শিক্ষার্থী তার জীবনের বেশিরভাগ জ্ঞান অর্জন করে চোখ দিয়ে। অক্ষমতার দরুন সে অভিজ্ঞতা অর্জনে বঞ্চিত হয়। শিক্ষাক্ষেত্রেও বিভিন্ন প্রকার সমস্যা দেখা যায়। সেগুলি হল—

(১) ইন্দ্রিয় জনিত সমস্যা: স্বাভাবিক শিশুদের মতো এটা লিখতে, পড়তে বা অভিজ্ঞতা অর্জনে সক্ষম নয়। ফলে চোখ বাদ দিয়ে অন্যান্য ইন্দ্রিয় ও কৌশলের মাধ্যমে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করলে সামগ্রিক ধারণা গঠনে অনেক সময় ত্রুটি থেকে যায়।

(২) জ্ঞানার্জনের সমস্যা : চক্ষু হল আমাদের জ্ঞানের প্রবেশদ্বার। কিন্তু এটি অক্ষম হওয়ায় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জনের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। ব্যাহত দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন শিশুদের তাদের চোখের অক্ষমতার দরুন পড়তে ও লিখতে সমস্যা হয়।

(৩) হীনম্মন্যতা জনিত সমস্যা : স্বাভাবিক শিশুদের তুলনায় দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ে পিছিয়ে থাকে। ফলে তাদের মধ্যে এক ধরনের হীনম্মন্যতাবোধের দেখা দেয়, যা শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।

(৪) নিরাপত্তাজনিত সমস্যা : এরা বেশি মাত্রায় আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে। এরা নিজেদেরকে অন্যের করুণার পাত্র বলে মনে করে। এর ফলে নিজেদেরকে অন্যদের বিদ্রুপ ও তাচ্ছিল্যের উপাদান মনে করে। তারা নিরাপত্তার অভাবে ভোগে। তাদের মধ্যে পরিবেশের সঙ্গে সংগতি বিধানের সমস্যা দেখা যায়। ফলে নিরাপত্তা জনিত সমস্যায় ভোগে।

(৫) অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব : পরিবার, সমাজ, অভিভাবক কেউই এদের শিক্ষার ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহ দেখায়। না, এই আগ্রহ ও সচেতনতার অভাবের দরুন শিক্ষাক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হতে হয়।

(৬) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব : ব্যাহত দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন বা দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব আছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক ছাড়া এদের শিক্ষাদান একেবারেই অসম্ভব। যেমন— ব্রেইল পড়া ও লেখা শেখাতে গেলে শিক্ষককে অবশ্যই এই সম্পর্কে জানতে হবে।

(৭) অর্থের অভাব : এদের শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা সহায়ক উপকরণ প্রয়োজন। আর তার জন্য প্রয়োজন হয় অর্থের। যথেষ্ট অর্থের যোগান না থাকায় শিক্ষা ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়।

(৮) সমাজের অবহেলা : দৃষ্টিহীন শিশুকে সমাজের কেউই ভালোভাবে মেনে নেয় না, ফলে শিশুদের মনে বিরূপ মানসিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অনেক সময় শিক্ষা ক্ষেত্রে সমাজের দিক থেকেও নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয় শিক্ষার্থীদের। এইসকল সমস্যার জন্য ব্যাহত দৃষ্টিসম্পন্ন শিশুরা যাতে পরিবার তথা সমাজের বােঝা হয়ে না দাড়ায়, সে বিষয়ে নজর দেওয়া স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান তথা সরকারের উদ্দেশ্য।