১.৪ ব্যবসায়ের ভাষা হিসেবে হিসাববিজ্ঞান।
Accounting as a Language of Business
ভূমিকাঃ ভাষা মূলত কতকগুলাে শব্দ, সাংকেতিক চিহ্ন ও প্রতীকের সমষ্টি যার মাধ্যমে মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করে বা তথ্য আদান-প্রদান করে। এখন ব্যক্তির পরিবর্তে কোনাে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কথা চিন্তা করা যাক। যেমন: সােনালী ব্যাংক লি: একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যাকে একটি কৃত্রিম ব্যক্তি বলা যায়। কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তা হিসেবে যদি সােনালী ব্যাংক তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে যােগাযােগ স্থাপন করতে বা তথ্য সরবরাহ করতে চায় তাহলে সােনালী ব্যাংকের তথ্য সরবরাহ বা আদান-প্রদানের মাধ্যম কী হবে? এক্ষেত্রে অবশ্যই ভাষার মাধ্যমে যােগাযােগ স্থাপন করতে হবে। আর আর্থিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পক্ষের সাথে যােগাযােগ স্থাপন করে।
ব্যবসায়ের ভাষা হিসেবে হিসাববিজ্ঞানঃ যে সমস্ত কারণে হিসাববিজ্ঞানকে ব্যবসায়ের ভাষা হিসেবে মনে করা হয় তা নিম্নে আলােচনা করা হল:
ক. হিসাববিজ্ঞানের নিজস্ব নিয়মনীতিঃ পৃথিবীতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠিত ভাষার যেমন নিজস্ব কাঠামাে, রীতিনীতি ও পদ সমষ্টি রয়েছে তেমনি হিসাববিজ্ঞানেরও নিজস্ব এবং সর্বজন স্বীকৃত গ্রহণযােগ্য রীতিনীতি ও পদসমষ্টি রয়েছে।
খ. আর্থিক ফলাফল নির্ণয়ঃ হিসাববিজ্ঞান ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত আর্থিক লেনদেনসমূহকে স্বীকৃত নীতি ও প্রথা অনুযায়ী বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সুবিন্যস্তভাবে লিপিবদ্ধ করে থাকে। ফলশ্রুতিতে একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে লিপিবদ্ধকৃত উপাত্তসমূহকে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে সহজেই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ফলাফল নির্ণয় করা সম্ভব হয়। এই আর্থিক ফলাফলের প্রতিবেদন অর্থাৎ বিশদ আয় বিবরণী থেকে নিম্নোক্ত তথ্যাদি জানা বা বের করা সম্ভব হয়:
১. মােট লাভ/ক্ষতি এবং নিট লাভ/ক্ষতি।
২. প্রতিষ্ঠানের উপার্জন ক্ষমতা (যেমন বিক্রয়ের উপর মােট লাভ ও নিট লাভের হার, বিনিয়ােগের উপর মুনাফার হার ইত্যাদি।
৩. ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দক্ষতা।
গ. আর্থিক অবস্থা প্রকাশঃ হিসাববিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনসমূহ বিজ্ঞানসম্মত ও সুষ্ঠুভাবে লিপিবদ্ধ করে বলে হিসাবকালের শেষে প্রতিষ্ঠানের সমস্ত সম্পদ ও দায়সমূহ নিয়ে একটি বিবরণী অর্থাৎ আর্থিক অবস্থার বিবরণী তৈরি করা সম্ভব হয় যা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা প্রকাশ করে থাকে। এই আর্থিক অবস্থার বিবরণী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পক্ষসমূহকে যে সমস্ত তথ্য প্রদান করে থাকে তা হল:
- প্রতিষ্ঠানের মােট দেনাপাওনার পরিমাণ;
- প্রতিষ্ঠানের মূলধন, ঋণ অনুপাত যা ঋণ দাতাদেরকে তাদের ঝুঁকির পরিমাণ নির্ণয়ে সহায়তা কর;
- প্রতিষ্ঠানের বিনিয়ােগকৃত অর্থের পরিমাণ;
- প্রতিষ্ঠানের চলতি মূলধনের পরিমাণ;
- প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী সম্পদ ও চলতি সম্পদের পরিমাণ;
- প্রতিষ্ঠানের চলতি দায় ও এর পরিমাণ ইত্যাদি।
ঘ. নগদ প্রবাহ বিবরণীঃ একটি নির্দিষ্ট হিসাবকালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থ প্রাপ্তির উৎসসমূহ এবং বিভিন্ন খাতে উহার ব্যয়/প্রয়ােগ প্রকাশের উদ্দেশ্যে একটি নগদ প্রবাহ বিবরণী তৈরি করা হয়।
ঙ. ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সহায়তা প্রদানঃ আর্থিক প্রতিবেদন সাধারণত হিসাব তথ্যের বাহ্যিক ব্যবহারকারীদের জন্য তৈরি করা হয়ে থাকে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার ও পরিচালনা সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য ছাড়াও বিভিন্ন আর্থিক তথ্যের প্রয়ােজন হয়। ব্যবস্থাপনা হিসাববিজ্ঞান নিম্নোক্ত তথ্যাদি প্রদান করে থাকে:
-
আর্থিক প্রতিবেদনসমূহের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন তুলনামূলক ও অনুপাতধর্মী তথ্য প্রদান করে (যেমন: তারল্য অনুপাত, দক্ষতা অনুপাত, উপার্জন ক্ষমতার হার ঋণ মূলধন অনুপাত ইত্যাদি)।
- উৎপাদন ব্যয়, বিকল্প কর্মপন্থা, বিনিয়ােগ সম্ভাবনা, বাজেট তৈরি, মজুদ ব্যবস্থাপনা, মূল্য নির্ধারণ ইত্যাদি বিষয়েও আর্থিক তথ্যাদি প্রদান করে।
শেষকথাঃ উপরােক্ত আলােচনা থেকে এটা স্পষ্টভাবেই বলা যায় যে, হিসাববিজ্ঞান ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ভাষা। এ বিষয়ে হিসাববিজ্ঞানকে সহায়তা করে থাকে এর বিভিন্ন শাখাসমূহ যেমন আর্থিক হিসাববিজ্ঞান, উৎপাদন ব্যয় হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা হিসাববিজ্ঞান ইত্যাদি।
Leave a comment