মার্কসীয় দর্শনে ঐতিহাসিক বিকাশের বিধি-ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সম্পত্তির অধিকার সম্পর্কিত বিষয়টির পর্যালোচনা করা হয়ে থাকে। মার্কসবাদ অনুসারে সমাজে সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানার উদ্ভব হয়েছে। বিশেষ একটি ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। আবার সম্পত্তির এই ব্যক্তিগত মালিকানার অবসানও ঘটবে নির্দিষ্ট একটি ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। মানবসমাজের ক্রমবিকাশের ইতিহাস কয়েকটি অধ্যায়ে বিভক্ত। সমাজ-বিকাশের প্রতিটি পর্যায়ে সম্পত্তির মালিকানা বিভিন্ন অবস্থার ভিতর দিয়ে বিকশিত হয়েছে। এবং বিকাশের এই ধারায় সম্পত্তি ভিন্ন ভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করেছে। মার্কস-এঙ্গেলসের অভিমত অনুসারে বিভিন্ন সমাজে সম্পত্তির মালিকানার স্বরূপ নির্ধারিত হয় উৎপাদন সম্পর্ক বা আর্থনীতিক সম্পর্কের দ্বারা।
Principles of Communism শীর্ষক রচনায় এঙ্গেলস (Frederick Engels) ব্যক্তিগত সম্পত্তির আবির্ভাব ও অবসান সম্পর্কে মার্কসীয় মতবাদ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর অভিমত অনুসারে ব্যক্তিগত সম্পত্তির উন্মেষ ঘটেছে উৎপাদন শক্তির বিকাশের একটি বিশেষ পর্যায়ে। অনুরূপভাবে ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলুপ্তি ঘটবে উৎপাদন শক্তির বিকাশের আর একটি বিশেষ পর্যায়ে। চিরকাল সমাজে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল না। উৎপাদন-শক্তির বিকাশের ফলে সমাজব্যবস্থা ও মালিকানা সম্পর্কের পরিবর্তন ঘটে। এবং তখনই ব্যক্তিগত সম্পত্তির আবির্ভাব অনিবার্য হয়ে পড়ে। সমাজের উৎপাদন শক্তির বিকাশের উপর সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানার প্রকৃতি বিশেষভাবে নির্ভরশীল।
মার্কসবাদের মূল কথা হল শ্রেণীহীন-শোষণহীন এক সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা। মার্কসীয় দর্শন অনুসারে সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানাই হল শ্রেণী-শোষণ ও শ্রেণী-বৈষম্যের মূলীভূত কারণ। সম্পত্তির এই ব্যক্তিগত মালিকানাকে কেন্দ্র করেই সমাজে সৃষ্টি হয়েছে পরস্পরবিরোধী শ্রেণী, শ্রেণী-শোষণের হাতিয়ারস্বরূপ রাষ্ট্রের। আদিম সাম্যবাদী সমাজে সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানা ছিল অনুপস্থিত। তাই তখন সমাজে শোষক ও শোষিত এই দু’টি শ্রেণীর সৃষ্টি হয়নি এবং মানুষের দ্বারা মানুষের শোষণও শুরু হয়নি। সর্বপ্রথম ব্যক্তিগত সম্পত্তির সৃষ্টি হয়েছে দাস-সমাজে। প্রকৃত প্রস্তাবে দাস-মালিকই হল প্রথম ও প্রধান সম্পত্তিবান শ্রেণী। সমাজ বিকাশের ধারায় দাস-সমাজ থেকেই ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্রমাগত বৃদ্ধির এক অশুভ প্রতিযোগিতার সূত্রপাত ঘটে। তখন থেকেই সমাজ সম্পত্তিবান ও সম্পত্তিহীন এই দুই পরস্পর বিরোধী শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই রকম শ্রেণীবিভক্ত সমাজে উৎপাদনের উপাদান এবং উৎপন্ন সামগ্রীর আর যোথ মালিকানা থাকে না। সম্পত্তির উপর ব্যক্তিগত মালিকানার অস্তিত্ব সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থায় শোষণমূলক ভূমিকা গ্রহণ করে। দাস-সমাজব্যবস্থা থেকে শুরু করে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা পর্যন্ত সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানা অব্যাহত থাকে এবং এই কারণে শ্রেণী-শোষণ ও শ্রেণী-শাসন অব্যাহত থাকে।
‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’-তে মার্কস-এঙ্গেলস বলেছেন, “অতীতে ঐতিহাসিক অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সকল সম্পত্তি সম্পর্কের নিরন্তর ঐতিহাসিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে’ (“All property relations in the past have continually been subject to historical change consequent upon the change in historical conditions.”)। উদাহরণ হিসাবে মার্কস-এঙ্গেলস বলেছেন যে, ফরাসী বিপ্লব বুর্জোয়া সম্পত্তির স্বার্থে সামত্তসম্পত্তির উৎসাদন সম্পন্ন করেছে। সমাজবিকাশের ধারায় সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানা সূত্রে সম্ভৃত বিশেষ ধরনের মানবীয় সম্পর্কের মধ্যে বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়। উদাহরণ হিসাবে দাস-মালিক ও ক্রীতদাস, সামন্ত-প্রভু ও ভূমিদাস, গিল্ডকর্তা ও কারিগর, পুঁজিপতি ও মজুরি দাস প্রভৃতি বিভিন্ন সম্পর্কের কথা বলা যায়। মানবীয় সম্পর্কের উপর ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও শ্রমবিভাগের প্রভাব অনস্বীকার্য। এই প্রভাবের ফলে গোষ্ঠীর মধ্যেই জনগণ বিভক্ত হয়ে পড়ে। কিছু কিছু মানুষের পরিশ্রম অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপায় হয়ে দাঁড়ায়। অন্যেরা নিজের স্বার্থে একে পদানত করে এবং নিজেদের খুশীমত ফল আদায় করে। শাসন-শোষণের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এই অসামঞ্জস্য বা বৈষম্যের মধ্যেই বর্তমান থাকে।
মরিস কর্নফোর্থ (Maurice Cornforth) তাঁর Dialectical Materialism শীর্ষক গ্রন্থে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও তার প্রকৃতি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। তাঁর অভিমত অনুসারে সম্পত্তি বলতে সাধারণত সামাজিকভাবে নিয়ন্ত্রিত ভোগ-দখলের এক রীতিকে বোঝায়। ব্যক্তিগত সম্পত্তি সম্পর্কে সব থেকে বড় কথা হল এই যে, ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসাবে উৎপাদনের উপাদান ও ভোগ্য দ্রব্যসামগ্রী উভয়েরই ভোগদখলের বিষয়টি শুধু মানুষ ও দ্রব্যসামগ্রীর ভিতরকার সম্পর্ক নয়; বহুলাংশে এ হল মানুষে মানুষে সম্পর্ক। এই সম্পর্ক হল সামাজিক উৎপাদন সম্পর্ক। ব্যক্তিগত সম্পত্তি আয়ত্ত করার সময় মানুষ গোষ্ঠী-গতভাবে গোষ্ঠীগত শ্রমের ফসল ভোগদখল করে না। সাধারণত গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত কোন বা কিছু ব্যক্তি বা দল অপরাপর ব্যক্তি বা দলের দ্বারা উৎপাদিত উৎপাদন উপাদান এবং ব্যবহার ও বিনিময়ের দ্রব্যসামগ্রী করায়ত্ত ও ভোগদখল করে। অর্থাৎ কতিপয় ব্যক্তি অন্যান্যদের উৎপন্নের উপর মালিকানা কায়েম করে। এই হল ব্যক্তিগত সম্পত্তির সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।
সুতরাং সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানা হল এক বিশেষ সামাজিক সম্পর্ক। প্রাত্যহিক জীবনে মালিকানার সম্পর্ক সম্পত্তির অধিকার হিসাবে প্রতিপন্ন হয়। মালিকানা বলতে যে সামাজিক সম্পর্ককে বোঝায় তা বৈষয়িক সম্পদের উৎপাদন, বণ্টন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে। শ্রেণীবিভক্ত ও শোষণমূলক সকল সমাজেই প্রাধান্যকারী শ্রেণীর অন্ধ স্বতঃস্ফূর্ত নিয়মের কর্তৃত্ব কায়েম হয়। কেবল সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। শ্রেণীবিভক্ত ও শোষণভিত্তিক সমাজে উৎপাদন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে যে অন্ধ স্বতঃস্ফূর্ত নিয়মের কর্তৃত্ব পরিলক্ষিত হয় সমাজতান্ত্রিক সমাজে তা থাকে না। এই ধরনের সমাজব্যবস্থায় শ্রমের ফল বা উৎপাদনের উৎপন্ন সমাজের হেপাজতে থাকে। অর্থাৎ সম্পদ সামগ্রীর উপর সামাজিক মালিকানা কায়েম হয়। উৎপন্ন সম্পদ-সামগ্রী সকলের মধ্যে বণ্টিত হয়। সামাজিক সম্পদের মাত্রার পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমের পারিতোষিকের পরিমাণ নির্ধারিত হয়। সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের জীবনযাত্রার মান নির্ধারিত হয়। সমাজের বৈষয়িক সমৃদ্ধির পরিমাপের পরিপ্রেক্ষিতে।
সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানার সম্পর্ক ঐতিহাসিক পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তিত হয়। সমাজবিকাশের প্রতিটি স্তরে বা সকল সমাজে সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানা অভিন্ন প্রকৃতির হয় না। দাস মালিকানার পতন ঘটেছে সামন্ততান্ত্রিক মালিকানার দ্বারা, আবার সামস্ততান্ত্রিক মালিকানার অবসান ঘটেছে বুর্জোয়া মালিকানার দ্বারা। কার্ল মার্কস সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে সম্পত্তির মালিকানা প্রতিটি ঐতিহাসিক যুগে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে এবং বিকশিত হয়েছে বিভিন্ন সামাজিক সম্পর্কের ভিতর দিয়ে। অতএব ধনতান্ত্রিক উৎপাদনের সকল সামাজিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করলে বুর্জোয়া সম্পত্তির সংজ্ঞা নির্ধারণ করা সহজেই সম্ভব হবে।
মার্কসীয় দর্শনে সাধারণভাবে মালিকানার উচ্ছেদের কথা বলা হয়নি, বলা হয়েছে সম্পত্তির বুর্জোয়া মালিকানার উচ্ছেদের কথা। ম্যানিফেস্টোতে মার্কস-এঙ্গেলস বলেছেন : ‘সাধারণভাবে সম্পত্তির উচ্ছেদ নয়, বুর্জোয়া সম্পত্তির উচ্ছেদই হল কমিউনিজমের বৈশিষ্ট্যসূচক লক্ষণ” (“The distinguishing features of Communism is not the abolition of property generally, but the abolition of burgeois property.”)। আধুনিক বুর্জোয়া ব্যক্তিগত সম্পত্তি হল শ্রেণীবিরোধের উপর, অল্প মানুষের দ্বারা বহু মানুষের শোষণের উপর গড়ে উঠা উৎপাদন ও উৎপন্ন সামগ্রীর ভোগদখলের ব্যবস্থার চূড়ান্ত ও পরিপূর্ণ প্রকাশ। এই অর্থে কমিউনিস্টদের মতবাদকে সংক্ষেপে একটি বাক্যে প্রকাশ করা যায়—ব্যক্তিগত সম্পত্তির অবসান (“In this sense, the theory of the Communists may be summed up in the single sentence; Abolition of private property.”)। অপরের শ্রমের ফল আত্মসাৎ না করে, নিজের পরিশ্রমের ফল হিসাবে অর্জিত ব্যক্তির ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারকে উচ্ছেদ করা কমিউনিস্টদের উদ্দেশ্য নয়। কমিউনিস্টরা ছোট-ছোট কৃষক ও কারিগরদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির অবসান চায় না। মার্কসবাদ পুঁজির বৃদ্ধি ও ব্যক্তিগত ভোগদখলের উদ্দেশ্যে মজুরি-শ্রম শোষণের ব্যবস্থাকে চিরতরে অবলুপ্ত করার ব্যাপারেই আগ্রহী।
ম্যানিফেস্টোতে মার্কস-এঙ্গেলস বলেছেন: ‘শ্রমোৎপন্নের উপর ব্যক্তিগত ভোগদখলীকে, যা শুধু মানুষের জীবনধারণ ও পুনরুৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয় এবং অপরের পরিশ্রমের উপর কর্তৃত্ব করার মত কোন উদ্বৃত্ত যার সঙ্গে থাকে না— আমরা কখনই তার উচ্ছেদ চাই না। আমরা কেবল ভোগ-দখলের সেই শোচনীয় প্রকৃতিটার অবসান চাই, শ্রমিক যেখানে বাঁচে শুধু পুঁজি বৃদ্ধির স্বার্থে, এবং তাকে বাঁচাতে দেওয়া হয় কেবল ততটাই, যতটা শাসকশ্রেণীর স্বার্থসিদ্ধির জন্য প্রয়োজন’ (“All that we want to do away with is the miserable character of this appropriation, under which the labourer lives merely to increase capital, and is allowed to live only insofar as the interest of the ruling class requires it.”)। ম্যানিফেস্টোতে তাঁরা আরও বলেছেন: “কমিউনিজম কোন মানুষকেই সমাজের উৎপন্ন জিনিসের উপর ভোগ-দখলের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে না; যা করে তা হল ভোগ দখলের মাধ্যমে অপরের পরিশ্রমকে করায়ত্ত করার ক্ষমতাটাকেই শুধু সে হরণ করে’ (“Communism deprives no man of the power to appropriate the products of society; all that it does is to deprive him of the power to subjugate the labour of others by means of such appropriation.”)।
সম্পত্তির উপর বুর্জোয়াদের ব্যক্তিগত মালিকার অবসান আর একটি কারণে অপরিহার্য হয়ে পড়ে। পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা উৎপাদন শক্তির পরিপূর্ণ বিকাশের পথে অবশেষে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। একদিকে ক্রমান্বয়ে পুঁজির কেন্দ্রীভবন ঘটতে থাকে, অপরদিকে উত্তরোত্তর শ্রমের সামাজিকীকরণ সম্পাদিত হয়। তারফলে অনপনেয় এক সংকটের সৃষ্টি হয়। বিকশিত উৎপাদনশক্তির সঙ্গে বিদ্যমান উৎপাদন সম্পর্কের সংঘাত সংকটকে প্রকট করে তোলে। ব্যক্তিগত সম্পত্তির উচ্ছেদ ব্যতিরেকে এই সংকটের সমাধান অসম্ভব প্রতিপন্ন হয়। তখন ব্যক্তিগত সম্পত্তির অবসান অপরিমেয় হয়ে পড়ে। ব্যক্তিগত সম্পত্তির উচ্ছেদ সাধন ব্যতিরেকে উন্নত উৎপাদন শক্তির সঙ্গে সমকালীন উৎপাদন-সম্পর্কের সঙ্গতি সাধন সম্ভব হয় না। আবার এই সঙ্গতি সাধন ব্যতিরেকে বৈষয়িক উৎপাদনের অগ্রগতিও আটকে যায়। এই অবস্থায় ব্যক্তিগত সম্পত্তির অবসান অনিবার্য হয়ে পড়ে।
সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সম্পত্তির উপর ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে না; উৎপাদনের উপকরণের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে না। তারফলে উন্নত উৎপাদন শক্তির পরিপূর্ণ বিকাশের পথ সহজ ও সাবলীল হয়। এই অবস্থায় কেবল মুনাফা আত্মসাৎ করা উৎপাদনের উদ্দেশ্য থাকে না। সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হল সামগ্রিকভাবে সমাজে কল্যাণ সাধন। মার্কসীয় দর্শনে ব্যক্তিগত সম্পত্তির অবসান ঘটিয়ে আর্থনীতিক ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন সাধনের কথা বলা হয়। তা কার্যকর হলে সামগ্রিকভাবে সমাজব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সম্পত্তির উপর ব্যক্তিগত মালিকানার অবসান ঘটে ও সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। সম্পত্তির উপর সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় মানুষের উপর মানুষের শোষণের সমাপ্তি ঘটে এবং পরজীবিতা ও পরাশ্রয়িতার কোন সুযোগ আর থাকে না। তার মূল কারণ হল তখন মালিক শ্রেণী বলে কিছু থাকে না এবং উৎপাদনের উপকরণ থেকে বঞ্চিত কোন শ্রেণীও থাকে না। উৎপাদনের উপকরণসমূহের উপর মালিকানা সূত্রে কারোর হাতে বিশেষ কোন সুযোগ-সুবিধা থাকে না। অনুরূপভাবে অপরের তুলনায় অধিক অসুবিধাজনক অবস্থায়ও কেউ থাকে না।
ম্যানিফেস্টোতে মার্কস-এঙ্গেলস বলেছেন: ‘কমিউনিস্ট বিপ্লব হল সাবেকী সম্পত্তি সম্পর্কের সঙ্গে একেবারে আমূল বিচ্ছেদ; এই কারণে এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে এই বিপ্লবের বিকাশের সঙ্গে সাবেকী ধারণাগুলির সঙ্গেও সর্বাধিক আমূল বিচ্ছেদ বর্তমান’ (“The Communist revolution is the most radical rupture with traditional property relations; no wonder that its development involves the most radical rupture with traditional ideas.”)। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে গুণগত পরিবর্তন সাধিত হয়। এই পরিবর্তন আগেকার যাবতীয় পরিবর্তনের থেকে গভীর ও ব্যাপকতর। এই বিপ্লবের মাধ্যমে উৎপাদনের উপকরণসমূহের উপর থেকে ব্যক্তিগত মালিকানাকে উচ্ছেদ করা হয়। এযাবৎ যারা উচ্ছেদকারী হিসাবে পরিচিত ছিল তাদেরই উচ্ছেদ সাধিত হয়। তার জায়গায় সম্পত্তির উপর সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এবং তারফলে উৎপাদন শক্তির বিকাশের পথে যে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ছিল, সেগুলি চিরতরে অপসারিত হয়। প্রকৃত প্রস্তাবে প্রচলিত সম্পত্তি সম্পর্কের সঙ্গে একেবারে এক আমূল বিচ্ছেদ ঘটে। হার্বাট আপথেকার (Herbert Apthekar) তাঁর Democracy, Freedom and Revolution শীর্ষক গ্রন্থে সমাজতান্ত্রিক ও অ-সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মধ্যে পার্থক্যমূলক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান বিষয়টির উপর বিশেষভাবে আলোকপাত করেছেন।
Leave a comment