‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’ সম্পর্কে যা জান লেখ।

উনিশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে যে সমস্ত সাময়িক পত্রিকা বাংলা গদ্য ভাষা বিকাশে ভূমিকা রেখেছে তার মধ্যে ১৮৪৩ সালে প্রকাশিত ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’ অন্যতম। ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ব্রাহ্মসমাজের মহাত্ম্য গাথা রচনা ও প্রচার করা- তথাপি পত্রিকাটি কেবল অধ্যাত্ম তত্ত্বকথায় পর্যবসিত না হয়ে বিজ্ঞান- দর্শন-পুরাতত্ত্ব-সাহিত্য-জ্ঞান-বিজ্ঞানের দ্বার উন্মুক্ত করেছিল। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকা সম্পর্কে মন্তব্য করেন-

“”তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকা সমস্ত বাঙলায়, ইউরোপীয় ভাব প্রচারের মিশনারি ছিল। বাঙালির ছেলেদের মধ্যে ইংরেজি ভাব প্রবেশ করানো সর্বপ্রথম অক্ষয়কুমার দ্বারা সাধিত হয়।”

১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের পৃষ্ঠপোষকতায় ও পরিকল্পনায় তত্ত্ববোধিনী সভা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মূলত ব্রাহ্মজ্ঞান প্রচারের উদ্দেশ্যে। এই উদ্দেশ্য সাধনেরই অন্যতঙ্গ মাধ্যম হিসেবে কল্পিত হয়েছিল ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’র প্রকাশ। বিশেষকরে মফস্বল বাংলার ব্রহ্মনিষ্ঠদের সঙ্গে মানসিক সংযোগ রচনার জন্য এরূপ একটি পত্রিকার প্রয়োজন প্রথমে অনুভূত হয়েছিল। কিন্তু মহর্ষির ব্রহ্মোপলব্ধির মধ্যে একটি সহজ যুক্তি ছিল ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িকতা চর্চার “তাকে যা নির্মূল করতে পেরেছিল। এই বৈশিষ্ট্যের জন্যই দেখি উনিশ শতকের দীপ্ততম ব্রাহ্মণ এবং পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও প্রথমে তত্ত্ববোধিনী সভায় পৃষ্ঠপোষক এবং পরে সম্পাদক পদ অলঙ্কৃত করেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্রই অক্ষয়কুমার দত্তের মতো সুযোগ্য সম্পাদককে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সঙ্গে প্রথমাবধি যুক্ত করে দিয়েছিলেন। এই পত্রিকার পৃষ্ঠাতেই মুক্তপ্রাণ বাংলা গদ্য রূপের গঙ্গা যমুনা সঙ্গম রচিত হয়েছিল। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিশুদ্ধ বাংলা গদ্যের জনক। তার রচনার মধ্যেই বাংলা গদ্য শিল্প বিভান্বিত হয়ে উঠেছিল। সেই সঙ্গে গদ্যদেহে বৈজ্ঞানিক চিন্তা ও দার্শনিক ঐতিহাসিক ‘চারের ওজোগুণ সঞ্চারিত করেছিলেন সম্পাদক অক্ষয়কুমার দত্ত। সাফল্যের সিঁড়িতে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে যে আদর্শ স্থাপন করেছে পরবর্তীকালে বিবিধার্থ সংগ্রহ, বঙ্গদর্শন, ভারতীতে আধুনিক জীবনের মূল্যবোধই অনুসৃত হয়েছে।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।