ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভার দুটি কক্ষ রয়েছে। এই দুটি কক্ষের নাম হল রাজ্যসভা (উচ্চকক্ষ) এবং লোকসভা (নিম্নকক্ষ)। এই কক্ষ দুটির ক্ষমতার তুলনামূলক আলােচনা নিম্নে আলােচনা করা হল一

রাজ্যসভা :

(1) রাজ্যসভার সদস্য হতে গেলে প্রার্থীকে অন্তত ৩০ বছর বয়স্ক হতে হবে।

(2) বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে ২৩৮ জন সদস্য পরােক্ষভাবে নির্বাচিত হন এবং ১২ জন সদস্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনােনীত হন। বিধানসভার নির্বাচিত সদস্যবৃন্দের দ্বারা অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধিরা একক হস্তান্তরযােগ্য সমানুপাতিক ভোটের দ্বারা নির্বাচিত হন। অপরদিকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল থেকে একটি নির্বাচনী সংস্থা একই পদ্ধতিতে সদস্যদের/ প্রতিনিধিদের নির্বাচন করে থাকে।

(3) রাজ্যসভার সর্বাধিক সদস্য সংখ্যা ২৫০ জন। এদের মধ্যে ২৩৮ জন সদস্য বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে পরােক্ষভাবে নির্বাচিত হন এবং ১২ জন সদস্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনােনীত সদস্য হিসেবে বিবেচিত হন। যদিও বর্তমানে রাজ্যসভার মােট সদস্য সংখ্যা ২৪৫ জন।

(4) রাজ্যসভার একক যে-কোনাে সদস্যের কার্যকালের মেয়াদ ৬ বছর ধার্য করা হয়েছে।

(5) রাজ্যসভায় পদাধিকার বলে উপরাষ্ট্রপতি সভাপতিত্ব করে থাকেন। 

(6) রাজ্যসভা একটি স্থায়ী কক্ষ। এই কারণে রাজ্যসভাকে ভেঙে দেওয়া যায় না। এরজন্যই রাজ্যসভার গুরুত্ব ও মর্যাদাকে কখনােই অস্বীকার করা যায় না।

(7) অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা রাজ্যসভার হাতে খুবই সীমিত। কারণ, রাজ্যসভায় কোনাে অর্থ বিল উত্থাপিত হতে পারে না। রাজ্যসভা শুধুমাত্র অর্থ বিলের উপর সংশােধনী প্রস্তাব আনতে পারে মাত্র, কিন্তু তা গ্রহণ করা বা না করা লোকসভার উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে।

(8) মন্ত্রীপরিষদ রাজ্যসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকে না।

লোকসভা :

(1) লোকসভার সদস্য হতে গেলে প্রার্থীকে অন্তত ২৫ বছর বয়স্ক হতে হবে।

(2) লোকসভার প্রতিনিধিদের নির্বাচন পদ্ধতি খানিকটা আলাদা। এখানে অঙ্গরাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রতিনিধিবর্গ সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকারের ভিত্তিতে জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। বিশেষ করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রতিনিধিরা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে থাকেন।

(3) লোকসভা সর্বমােট সদস্য সংখ্যা ৫৫২ জন। এদের মধ্যে ৫৩০ জন সদস্য অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত হয়েছেন, ২০ জন সদস্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন এবং ২ জন ইঙ্গ- ভারতীয় সদস্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনােনীত হয়েছেন। যদিও বর্তমানে লোকসভার সদস্য সংখ্যা ৫৪৫ জন, কারণ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রতিনিধি সংখ্যা বর্তমানে ১৩ জনে এসে দাঁড়িয়েছে।

(4) লোকসভার সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ ৫ বছর ধার্য করা হয়েছে। জরুরি অবস্থা চালু থাকার সময়ে পার্লামেন্ট আইন করে লোকসভার মেয়াদ এক-এক করে ১ বছর বৃদ্ধি করতে পারে।

(5) লোকসভায় সভাপতিত্ব করেন স্পিকার বা অধ্যক্ষ।

(6) লোকসভা একটি অস্থায়ী কক্ষ বলে বিবেচিত হয়। কারণ লোকসভার কার্যকালের মেয়াদ পাঁচ বছর নির্ধারিত হলেও, কার্যকাল শেষ হওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি লোকসভা ভেঙে দিতেই পারেন।

(7) অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতায় লোকসভার একক প্রাধান্য লক্ষ করা যায়। অর্থ বিল একমাত্র লোকসভায় উত্থাপিত হয়। লোকসভায় গৃহীত হওয়ার পর অর্থ বিলকে রাজ্যসভার অনুমােদনের জন্য পাঠানাে হয়। রাজ্যসভা ১৪ দিনের মধ্যে বিলটিকে অনুমােদন না দিলে ১৪ দিন পরে উভয় কক্ষ কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। বলে ধরে নেওয়া হয় এবং সেই বিলটি রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠানাে হয়। অর্থ বিলের ক্ষেত্রে লোকসভার স্পিকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়।

(8) সংবিধানের ৭৫ (৩) নং ধারানুসারে লোকসভার নিকট কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদ দায়বদ্ধ থাকে। লোকসভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হলে মন্ত্রীপরিষদকে পদত্যাগ করতে হয়।