ইংরেজিতে যাকে Essay বলা হয় বাংলায় তাকে প্রবন্ধ সাহিত্য রূপে আখ্যাত করা হয়। ইংরেজিতে এই Essay-কে দুপ্রকারে বিভক্ত করা হয় Formal ও Informal অনুরূপভাবে বাংলাতেও দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়—১। বস্তুগত প্রবন্ধ ও ২। ব্যক্তিগত প্রবন্ধ। বস্তুগত প্রবন্ধকে আবার—বিষয় গৌরবী, তন্ময় নামে আখ্যাত করা হয় এবং ব্যক্তিগত প্রবন্ধকে—আত্মগৌরবী, মন্ময় মূলক নামেও আখ্যাত করা হয়। বস্তুগত প্রবন্ধে বিষয়বস্তু প্রাধান্য পায় এবং ব্যক্তিগত প্রবন্ধে লেখকের ব্যক্তি চিন্তা, ব্যক্তি হৃদয়ই মুখ্য হয়ে ওঠে। এখন উভয় শ্রেণির প্রবন্ধের পার্থক্যগুলি সূত্রকারে সাজানো যেতে পারে—
(১) বস্তুগত প্রবন্ধ আমাদের বুদ্ধি চিন্তা বা জ্ঞানের পিপাসা মিটায়। ব্যক্তিগত প্রবন্ধ জ্ঞানের বিষয়কেও লঘু কল্পনায় রঞ্জিত করে হাস্যোচ্ছ্বলে পরিবেশন করে।
(২) বস্তুগত প্রবন্ধ গুরুগম্ভীর প্রশ্ন বা জীবন সমস্যা অবলম্বনে সূক্ষ্ম আলোচনার দ্বারা মীমাংসার পথে এগিয়ে যায়।
কিন্তু ব্যক্তিগত প্রবন্ধে বিষয়বস্তুর গাম্ভীর্যকে আত্মগত ভাবরসে স্নিগ্ধ করে পাঠকের চারদিকে একটা সুন্দর শান্ত পরিমণ্ডল গড়ে তোলে।
(৩) বস্তুগত প্রবন্ধে লেখকের বিচার বুদ্ধি ও চিন্তাশীলতা প্রধান। আর ব্যক্তিগত প্রবন্ধে লেখক নিজেকে অনুভূতির স্নিগ্ধ মধুর স্পর্শের দ্বারা সমস্তকে ভরিয়ে দেয়।
(৪) বস্তুগত প্রবন্ধে লেখক পাঠকের সঙ্গে অভিন্ন হয়ে একান্ত আপনজনের মতো নিজের কথাটি বলেন না। কিন্তু ব্যক্তিগত প্রবন্ধে লেখক স্বাধীনভাবে আপন চিন্তাশক্তি দিয়ে মনের কথা ব্যক্ত করেন তা পাঠক চিত্তে গিয়ে কৌতুকের উদ্রেক করে।
(৫) বস্তুগত প্রবন্ধে লেখক যুক্তির সাহায্যে নিজ মতকে প্রতিষ্ঠা করে ব্যক্তিগত প্রবন্ধে লেখক পাঠকের কাছে আত্মনিবেদনের দ্বারা আপন অভিমত ব্যক্ত করেন।
(৬) বস্তুগত প্রবন্ধের বিষয় গৌরবের জন্য আমরা তাকে শ্রদ্ধা করি। আর ব্যক্তিগত প্রবন্ধে রস গৌরবের দ্বারা আমরা তাকে ভালোবাসি।
(৭) বস্তুগত প্রবন্ধের দ্বারা অজ্ঞানান্ধকার দূর হয়ে যায়। ব্যক্তিগত প্রবন্ধের মৃদু আলোকরেখায় আমরা বিশেষ লোককে চিনতে পারি, এবং নিজেকে চিনি।
(৮) সর্বোপরি বস্তুগত প্রবন্ধের বিষয়বস্তু গুরুগম্ভীর কঠিন, আর ব্যক্তিগত প্রবন্ধের বিষয়বস্তু আকাশের তারকা থেকে মাটির প্রদীপ পর্যন্ত সর্বত্রই বিরাজমান। তার বাইরে কোনো বিষয় থাকতেই পারে না।
সর্বশেষে, বস্তুগত প্রবন্ধের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বিবিধ প্রবন্ধ’-কে ধরা যেতে পারে। আর ব্যক্তিগত প্রবন্ধ রূপে তাঁর কমলাকান্তের দপ্তরকেই চিহ্নিত করা যেতে পারে। উভয় প্রবন্ধকেই গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে উক্ত পার্থক্যগুলি সহজেই ফুটে উঠবে।
Leave a comment