ইন্দো-রােম বাণিজ্যের প্রভাব পড়েছিল ভারত এবং রােম উভয় দেশের ওপরই। ভারত ও পাশ্চাত্য উভয় দেশই মূলত মৌর্যোত্তর যুগের সময়কালে বাণিজ্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।

[1] ভারতের ওপর

  • সমৃদ্ধশালী নগরের উদ্ভব: ইন্দো-রোম অর্থাৎ ভারত রােম বাণিজ্যের সুবাদে সাতবাহন শাসনাধীন দাক্ষিণাত্যে ও কুষাণ শাসনাধীন উত্তর ভারতে বেশ কিছু সমৃদ্ধশালী নগরের উদ্ভব ঘটে। দক্ষিণ ভারতে উদ্ভব ঘটেছিল এমন কয়েকটি নগর হল—অমরাবতী, পৈঠান, সােপারা, কাবেরীপত্তনম প্রভৃতি। উত্তর ভারতে উদ্ভব ঘটেছিল এমন কয়েকটি নগর হল -মথুরা, বারাণসী, কৌশাম্বী।

  • শিল্প সাংস্কৃতি: বাণিজ্যের ফলে রােমান শিল্প সংস্কৃতির দ্বারা ভারতীয় শিল্প সংস্কৃতি প্রভাবিত হয়। বিশেষত শিল্পের ওপর গ্রিক-রােমান শিল্প ও স্থাপত্যশৈলীর যথেষ্ট প্রভাব পড়ে। ফলে ভারতে গান্ধার শিল্প নামে এক নতুন শিল্পরীতির উদ্ভব ঘটে।

[2] রোমের ওপর

  • চিকিৎসাবিজ্ঞানে: রােম-ভারত বাণিজ্যের সুবাদে রােমে ভারতীয় চিকিৎসাবিজ্ঞান-বিষয়ক ধারণার অনুপ্রবেশ ঘটে। ভারতীয়দের লতা-গুল্মভিত্তিক ভেষজ চিকিৎসাজ্ঞানের পরিচয় লাভ করে রােমানরা।

  • মশলার ব্যবহার: রােম-ভারত বাণিজ্যের সুবাদে রােমের বণিকরা দক্ষিণ ভারত থেকে মশলা কিনে দেশে নিয়ে যেত। রােমে ভারতীয় মশলার বিশেষ চাহিদা ছিল। ভারত থেকে বিভিন্ন প্রকারের মশলা রােমে রপ্তানি হওয়ার ফলে রােমানদের রন্ধন প্রণালী এবং খাদ্য তৈরিতে উল্লেখযােগ্য পরিবর্তন আসে৷

প্রাচীন ভারতে সর্বপ্রথম হরপ্পা সভ্যতার যুগে নগর সভ্যতার সূচনা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ষােড়শ মহাজনপদের যুগে এবং তৃতীয় পর্যায়ে আদি-মধ্যযুগে বহু নতুন নতুন নগরের উদ্ভব হয়। প্রাচীন ভারতে নগরের উদ্ভবের বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন一

[1] গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র গড়ে ওঠা: ড. রামশরণ শর্মার মতে, সামরিক ছাউনি, প্রশাসনিক কেন্দ্র, যাতায়াতের কেন্দ্র, শিল্পী ও কারিগরদের বসবাস প্রভৃতি স্থানে জনসমাগম বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সেখানে ক্রমে নগরের বিকাশ ঘটে।

[2] ধর্মস্থানের আকর্ষণ: প্রাচীন ভারতে ধর্মীয় কারণে বিভিন্ন ধর্মস্থানগুলিকে কেন্দ্র করে নগরজীবন প্রতিষ্ঠা হয়। শ্রাবস্তী, বারাণসী, গয়া, রাজগৃহ, নালন্দা, পাটলিপুত্র প্রভৃতি থানগুলির সঙ্গে বুদ্ধের ধর্মপ্রচার ও নির্মাপের বিষয় যুক্ত হয়ে এগুলি জনপ্রিয় নগরে পরিণত হয়।

[3] কৃষি, বাণিজ্য ও শিল্পের বিকাশ: ড. কোশাম্বী ও ড. শর্মা দেখিয়েছেন যে, লােহার লাঙল ব্যবহারের ফলে কৃষিক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত উৎপাদন সম্ভব হয়। উদ্বৃত্ত কৃষিপণ্যের ওপর ভিত্তি করে ব্যাবসাবাণিজ্য ও কারিগরি শিল্পের সূচনা এবং এই কেন্দ্রগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সেখানে নগরের উন্মেষের পটভূমি তৈরি হয়।

[4] রাজনৈতিক আধিপত্য: ঐতিহাসিক অমলানন্দ ঘােষ মনে করেন যে, রাজতন্ত্রের সূচনার পর রাজা তার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃষকের উদ্বৃত্ত পণ্যের বড়াে অংশ দখল করে নেয়। এভাবেই গাঙ্গেয় উপত্যকায় রাজার রাজনৈতিক আধিপত্য বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন স্থানে রাজকীয় প্রশাসনিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কেন্দ্রগুলি ক্রমে নগরায়ণের পথ প্রশস্ত করে।