সিমলা সম্মেলনের সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে লর্ড কার্জন 1902 খ্রিস্টাব্দের 27 জানুয়ারি স্যার টমাস র্যালের নেতৃত্বে ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন নিয়ােগ করেন।

কমিশনের মূল রিপাের্টে যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল, তার মধ্যে থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ এখানে উল্লেখ করা হল一

(1) নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন রোধ: 1902 খ্রিস্টাব্দে যখন ভারতবর্ষের উচ্চশিক্ষাব্যবস্থা পর্যালোচনার জন্য ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন নিয়ােগ করা হয়, তখন এদেশে ব্যাঙ্গালাের, ত্রিচিনাপল্লি, ত্রিবান্দ্রম, আলিগড়, নাগপুর, রেঙ্গুন প্রভৃতি স্থানে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা চলছিল। কিন্তু কমিশন ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি স্থাপনের কাজ স্থগিত রাখার বিষয়ে অভিমত ব্যক্ত করে।

(2) বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের দায়িত্ব নির্ধারণ: কমিশন তৎকালীন তিনটি পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়কে অর্থাৎ কলিকাতা, মাদ্রাজ ও বােম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষপধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার পরামর্শ দেয়। বলা হয়, উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার জন্য প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে নিজস্ব গ্রন্থাগার, গবেষণাগার, অধ্যাপক-আবাস, ছাত্রাবাস এবং প্রয়ােজনীয় সুযােগসুবিধা।

(3) বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আঞ্চলিক সীমা নির্ধারণ: কমিশন লক্ষ করে, মাধ্যমিক শিক্ষার সম্প্রসারণের ফলে এবং বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণের চাহিদা মেটাতে গিয়ে এক-একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন কলেজ গড়ে উঠেছিল। এগুলির মধ্যে অনেকগুলি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না। তাই কমিশন প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার সুপারিশ করে।

(4) কলেজীয় শিক্ষার মানোন্নয়ন: কমিশন কলেজীয় শিক্ষার মানােন্নয়নের জন্য কলেজগুলিকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করে দেওয়ার সুপারিশ করে। নিম্নমানের কলেজগুলির শিক্ষার মানােন্নয়নের চেষ্টা করতে হবে। সব ধরনের চেষ্টা করেও যে কলেজগুলির মান উন্নয়ন করা যাবে না, সেগুলিকে স্নাতক পর্যায়ের পরিবর্তে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করতে হবে।

(5) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন: বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য কমিশন সিনেটের সদস্যসংখ্যা হ্রাস করার সুপারিশ করে। কমিশনের মতে, সিনেটের সদস্যসংখ্যা 50 জনের কম এবং 100 জনের বেশি হতে পারবে না| এদের মধ্যে ৪0 শতাংশ সদস্য মনােনীত হবেন। এবং 20 শতাংশ সদস্য নির্বাচিত হবেন। সদস্যদের কার্যকাল হবে পাঁচ বছরের জন্য। তবে প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের 20 শতাংশ সদস্য পদত্যাগ করতে বাধ্য থাকবেন এবং তাদের পরিবর্তে নতুন সদস্য গ্রহণের ব্যবস্থা থাকবে। সিনেটে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষক, বিশিষ্ট বিদ্বান ব্যক্তি, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী প্রমুখ যাতে সুযােগ পান তার জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হবে সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটে 9 থেকে 15 জন সদস্য থাকবেন। তারা সিনেটের সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হবেন।

(6) ছাত্রকল্যাণমূলক ব্যবস্থা: বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার অনুমােদিত কলেজগুলিতে যাতে ছাত্রকল্যাণমূলক ব্যবস্থা থাকে, সে সম্পর্কেও কমিশন সুপারিশ করেন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার, পরীক্ষপাগার, হােস্টেল, খেলার মাঠ, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ, আর্থিক অবস্থা অনুযায়ী বেতন হার প্রবর্তনের ব্যবস্থা ইত্যাদি ছাত্রকল্যাণকর দিকগুলি পর্যবেক্ষণ করেই তাদের অনুমােদনদানের বিষয়টি স্থির করতে হবে।

(7) অন্যান্য সুপারিশ কমিশন পরীক্ষাব্যবস্থার সংস্কার প্রসঙ্গে আলােচনা করতে গিয়ে আরও কতকগুলি। সুপারিশ করে। সেগুলি হল

  • বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম নির্ধারণ ও পরীক্ষা সংক্রান্ত ব্যাপারে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসুচি গ্রহণ করতে হবে।