প্রতিভা এমন জিনিস, এ যাকে স্পর্শ করে তাকে সজীব করে।
ভাব-সম্প্রসারণ : প্রতিভা হলাে ঈশ্বর প্রদত্ত গুণ বা শক্তি, যার সাহায্যে অসম্ভবকে সম্ভব করে তােলা যায়। প্রতিভা সাফল্যের উৎস। জীবনে সফলতা অর্জন করতে প্রতিভার একান্ত প্রয়ােজন। প্রতিভা ব্যতীত সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আরােহণ করা অসম্ভব। একবার প্রতিভা যাকে স্পর্শ করে ব্যর্থতার গ্লানি তার জীবন থেকে দূরীভূত হয়ে যায়।
প্রতিভা মানুষের এক অসামান্য অনবদ্য গুণ, যা দ্বারা মানুষ দুরূহ কার্য সাধন করতে পারে। প্রতিভা থেকেই সৃজনশীলতার জন্ম হয় । তাই প্রতিভাশীল মানুষকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে গণ্য করা হয় । মানুষের যথার্থ ব্যক্তিত্ব বিকশিত হওয়ার ক্ষেত্রেও প্রতিভা। গুণটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে। প্রকৃতপক্ষে, প্রতিভা শব্দটির অর্থ হলাে- সহজাত ও অসামান্য পাণ্ডিত্য, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব উদ্ভাবনী বুদ্ধি এবং অপূর্ব সৃষ্টি শক্তিসম্পন্ন মনীষা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, প্রচুর কবিতা পাঠ করলেই বা কৃত্রিমভাবে ধ্যান নিমগ্ন হলেই কবি হওয়া যায় না। স্বভাবজাত ক্ষমতা ও শক্তির প্রয়ােজন হয়। অনুরূপভাবে অসামান্য বুদ্ধি দ্বারা স্বভাবজাত শক্তি ব্যবহার করে কেউ কিছু উদ্ভাবন করলে তাকে বলে বৈজ্ঞানিক প্রতিভা । মূলত, প্রতিভা ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব- এ দুই গুণের সমন্বয় ঘটলে সেখানে সৃষ্টি হয় প্রকৃত প্রতিভা । অভিজ্ঞতাজাত সঞ্চিত জ্ঞানকে মুহুর্তে ব্যবহার করার ক্ষমতাই প্রত্যুৎপন্নমতিতু। শুধু কষ্ট ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে তা অর্জন করা যায় না; এর জন্য সহজাত প্রতিভা শক্তি থাকা চাই। আহারত জ্ঞানকে যথার্থ সময়ে উপযুক্ত ক্ষেত্রে প্রয়ােগ করার শক্তিই হলাে প্রজ্ঞা । দার্শনিক দূরদৃষ্টি অর্থাৎ অদূর ভবিষ্যতে কী হবে তা বুঝতে পারলেই প্রজ্ঞাবান হওয়া যায় । প্রতিভাবান ব্যক্তির প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, উদ্ভাবনী বুদ্ধি ও সৃষ্টিশক্তির প্রকাশের মাধ্যমেই তার সজীবতা ও প্রাণশক্তি পূর্ণমাত্রায় প্রতিভাত হয়ে ওঠে। তাই বলা যায়, প্রতিভা যার থাকে তার একনিষ্ঠ সাধনা নিরলস পরিশ্রম, অনুসন্ধিৎসা এবং প্রবল ইচ্ছাশক্তির সম্মিলনে শারীরিক ও মানসিকভাবে এমন এক শক্তি অর্জিত হয়, যা বিরাট সম্ভাবনাকে পৃথিবীতে মূর্ত করে তােলে। প্রােদ্ভিন্ন সত্তার দিব্যরূপ প্রতিষ্ঠিত শক্তি দেখে আমরা বিস্মিত হই এবং সেই ভাগ্যবান প্রতিভাশালীর প্রশস্তি পাঠ করি। বস্তুত প্রতিভা যার থাকে, তার বিকাশ ও প্রকাশ অবশ্যম্ভাবী। প্রতিভারূপ গুণের অধিকারী। ব্যক্তির জীবন পরম সাফল্যময়।
প্রতিভা এক পরশ পাথর। এ প্রতিভার স্পর্শে মানুষ পৃথিবীতে অমরত্ব লাভ করে । জগতে যেসকল মনীষী খ্যাতি অর্জন করে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন, তাঁরা সকলেই ছিলেন আলােকপূর্ণ প্রতিভাবান । তাদের প্রত্যেকের জীবনকে প্রতিভা স্পর্শ করেছিল । তাই প্রতিভাকে অবিশ্বাস বা অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রতিভা তৈরি করা যায় না, প্রতিভা জন্ম নেয়। অতএব মানুষের জীবনকে বিকশিত ও সার্থক করার ক্ষেত্রে বিধাতার দান প্রতিভা সত্যিই এক বিস্ময়কর শক্তি।
Leave a comment