ভূমিকা: ছােটোগল্পের নামকরণের অনেকগুলি রীতি প্রচলিত। চরিত্রপ্রধান, ঘটনাপ্রধান, বিষয়বস্তুনির্ভর, ব্যঞ্জনাপ্রধান ইত্যাদি। ভারতবর্ষ গল্পের নামকরণের ক্ষেত্রে ব্যঞ্জনাপ্রধান নামকরণের রীতি অনুসরণ করতে দেখা যায়। কাহিনিতে একবারও ‘ভারতবর্ষ’ নামের উল্লেখটুকুও নেই। কিন্তু নানাভাবে যেন বৈচিত্র্যময় ভারত তার সমাজবাস্তবতা নিয়ে উকি দিয়ে যায় এই গল্পে।
চা-এর দোকানে একটুকরাে ভারত : শীতের দুর্যোগে চায়ের দোকানে জড়াে হয় যে কর্মহীন কৃষিনির্ভর মানুষেরা, ফসল নষ্টের সম্ভাবনায় শঙ্কিত হয়ে থাকে যারা—যার জন্য তাদের ঈশ্বর বিশ্বাসে সংশয় তৈরি হয়তারা গল্পে রাঢ় বাংলার একটা গ্রামের মানুষ হলেও আসলে গােটা ভারতেরই প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের আড্ডা এবং আলােচনাতেও উঠে আসে গােটা ভারত। বােম্বাই চলচ্চিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি, মুখ্যমন্ত্রী, বিধায়ক এমনকি পাড়ার সরা বাউরিও আলােচনার বিষয় হয়।
কাহিনির পরিণতিতে ভারতবর্ষের ব্যঞ্জনা : চায়ের দোকানে আগত বৃদ্ধার মৃতদেহকে কেন্দ্র করে হিন্দু ও মুসলমান—এই দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় গ্রামের মানুষেরা। দু-পক্ষই মৃতদেহের অধিকার দাবী করে। আপাত সহাবস্থানের আড়ালে গােপন সাম্প্রদায়িকতা যেন স্পষ্ট হয়ে ওঠে মােল্লাসাহেব বনাম ভট্চাজমশাই, নকড়ি নাপিত বনাম ফজলু সেখ, নিবারণ বাগদি বনাম করিম ফরাজির দ্বন্দ্বে। গােটা গ্রাম অস্ত্র হাতে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। এই সময়েই বুড়ির মৃতদেহ নড়ে ওঠে। বুড়ি উঠে দাঁড়ায়। ভিড়ের দিকে তাকিয়ে বিকৃত হাসে, যেন তাদের ধর্মান্ধতার প্রতি ব্যঙ্গ উগরে দেয়। তারপরে বৃদ্ধ রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকে। যেন বৃদ্ধা নয়, উঠে দাঁড়ায় সম্প্রীতির ভারত, যার চোখে ধর্মান্ধতার প্রতি ঘৃণা। হিন্দু অথবা মুসলমান পরিচয়ে যে নিজেকে চিহ্নিত করতে চায় না। এভাবেই প্রতীক ব্যঞ্জনায় অসামান্য হয়ে ওঠে ‘ভারতবর্ষ’ গল্পের নামকরণই।
Leave a comment