চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ

ভাব-সম্প্রসারণ : মানুষের সর্বোৎকৃষ্ট গুণাবলির মধ্যে চরিত্র উত্তম । উৎকর্ষ কিংবা অনাকর্ষ নির্ভর করে চরিত্রের ওপর । তাই উত্তম চরিত্রের মানুষ সর্বক্ষেত্রেই মান-সম্মান পান; অন্যদিকে চরিত্রহীন মানুষ সর্বত্রই ঘৃণিত । মানুষের প্রকৃত পরিচয় নিহিত থাকে তার চরিত্রে। চরিত্রেরই মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায় মনুষ্যত্ব। একটি ফুলের সৌন্দর্য আর সুরভি যেমন ফুলের সার্থকতা বহন করে; তেমনি উত্তম চরিত্রের মধ্যেই মানুষের সার্থকতা। তাই বিখ্যাত ইংরেজ লেখক স্যামুয়েল স্মাইলস্ তার ‘Character’ প্রবন্ধে যথার্থই উল্লেখ করেছেন- ‘The Crown and glory of life is character’। প্রকৃতপক্ষে সততা, সত্যনিষ্ঠা, প্রেম, পরােপকার, দায়িত্ববােধ, শৃঙ্খলা এবং কর্তব্যপরায়ণতা যা চরিত্রের মৌলিক উপাদান। আর উত্তম চরিত্রের মানুষই তারা যারা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজের জীবনে চরিত্রের এসব উপাদান গ্রহণ করে। ফলে এর বহিঃপ্রকাশে সমাজ-সংস্কৃতিতে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ ধরনের উত্তম চরিত্রের মানুষ তাই একসময় রাষ্ট্রের সম্পদ, ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়। সমাজ, দেশ এবং জাতি অনেক উপকৃত হয়। কিন্তু আধুনিক যুগে চরিত্র গঠনের চেয়ে মানুষের ব্যাপক ঝোক দেখা যায় অর্থ-উপার্জনে। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, জীবনে অর্থের প্রয়ােজন রয়েছে । অর্থ-বিত্ত ছাড়া জীবন চলতে পারে না। তবে অর্থ-সম্পদের সুষম বণ্টন ব্যতীত কোনাে জাতিই তার মূল লক্ষ্যে পৌছাতে পারে। আর উত্তম-চরিত্রের মানুষই পারে অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে গণমানুষের সার্বিক কল্যাণ সাধন করতে । সুতরাং অর্থ উপার্জনের সঙ্গে উত্তম চরিত্র গঠনেও মানুষকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে । কিন্তু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, পৃথিবীতে চরিত্রহীন লােকের সংখ্যা নেহাত কম নয়। বিশ্বে নানা ধরনের সন্ত্রাস, অপরাধ আর দুর্নীতির মূলে চরিত্রহীনতাই মুখ্য ভূমিকা রাখে । কাজেই বিশ্বশান্তি তথা মানবকল্যাণে চরিত্রহীন লােকটি বড়াে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। বিশ্বায়নের এ যুগে মানুষ উত্তম-চরিত্রের অধিকারী হবে এটিই স্বাভাবিক। অন্যদিকে, তথ্য-প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহে ক্ষেত্রবিশেষে মানুষ ভয়ংকরভাবে মনুষ্যত্বহীন হয়ে পড়ে । তাই সহজেই উত্তম চরিত্রের মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর । এজন্য পৃথিবীব্যাপী সচেতনতা প্রয়ােজন। আমাদের স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়েও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা আশু প্রয়ােজন। পৃথিবীতে যারা উত্তম চরিত্রের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন সেইসব মনীষীদের জীবন এবং কর্ম আমাদের জীবন চলায় পাথেয় করতে হবে । আর উত্তম চরিত্র গঠন করাই প্রতিটি মানুষের সাধনা হওয়া উচিত । চরিত্র মানবজীবনের এক মহৎ শক্তির নাম। পার্থিব ধন-সম্পদ দিয়ে এর পরিমাপ করা যায় না। তাই চরিত্র সম্বন্ধে সেই প্রবাদটি উল্লেখযােগ্য : ‘When money is lost, nothing is lost, when health is lost, something is lost, but when character is lost, everything is lost.’

ভাব-সম্প্রসারণ