সূচনা: ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং আইনে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে প্রাচ্যদেশে বাণিজ্য করার জন্য সরকারের কাছ থেকে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে অনুমােদন বা সনদ নেওয়ার কথা বলা হয়।

১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট

শর্তাবলি: ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টের দ্বারা- [a] ভারতে কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের মেয়াদ ২০ বছর বাড়ানাে হয়। [b] বাের্ড অব কন্ট্রোলের সদস্য সংখ্যা ৬ থেকে কমিয়ে ৫ জন করা হয়। [c] ভারতীয় রাজস্ব থেকে এই সদস্যদের বেতন ও ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। [d] বােম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সের ওপর গভর্নর-জেনারেলের কর্তৃত্ব আরও বাড়ানাে হয়। [e] কোম্পানির কর্মচারীদের শূন্যপদগুলিতে নিয়ােগের ক্ষেত্রে ভারতে অন্তত ৩ বছর বসবাসকারী অভিজ্ঞ ইংরেজদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়।

গুরুত্ব: এই আইনে গভর্নর-জেনারেলের ক্ষমতা বৃদ্ধি হলেও শাসন-সংক্রান্ত বিষয়ে খুব বেশি পরিবর্তন ঘটেনি।

১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট

শর্তাবলি: ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টের দ্বারা- [a] ভারতে কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার লােপ করা হয়। [b] ভারতীয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ওপর ব্রিটিশরাজের সার্বভৌমত্ব ঘােষিত হয়। [c] কোম্পানি আরও ২০ বছরের জন্য ভারতে শাসন পরিচালনার অধিকার পায়। [d] কোম্পানির আদায় করা রাজস্ব থেকে বার্ষিক ১ লক্ষ টাকা ভারতীয়দের সাহিত্য ও বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য ব্যয় করার কথা বলা হয়। [e] কোম্পানির সামরিক ও বেসামরিক পদে নিযুক্ত হওয়ার জন্য যথাক্রমে এডিসকোম ও হেইলেবেরি কলেজ থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়।

গুরুত্ব: এই আইনে- [a] কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অবসানের ফলে সকল ব্রিটিশ বণিকরা ভারতে ব্যাবসা করার সুযােগ পায়। [b] কোম্পানিকে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। [c] যােগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি কর্মচারী নিয়ােগে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট

শর্তাবলি: ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টে বলা হয় যে— [a] ভারতে কোম্পানি আরও ২০ বছর শাসন পরিচালনা করবে। [b] কোম্পানির যাবতীয় আর্থিক দায় ও ঋণ ভারতের রাজস্ব থেকে পরিশােধ করতে হবে। [c] বোের্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি ভারত বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভায় স্থান পাবেন। [d] বাংলার গভর্নর-জেনারেল এখন থেকে ভারতের গভর্নর- জেনারেল বলে বিবেচিত হবেন। এই আইন অনুসারে, লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ভারতের প্রথম গভর্নর-জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হন। [e] কোম্পানির কর্মচারীরা ভারতে জমি ক্রয়বিক্রয়ের অধিকার পান। [f] জাতি-ধর্ম-ভাষানির্বিশেষে সকল ভারতীয় ও ব্রিটিশ নাগরিক কোম্পানির অধীনে চাকরি পাবেন।

গুরুত্ব: এই আইনের দ্বারা- [a] গভর্নর-জেনারেলের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ভারতে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠার পথ প্রস্তুত করা হয়। [b] গভর্নর-জেনারেলের নেতৃত্বে সারাদেশে একই ধরনের আইন প্রবর্তনের পথ প্রস্তুত হয়।

১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট

শর্তাবলি: ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টে বলা হয় যে- [a] ভারতে কোম্পানি শাসন পরিচালনার অধিকার বজায় রাখলেও এতে কোনাে মেয়াদ উল্লেখ করা হয়নি। [b] অবাধ প্রতিযােগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে কোম্পানির আমলাদের নিয়ােগের সিদ্ধান্ত হয়। [c] আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে বড়ােলাটের অধীনে ১২ সদস্যবিশিষ্ট আইন পরিষদ গঠিত হয়। [d] যে কোনাে আইন প্রবর্তনে গভর্নর-জেনারেলের অনুমােদন বাধ্যতামূলক করা হয়। [e] ভারতে আইন বিষয়ক পরামর্শ দানের উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডে ‘আইন কমিশন গঠিত হয়। [f] একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নরের হাতে বাংলার শাসনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। [g] বিলাতে কোম্পানির ডিরেক্টরদের সংখ্যা ২৪ থেকে কমিয়ে ১৮ জন করা হয়।

উপসংহার: সর্বশেষ চার্টার অ্যাক্ট-এর দ্বারা ভারতে কোম্পানির শাসন পরিচালনার কোনাে সময়সীমা ধার্য না হওয়ায় বােঝা যায় যে, কোম্পানির হাত থেকে ভারতের শাসনক্ষমতা শীঘ্রই অধিগ্রহণ করা হবে।