী, লক্ষ্ণৌ, আগ্রা, আলিগড় ইত্যাদি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। বিহারের পাটনা, নালন্দা, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, সুন্দরবন, শান্তিনিকেতন ইত্যাদি উল্লেখযােগ্য পর্যটন কেন্দ্র।
[3] দাক্ষিণাত্যের মালভূমি এবং উপকূলবর্তী অঞ্চলের পর্যটন কেন্দ্রসমূহ : গুজরাতের ভাদোদরা, রাজকোট, জামনগর, সােমনাথ, দ্বারকা, গির অরণ্য; মহারাষ্ট্রের অজন্তা, ইলােরা, খালা, লােনাভলা, পুনে, নাগপুর, নাসিক, কোলাপুর উল্লেখযােগ্য পর্যটন কেন্দ্র। গােয়ার বিভিন্ন চার্চ, হেরিটেজ বাড়ি এবং সমুদ্র সৈকত; ওডিশার পুরী, ভুবনেশ্বর, কোনারক, কোরাপুট, উদয়গিরি; ঝাড়খণ্ডের রাঁচি, জামসেদপুর, দুমকা, ধানবাদ; ছত্তিশগড়ের বিলাসপুর, রায়পুর; মধ্যপ্রদেশের খাজুরাহ, সাঁচি, পাঁচমারি, অমরকণ্টক, চিত্রকুট ইত্যাদি মধ্যভারতের উল্লেখযােগ্য পর্যটন কেন্দ্র। অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দ্রাবাদ, গােলকোণ্ড দুর্গ, শ্রীশৈলম; কর্ণাটকের মাইসাের, বিজাপুর, গুলবার্গা, শ্রীরঙ্গপত্তনম; তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লি, থাঞ্জাভুর, মাদুরাই, কাঞ্জিপুরম; কেরলের তিরুবনন্তপুরম, কোচি, পেরিয়ার, এর্ণাকুলাম ইত্যাদি হল দক্ষিণ ভারতের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। বঙ্গোপসাগরের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং আরব সাগরের লাক্ষাদ্বীপ হল অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র।
বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পর্যটন শিল্পের একাধিক গুরুত্ব রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম চারটি গুরুত্ব হল一
-
কর্মসংস্থান সৃষ্টি : পর্যটনশিল্পকে কেন্দ্র করে বহু মানুষের কাজের সুযােগ তৈরি হয়।
-
জাতীয় আয় বৃদ্ধি : কোনাে দেশ পর্যটন শিল্পে উন্নতি লাভ করলে সেই দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়।
-
পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি : পর্যটনশিল্পকে কেন্দ্র করে কোনাে একটা জায়গার পরিবহণ এবং যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটে।
- পটনশিল্পকেন্দ্র অঞ্চলের উন্নতি : পর্যটনশিল্পকেন্দ্র গড়ে ওটার সাথে সাথে ঐ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থার সামগ্রিক উন্নতি ঘটে।
Leave a comment