প্রশ্নঃ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ কাকে বলে?
অথবা, ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদ বলতে কি বুঝ?
অথবা, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ কি?
অথবা, Individualism বলতে কি বুঝায়?
ভূমিকাঃ নীতিবিদ্যা মানব আচরণের ভালত্ব-মন্দত্ব বা ন্যায়ত্ব-অন্যায়ত্ব নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু এই আচরণ সমাজবিহীন মানুষের আচরণ নয়। নৈতিকতার ক্ষেত্রে একাধিক ব্যক্তির প্রয়োজন পড়ে। সমাজবিহীন ব্যক্তির ক্ষেত্রে নৈতিক দায়িত্ব বা বাধ্যবাধকতার প্রশ্ন অর্থহীন হয়ে পড়ে কেননা নৈতিকতা সম্পৰ্কীয় সমস্যা সমাজবদ্ধ ব্যক্তির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যক্তির সঙ্গে সমাজের সম্পর্ক রয়েছে এবং এগুলো সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে যেগুলো নীতিবিদ্যার আলোচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ৷
ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদ (Individualism): ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক নিয়ে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে যে সমস্ত মতবাদ রয়েছে তার মধ্যে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ বা Individualism অন্যতম আলোচনার দাবি রাখে। এ মতবাদ অনুযায়ী প্রত্যেক মানুষই তার নিজ বৈশিষ্ট্যে পৃথক ও স্বতন্ত্র্য। এই মতবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন হবস্ ও রুশো। তারা মনে করেন যে, মানুষ প্রধানত সমাজনির্ভর নয় যে আত্মসর্বস্ব ও স্বাধীন। তার মধ্যে সমাজবহির্ভূত স্বাধীন ও আত্মনির্ভর ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবোধ রয়েছে। আর সমাজ হলো ব্যক্তি মানুষের এক সমষ্টি মাত্র। মানব সমাজ জীবনের অবিচ্ছেদ্য ও অপরিহার্য অঙ্গ নয়, বরং স্বার্থ রক্ষার নিমিত্ত একটি পরিকল্পিত কৃত্রিম সংস্থা। হবস মনে করেণ যে, মানুষ সভ্যতার আদিম যুগে নিজেদের মধ্যে প্রায়ই কলহ বিবাদে লিপ্ত থাকতো এর কারণ তাদের স্বাভাবিক প্রকৃতিগত আত্মস্বার্থ নিজ স্বার্থ রক্ষার জন্য এমন মানুষ এমন কাজ নেই যা করতে পারত না।
রুশো মনে করেণ মানুষ প্রাকৃতিক অবস্থায় সাধারণ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করত। কিন্তু একপর্যায়ে সে দেখতে পেল যে, ব্যক্তির একার পক্ষে অপরের সঙ্গে সংযোগহীনভাবে প্রতিকূল ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিরাপদ জীবনযাপন করা এবং নিজের অধিকারসমূহ প্রয়োগ ও রক্ষ করা সম্ভব নয় এই বোধ হতে মানুষ চুক্তি করে রাষ্ট্রের নিয়ম-কানুন, বিধিনিষেধ তৈরি করে। সুতরাং দেখা যায় সমাজ মানুষের জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ নয় বরং তা হলো ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষার অভিনব পন্থা। ব্যক্তি স্বীয় স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সমাজ সৃষ্টি করেছে। অর্থাৎ মানুষ অপরের মঙ্গলের জন্য নয় বরং নিজ স্বার্থ রক্ষার জন্য সমাজবদ্ধ জীবন যাপন করতে সচেষ্ট হয়।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ এমন একটি মতবাদ যেখানে সমাজের থেকে ব্যক্তিকে প্রাধান্য দেয়া হয় এবং ব্যক্তি তার নিজের স্বার্থের চুক্তির মাধ্যমে সমাজ গঠন করেছে বলে মত প্রকাশ করা হয়। সুতরাং ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদী মতবাদের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
Leave a comment