প্রশ্নঃ ব্যক্তির ক্ষেত্রে নৈতিক প্রগতির শর্তাবলি আলোচনা কর।
অথবা, ব্যক্তির ক্ষেত্রে নৈতিক প্রগতির আবশ্যিক শর্তাবলি সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, ব্যক্তির ক্ষেত্রে নৈতিক প্রগতির অপরিহার্য শর্তাবলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ ব্যক্তির আচরণকে বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করে নৈতিক প্রগতি। নৈতিক প্রগতি মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে পূর্ণতা দানে সহায়তা করে। নৈতিক প্রগতি মানুষের লক্ষ্য অর্জনের পথে পথ প্রদর্শক হিসাবে কাজ করে। তাই প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য নৈতিক প্রগতি অর্জন অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ।
ব্যক্তির ক্ষেত্রে নৈতিক প্রগতির শর্তাবলিঃ ব্যক্তির ক্ষেত্রে নৈতিক প্রগতির কিছু শর্ত রয়েছে। সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলোঃ
১. বুদ্ধি বৃত্তির অনুশীলনঃ নৈতিকতার ক্ষেত্রে অত্যন্ত অপরিহার্য বিষয় হলো বুদ্ধি। নৈতিক আদর্শ ও প্রগতি সম্পর্কে সুষ্ঠু ধারণা অর্জন করতে হলে বুদ্ধি বৃত্তির অনুশীলন একান্ত অপরিহার্য। এ সম্পর্কে সক্রেটিস বলেছেন জ্ঞানই সদগুণ। অর্থাৎ বুদ্ধি বৃত্তির চর্চা নেতিক প্রগতি অর্জনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. নৈতিক আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাঃ নৈতিক প্রগতি অর্জনের নৈতিক আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নৈতিক আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা মানুষকে অন্যায় ও অর্থনৈতিক কাজ থেকে বিরত রাখে। ফলে নৈতিক প্রগতি অর্জনের পথ সুগম হয়।
৩. সৎসঙ্গের প্রভাবঃ বাংলায় একটি প্রবাদ বাক্য আছে যে, ‘সৎসঙ্গে সর্গবাস আর অসৎ সঙ্গে সৰ্বনাশ।’ যদি কোনো ব্যক্তি সৎ মানুষের সঙ্গে চলাফেরা করে তবে তার মধ্যেও সৎ গুণাবলি বিকশিত হবে। আর ব্যক্তির সৎ গুণাবলি নৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করে।
৪. সহব্যক্তির জীবনী পাঠঃ মহৎ ব্যক্তিরা যা করেন সাধারণ মানুষ তা অনুকরণের চেষ্টা করে। মহৎ ব্যক্তিদের জীবনাচরণ সাধারণ মানুষের আদর্শ হয়। তাই মহৎ ব্যক্তি যেমন- হযরত মুহাম্মদ (সা:) হযরত আবু বকর (রা.) হযরত ওমর ফারুক (রা.) হাজি মুহম্মদ মহসিন, হযরত আলী (রা.) হযরত ঈসা (আঃ) প্রমুখ ব্যক্তিদের জীবনী পাঠ করলে তা নৈতিক প্রগতির সহায়ক হবে।
৫. আত্মসংযমঃ নৈতিক প্রগতির ক্ষেত্রে আত্মসংযম একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। নৈতিক অগ্রগতির জন্য কামনা, বাসনা, সংরক্ষণ করা, নিয়ন্ত্রণ সাধন ও অনুশীলন করা একান্ত প্রয়োজন। এভাবে আত্মসংযম পালন করা নৈতিক প্ৰগতি অর্জনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৬. অনুশোচনা এবং প্রায়শ্চিত্তঃ অন্যায় কাজের জন্য মানুষের মধ্যে অনুশোচনা এবং পাপবোধ জাগিয়ে তোলা এবং তার জন্য প্রায়শ্চিত্তের ব্যবস্থা অনুশীলন করলে তা নৈতিক প্রগতির পথে বিশেষ সহায়ক হবে।
৭. বিনয় ও নম্রতাঃ নৈতিক অগ্রগতি অর্জনের পথে বিনয় ও নম্রতা ও অপরিহার্য উপাদান। প্রত্যেকটি মানুষেরই এই বিষয়টি অনুশীলন করা প্রয়োজন, বিনয় ও নম্রতা মানুষকে সংযমী, ধীর, শান্ত ও বিবেকবান করে তোলে।
উপসংহারঃ উপরের আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যক্তি যে সমাজে বাস করে সেই সমাজের পারিপার্শিক পরিবেশ ব্যক্তির প্রগতি অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যক্তি যে সমাজে বাস করে সেই সমাজে যদি সুষ্ঠু পরিবেশ বিদ্যমান থাকে তবে ব্যক্তির নৈতিক প্রগতি দ্রুত বিকাশ লাভ করবে। আর যদি সামাজিক পরিবেশ কলুষিত হয় তবে ব্যক্তি উচ্ছন্নে যাবে।
Leave a comment