অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে
তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে। 

ভাব-সম্প্রসারণ : আইনের দৃষ্টিতে অন্যায়কারীর অপরাধ দণ্ডযােগ্য। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন্যায়ের দণ্ড না দিয়ে, অন্যায়ের সাথে আপস করা হয়; ফলে অন্যায়-প্রবণতা বেড়ে যায়। সুতরাং অন্যায়কারী আর অন্যায় সহ্যকারী উভয়ই সমান অপরাধী। আদিকাল থেকেই হাতে গােনা কয়েকজন অপরাধীর অপকর্মেই হয়তাে খেসারত দিতে হয়েছে রাষ্ট্রের কিংবা সমাজের : সকলের। অন্যায়কারী সমাজের অভ্যন্তরে নানা দুর্নীতি, উৎপীড়ন এবং অরাজকতা সৃষ্টি করে যেকোনাে ব্যক্তির অধিকার হরণ করে তার নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে। প্রতিনিয়ত সংঘটিত হচ্ছে নানা ধরনের অপরাধ। সময়ের পরিবর্তনে প্রযুক্তির কল্যাণে অপরাধী অসংখ্য অন্যায়ে জড়িত। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সােচ্চার প্রতিবাদ নেই। অনায়াসে পার পেয়ে যাচ্ছে তারা। বরং নিঃশব্দে অপরাধ সহ্য করার মানসিকতা অপরাধের নামান্তর। ক্ষমা একটি মহৎগুণ, কিন্তু নির্বিচারে ক্ষমা করা অপরাধ প্রবণতা আরও বাড়িয়ে দেয়। ক্ষেত্রবিশেষে উদারতার কথা বললেও অন্যায়কে সমর্থন করা হয়। অন্যায়ের, বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিবাদ না করে বরং ভীরু কাপুরুষের মতাে মাথা নত করাই যেন মানুষের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। নিজেকে অধিক নিরাপদে রাখতেই চোখের সামনে ঘটে যাওয়া অপরাধের কোনাে প্রতিবাদ না করে নীরব থাকাও পরােক্ষভাবে অন্যায়কে সমর্থন করা হয়। অন্যায়কারীরা মানুষের এই দুর্বলতাকে পুঁজি করে অন্যায়ে উৎসাহ পায়। নানা দল, গােত্রে এবং তথাকথিত রাজনীতিক বলয়ে অন্যায়কারীরা তাদের ভিতকে মজবুত করে। এরূপ প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ অসহায় মানুষ। তাদের অসহায়ত্বের সুযােগ অন্যায়কারী কাজে লাগায়। পৃথিবীব্যাপী উচ্চবিত্তরা, প্রভাবশালীরা একরকম ছাড় দিয়ে অপরাধীদের সাথে বন্ধুত্ব করে। ফলে মানবসভ্যতায় অন্যায় সয়ে গিয়ে আদৃত হয়। কিন্তু মনুষ্যত্বের বিচারে এই ক্ষমা, আপস-রফা আর অন্যায়কে মেনে নেওয়ায় শাস্তি পেতেই হবে। বিশ্বে নির্বিঘ্নে অপরাধ বেড়ে চলছে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ঐক্যহীনতা, সাম্প্রদায়িকতা, পুঁজিবাদের আস্ফালনসহ নানাবিধ কারণে বিশ্বে এক অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যায়কে মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বরং অন্যায়কারী আর অন্যায় প্রশ্রয়দানকারী উভয়ই সমান অপরাধী- এ স্লোগানে বিশ্ববিবেক জাগাতে হবে।