হীনযানবাদ

  • গোঁড়া বৌদ্ধগণ হীনযান নামে পরিচিত।

  • হীনযানবাদে বুদ্ধদেব একজন মহান ধর্মপ্রচারক। তাই তারা বুদ্ধদেবের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলি দর্শন করেন, তাঁর পাদুকাকে সিংহাসনে স্থাপন করে পূজা করেন।

  • হীনযানবাদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় নিজের বােধি বা নির্বাণ লাভ।

  • হীনযান মতে, কঠোর তপস্যা অর্থাৎ ধ্যান ও আত্ম-সংযমের মধ্যে দিয়ে নির্বাণ লাভ করা যায়।

  • হীনযান বৌদ্ধ মতের দুটি প্রধান ধারা হল— (i) বৈভাষিক ও (ii) সৌত্রান্তিক।

  • হীনযানবাদীরা পালি ভাষায় বৌদ্ধধর্মের প্রচার চালাত।

  • হীনযানবাদীগণ অভিধর্ম পিটকের অন্তর্ভুক্ত সূত্রপুলিকে বুদ্ধদেবের মূল উপদেশ বলে মানত।

  • সম্রাট অশােকের আমলে হীনযানবাদ মূলত সিংহল (শ্রীলঙ্কা) ও ব্রয়দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

মহাযানবাদ

  • উদার মতাবলম্বী বৌদ্ধগণ মহাযান নামে পরিচিত।

  • মহাযানবাদে বুদ্ধদেব দেবতার আসনে অধিষ্ঠিত। তাই মহাযানবাদীরা বুদ্ধদেবের মূর্তিপূজায় বিশ্বাসী।

  • মহাযানবাদের মূল লক্ষ্য ছিল নিজের নির্বাণ অপেক্ষা সর্বসাধারণের মুক্তি বা কল্যাণসাধন।

  • মহাযান মতে, বােধিসত্ত্ব পর্যায়ের দশটি গুণ [দান, শীল, ক্ষান্তি (সহিষুতাবা সহ্যগুণ), ধ্যান, বীর্য, উপায়, প্রজ্ঞা, প্রণিধান, বল, জ্ঞান] অনুশীলনের মাধ্যমে নির্বাণলাভ সম্ভব।

  • মহাযান মতবাদের দুটি প্রধান ধারা হল (i) মাধ্যমিক ও (ii) যােগাচার।

  • মহাযানবাদীরা সংস্কৃত ভাষায় বৌদ্ধধর্মের প্রচার চালাত।

  • মহাযানবাদীগণ সুত্ত পিটকের অন্তর্ভুক্ত সূত্রপুলিক বুদ্ধদেবের মূল উপদেশ বলে মনে করত।

  • কুষাণ সম্রাট কনিষ্কের আমলে মহাযানবাদ মূলত চিন, জাপান, কোরিয়া, তিব্বত, মঙ্গোলিয়া প্রভৃতি স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।

বেশ কয়েকটি কারণে বৌদ্ধধর্ম ধীরে ধীরে ভারতে জনপ্রিয়তা হারায়। নিজ জন্মভূমি থেকে বৌদ্ধধর্মের এই ক্রম অপসারণের অন্যতম কয়েকটি কারণ হল一

[1] নৈতিকতার অভাব: প্রথম দিকে বৌদ্ধধর্মের মূলমন্ত্র ছিল নৈতিকতা। বৌদ্ধভিক্ষুরা সরল, সাদাসিধে এবং ত্যাগীর জীবন যাপন করতেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বৌদ্ধধর্মে বিভিন্ন আভিচারিক ক্রিয়ানুষ্ঠান চালু হলে এই ধর্মের বিশুদ্ধতা হ্রাস পায়। এভাবে এই ধর্ম মন্ত্রযান, বজ্রযান, সহজযানে রূপান্তরিত হয়ে যায়।

[2] সংঘ নায়কদের দ্বন্দ্ব: বুদ্ধদেব তার কোনাে উত্তরাধিকারী মনােনীত করেননি। তাই পরবর্তী সংঘনেতাদের এক-এক জন এক এক রকমভাবে ধর্মের ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেন। সংঘনায়কদের এই মতভেদের কারণে নানা দল উপদলের সৃষ্টি হয়, সংঘ দুর্বল হয়ে পড়ে।

[3] নৈতিকতার অবক্ষয়: গৌতম বুদ্ধের প্রয়াণের পরবর্তীকালে ক্রমে মঠের পরিবেশ বিনষ্ট হয়। ভিক্ষু-ভিক্ষুণীদের জীবনে অনাচার দেখা দেয়, উচ্ছজ্বল পরিবেশ তৈরি হয় যা বৌদ্ধধর্মের পতনকে ত্বরান্বিত করে।

[4] তুর্কি আক্রমণ: তুর্কি আক্রমণে বহু বৌদ্ধবিহার ধ্বংস হয় এবং বহু বৌদ্ধভিক্ষু মারা যান। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দ্বাদশ শতকের শেষার্ধে মহম্মদ বখতিয়ার খলজি কর্তৃক বিহারের ওদন্তপুরি মহাবিহারটির ধবংসসাধন।