দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর।

ভাব-সম্প্রসারণ : নাগরিক সভ্যতার সর্বনাশা সােতে মানবজীবন আজ অতিষ্ঠ । তাই মানুষ যন্ত্রণাময় নগর জীবনের সীমানা পেরিয়ে গ্রামীণ আরণ্যক পরিবেশে ফিরে আসতে চায় । অরণ্য প্রকৃতির শ্যামল শােভা আর ছায়াময় পরিবেশে মানুষের সামাজিক জীবনের সূত্রপাত ঘটেছিল। সবুজ বৃক্ষলতা পরিবেষ্টিত পর্ণকুটিরে গড়ে উঠেছিল সাংসারিক জীবনের ভিত। ছায়াঢাকা, পাখিডাকা সবুজ অরণ্যানীর সুবিস্তৃত পরিসরে মানুষের জীবনের প্রবাহ ছিল ঝরনাধারার মতাে প্রাণচঞ্চল। ঝিরঝিরে উদাস হাওয়া আর দূরাকাশের নীলিমা মানুষের মনে কল্পনার জাল বিস্তার করত। গ্রামীণ সুনিবিড় স্নিগ্ধ পরিবেশে মানুষের জীবন ছিল গ্লানিহীন ও আনন্দমুখর। মানুষে মানুষে ছিল। পরম সদ্ভাব । মােহযুক্ত জীবন আর প্রীতিময় সামাজিক সম্পর্ক মানুষকে মানবিক মর্যাদায় উন্নত শিরে বাঁচার অনুপ্রেরণা জোগাত। কিন্তু আধুনিক সভ্যতার বর্ণিল ঝলকানি মানুষকে গ্রামের উদার উন্মুক্ত আরণ্য পরিবেশ থেকে নিয়ে গেল নগরের সংকীর্ণ আঙিনায়। মানুষ বন্দি হলাে ইট-পাথরের চার দেয়ালের ভেতর। জীবন হয়ে পড়ল কৃত্রিম, আনন্দহীন । মানুষে মানুষে প্রাণময় মধুর সম্পর্ক তিরােহিত হলাে। নগর-সভ্যতা মানুষকে আত্ম-ভাবনায় অস্থির করে তুলল । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে নগর-সভ্যতা বিস্তৃত হলাে। অরণ্য-প্রকৃতি ধ্বংস করে দিকে দিকে নির্মিত হলাে সুউচ্চ অট্টালিকা। স্থাপিত হলাে অজস্র শিল্পকলকারখানা। জীবনের প্রাচুর্য খুঁজতে গিয়ে মানুষে মানুষে শুরু হলাে তীব্র প্রতিযােগিতা। ধনের প্রাচুর্যে মনের শান্তি হারিয়ে গেল। মানুষ বুঝতে শুরু করল প্রকৃতির সবুজ আঙিনা ছাড়া মনের প্রশান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তাই নগর-সভ্যতার কৃত্রিম আয়ােজন ও ভােগ-বিলাস ছেড়ে মানুষ এখন গ্রামীণ পরিবেশে শান্তি ও স্বস্তি খুঁজে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। হেথা নয়, হােথা নয়, অন্য কোথা— কোনাে খানে যাওয়ার বাসনায় নগরের মানুষ ব্যাকুল হয়ে পড়েছে। নগর-সভ্যতা মানুষকে প্রকৃত . সুখ দিতে পারছে না। নাগরিক জীবন আজ ভয়ংকর সংকটের সম্মুখীন। তাই প্রকৃতির অনাবিল পরিবেশ ধ্বংস করে যে মানুষ একসময় নগর-সভ্যতা নির্মাণ করেছিল, সে মানুষই আবার শান্তি-সুখের প্রত্যাশায় সবুজ বৃক্ষরাজি ঘেরা গ্রামীণ পরিবেশে ফিরে যেতে উদগ্রীব।