অর্থসম্পত্তির বিনাশ আছে
কিন্তু জ্ঞানসম্পদ কখনাে বিনষ্ট হয় না।
ভাব-সম্প্রসারণ: পৃথিবীতে প্রতিটি বস্তুর ক্ষয় বা ধ্বংস অনিবার্য । কিন্তু জ্ঞান অক্ষয়। কারণ কোনাে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের মধ্য (লে বা কিছু করেন তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে। তাই অন্য সকল সম্পদের বিনাশ থাকলেও জ্ঞানসম্পদের বিনাশ নেই। মানবজীবনে অর্থ-সম্পদ উপার্জন করা এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই মানুষ উদয়-অস্ত অপরিসীম পরিশ্রমে অর্থ-বিত্তের মালিক হন। অন্যদিকে, জ্ঞানসম্পদ অর্জন করা আরও কঠিন। শুধু শিক্ষা-শাস্ত্র দিয়েই জ্ঞানার্জন সম্ভব নয়। বরং মনুষ্যত্বের সমস্ত সুকোমল বৃত্তির চর্চা বা অনুশীলনই জ্ঞানার্জনের পথকে তৈরি করে দিতে পারে। তাই জ্ঞান ধন-সম্পত্তি নয় বরং জ্ঞান নিজেই একটি সম্পদ। ধন-সম্পত্তিতে শুধু একজন মানুষের বাহিরের দিকটি প্রকাশ পায়, অন্যদিকে জ্ঞান-সম্পদ মানুষের একান্ত অন্তরের সমৃদ্ধ অনুভূতিকে প্রাধান্য দেয়। সুতরাং জ্ঞানসম্পদের কাছে বৈশ্বিক ধন-সম্পদ ম্লান হতে বাধ্য। তাই অগাধ অর্থসম্পত্তির মালিক যেমন সারাজীবন রাশি রাশি টাকা-পয়সা উপার্জন করে, কলুর বলদের মতাে খেটে মরে, মানবকল্যাণে কোনাে অবদান রাখা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে, জ্ঞানী তার জ্ঞানের আলােকে মানবতার বৃহত্তর কল্যাণ সাধনে সক্ষম হন। সুতরাং মনীষীদের সেই অতি পরিচিত উক্তি ‘জ্ঞানই শক্তি’ । সভ্যতার সেই সূচনালগ্ন থেকে অদ্যাবধি অন্য সম্পদের সঙ্গে জ্ঞানসম্পদের কার্যকরী ভূমিকাই পৃথিবীকে আজ এত সুন্দর করেছে। আদিম গুহাবাসী মানুষের আগুন আবিষ্কার এবং যথাযথ ব্যবহার জ্ঞানের মধ্য দিয়েই সম্ভব হয়েছিল। তাই জ্ঞানের কদর সর্বত্রই। জ্ঞান যদি সম্পদই না হতাে তাহলে এ মহাদেশে পরাক্রমশালী বাদশা, সুলতান, সম্রাটরা অর্থ-বিত্তহীন কবি-সাহিত্যিক পণ্ডিতদের তাদের রাজদরবারে এত সম্মানে আদৃত করতেন না। সভাকবি এবং পণ্ডিতদের প্রতি স্বয়ং সম্রাট আকবরের শ্রদ্ধাই এ বিষয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বস্তুত পৃথিবীতে অন্যান্য সম্পদের যেমন হারানাের ভয় আছে, যেমন ধ্বংস আছে, অন্যের অংশ রয়েছে; সে প্রেক্ষাপটে জ্ঞানসম্পদ চিরস্থায়ী। কারণ জ্ঞানী তাঁর অর্জিত জ্ঞানসম্পদ দিয়ে পৃথিবীতে এমন কিছু করে যান, যা তার দৈহিক মৃত্যু হলেও অমর হয়ে থাকে। তাই আজ পৃথিবীতে জ্ঞানসম্পদে সমৃদ্ধ ব্যক্তিগণই দেশ ও জাতির সম্পদে পরিণত হয়েছেন। মহানবি হজরত মুহম্মদ (সা.) জ্ঞানসম্পদকে এভাবে উল্লেখ করেছেন, “জ্ঞানীর কলমের কালি শহিদের রক্তের চেয়েও পবিত্র’ । তিনি দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত মানুষকে জ্ঞানার্জনের উপদেশ দিয়েছেন। এছাড়াও জ্ঞানার্জনের জন্য তিনি সুদূর চীনেও যেতে উৎসাহিত করেছেন। জ্ঞানার্জন ধনার্জনের চেয়েও শ্রেষ্ঠ । সুতরাং শুধু ধনার্জনে ব্যস্ত থাকা মানবজীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়, বরং জ্ঞানার্জনের মধ্য দিয়ে মানবতার কল্যাণ-সাধনই বড়াে কথা। এরূপ কাজের মাধ্যমেই মানুষ লাভ করে অমরত্ব। সুতরাং অর্থ-সম্পত্তি অস্থায়ী, অন্যদিকে জ্ঞানসম্পদ স্থায়ী।
Leave a comment